Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো বিবেচনায় রয়েছে: অর্থমন্ত্রী

২৭২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:২০ পিএম | আপডেট : ৮:২১ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। যদি রাজস্ব খাতে কোন কিছু করার থাকে অবশ্যই ছাড় দেয়া হবে। অতীতেও বিবেচনা করা হয়েছে এখনও বিবেচনা করা হবে। বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিসভা পরিষদের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানোর জন্য। তারপরও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে জনগণ দুর্ভোগে পড়ছে। এই দুর্ভোগ লাঘবে কি পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনগণের দুর্দশা বাড়ুক এটা আমরা চাই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমরা কেউ এই প্রত্যাশা করি না। আমাদের হাতে যেটা আছে। যদি রাজস্ব খাতে কোন কিছু করার থাকে অবশ্যই ছাড় দেয়া হবে। অতিতেও বিবেচনা করা হয়েছে এখনও বিবেচনা করা হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রথমতো আমি ব্যবসায়ী ছিলাম, সেটা আপনি কি করে জানলেন। আমি একজন চ্যাটার্ড অ্যাকাউনটেড ছিলাম। পাশাপাশি একটি অডিটফার্মের মালিক। সেখানে কাজ করাকে কোন জাতের ব্যবসা বলবেন। দ্বিতীয় এই মুহুর্ত থেকে গত ১০ বছরে আমার কোন ব্যবসা আপনার নজরে পড়েছে। এই তথ্য কোথায় পেলেন। আমি ব্যবসায়ী ছিলাম। এখনও ব্যবসায় থাকতে পারি? আমি এখন মন্ত্রী, মন্ত্রী হলে ব্যবসা করতে পারে না। এটা ইলিগ্যাল। আর আমি ব্যবসা করিও না। ভালোভাবে আপনারা সবাই জানেন। আমি সব কিছু বিক্রি করে বহু আগেই পরিষ্কার।

অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কি ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমার একটু অংশ ছিল। যদি কোন কারনে রাজস্ব বাড়িয়ে দেই। সে কারণে যদি দাম বাড়ে সেটার জন্য অর্থমন্ত্রণালয় দায়ি। আর বাকি অংশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমার মনে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দেখা-শুনা করছে। অতীতেও সমস্যা হয়েছিল পড়ে তা সমাধান হয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু বলা দরকার হবে না। এখন যে আলোচনা হয়েছে তাই পরিস্কার মেসেজ।

এডিবির জিডিপি নিয়ে পুর্ভাবাস নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এডিবি তো সারা বছরই কাজ করে। আর আমরা করি বছরে একবার। তারা বছরে একাধিকবার করে। তারা আমাদের সম্পর্কে খারাপ বলেনি ভালোই বলেছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। তারা বলেছে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ হবে।

এডিবি তাদের ওভারভিউতে বলেছে, বাংলাদেশ ধীরে হলেও শুরু করেছে। আমরা ধীরে হলেও এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যেতে হবে অনেক দুর। সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা সে কাজটি করবো। আমরা প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করবো গত বছর বলেছিলাম। সেটা আমরা ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জন করেছি। এ বছর আমাদের আশা গত বছর আমরা যেটা করতে পারি নাই ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এ বছর আমাদের আশা বাজেটে যে প্রক্ষাপন করা হয়েছে সেটা অর্জন করতে পারবো। সে স্বপ্ন পূরণ করতে আমরা কাজ করছি। দেশের সকল মানুষ তাদের সকল কিছু উজার করে দিয়ে এই দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ৬ দশমিক ৮ ভাগ যদি করতে পারি তাহলে আমরা সাউথ এশিয়া না সাউথ ইস্ট এশিয়ার সব দেশের মধ্যে আমরা ৩ নম্বরে থাকবো। আর গত বছর যেটা ছিল ৫ দশমিক ২৪ সেটাও এঅঞ্চলের মধ্যে সবার উপরে। এখন এই বছরও ৬ দশমিক ৮ সেটা বিবেচনা করেন তাহলে আমাদের ওপরে থাকে মাত্র ভারত আর চায়না। আমি মনে করি আমরা ভালোভাবে এগুচ্ছি। এটি আমাদের জন্য কম অর্জন নয়।

এদিকে ২ হাজার ৭২৯ কোটি ৬৪ হাজার টাকায় সাতটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। নাসিমা বেগম বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাবিউবো) ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্রগ্রাম ও সিলেট) (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুটি লটে মোট এক লাখ দুই হাজার ৭২০টি এসপিসি পোল সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ১৬৪ কোটি ৮৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড এসব এসপিসি পোল সরবরাহ করবে।’

সভায় বেসরকারি খাতে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প স্থাপনের একটি দরপ্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ থেকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৭ দশমিক ৬০৪ টাকা। এ হিসেবে ২০ বছর মেয়াদে ওই স্পন্সরকে আনুমানিক এক হাজার ৬৬৫ কোটি ৪৮ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইউডি এনভাইরনমেন্টাল ইক্যুইপমেন্ট কোং লিমিটেড, এভারব্রাইট এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন টেকনিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট (চাংঝো) লিমিটেড এবং এসএবিএস সিন্ডিকেটের কনসোর্টিয়াম।

তিনি বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে চুক্তিবদ্ধ ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মধ্যে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ২৬২ দশমিক ৬২৫ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৬ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএপিএফসিএল) জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর মধ্যে মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই, ইউএই-এর স্থানীয় এজেন্ট মেসার্স দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, ঢাকার কাছ থেকে দুই লটে ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, দুবাই, ইউএই-এর লোকাল এজেন্ট-মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকার কাছ থেকে বাকি ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড সংগ্রহ করা হবে। মোট তিনটি লটে এসব পণ্য আমদানি করতে সরকারের মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৩ লাখ ১১ হাজার মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ