পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা’র দুর্বত্তদের হামলা’র মোটিভ এবং হামলাকারী নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ জনকে আটকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন পর্যায় থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিক ব্যাক্তিকে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর এখন ওপেন সিক্রেট।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেকের বাবা, মা থেকে আত্মীয়স্বজনদের পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে চাইলে তারা তা স্বীকার করছেন না প্রথম থেকেই। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। উপজেলা কার্যালয়ে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্কের মাত্রা একটু বেশি। আর এই আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে মালি রবিউলকে গ্রেফতার ঘটনার প্রায় সাত দিন পর আটক দেখিয়ে পুলিশের প্রেস ব্রিফিং। সর্বশেষ গত শনিবার পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে উপজেলা কার্যালয়ের মালি রবিউলকে আটক এবং প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে হামলার কথা স্বীকার ও তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, মই উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে যে মই উপস্থাপন করা হয়েছে তা দিয়ে ইউএনও’র বাসায় দোতালার ভেন্টিলেটর পর্যন্ত উঠা যাবে কিনা তাও ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে। একইভাবে উপজেলা চত্বরের বিশাল পুকুর থেকে ছোট্ট হাতুড়ি উদ্ধারের বিষয়টিও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে খোলাসা করা হয়নি।
এদিকে রবিউলের সম্পৃক্তের বিষয়টিকে তার পরিবারসহ স্থানীয় সচেতন মহল মেনে নিতে পারছে না। পরিবারের কথা রবিউল হামলার ঘটনার দিন ১০০ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামে ছিলো। যেমনটি র্যাবের প্রেস ব্রিফিংয়ে যুবলীগ কর্মী আসাদুলের চুরি করতে যেয়েই হামলার স্বীকারোক্তির কথা প্রশাসনসহ সকল স্তরের মানুষ মেনে নিতে পারেননি। প্রশ্ন এসে পড়েছে গত জানুয়ারী অথবা ফেব্রæয়ারি মাসে ইউএনও’র ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা চুরির দায়ে রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর প্রায় ৮ মাস পর কেন এই হামলা চালালো রবিউল (পুলিশের তথ্য মোতাবেক)। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের শুরুতে রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ অথবা আটক না করে একাধিক ব্যাক্তিকে আটক করলো কেন।
র্যাবের প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউএনও অফিসের নৈশপ্রহরী নাজিম হোসেন পলাশ, ঘোড়াঘাট যুবলীগের আহবায়ক জাহাঙ্গীর, যুবলীগ কর্মী আসাদুল, সান্টু ও নবিউলকে জিঙ্গাসাবাদ শেষে আসাদুলকে প্রধান হামলাকারী হিসাবে চিহ্নিত করে তাকেসহ সান্টু ও নবিউলকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ওই সময়ে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও পলাশকে তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেয়ার কথাও বলা হয়। যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর বাসায় ফিরলেও নৈশ প্রহরী নাজিম হোসেন পলাশের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পুলিশ পলাশের বড় ভাইকেও বাসা নিয়ে যেয়ে একদিন পরে ছেড়ে দেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশ আসাদুল, মালি রবিউল এর সাথে পলাশকেও আটক দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। অতএব দীর্ঘদিন নৈশ প্রহরী পলাশ পুলিশ হেফাজতেই ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জিঙ্গাসাবাদের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে কাউকে তাদের হেফাজতে নিতে পারে কি না এ ব্যাপারে দিনাজপুরের বিজ্ঞ আইনজীবি অ্যাডভোকেট মাজহার হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে কাউকে হেফাজতে নিয়ে রাখতে পারেন না। হেফাজতে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করার কথা সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ (২) এ স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার উপর হামলার ঘটনা তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা মানছেন না।
ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার উপর ন্যাক্কারজনক হামলাটি নিন্দনীয়। সরকারের পক্ষে উপজেলাবাসীর স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তার উপর হামলাকে প্রশাসনসহ কোন মহলই মেনে নিতে পারেনি। সুরক্ষিত উপজেলা চত্বরের ভিতরে উপজেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা সাধারণ বিষয় নয়। এছাড়া ক্ষুদ্র কোন ঘটনায় এ ধরনের হামলা দুঃসাহসিকতার পরিচয় বহন করে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইনকিলাবের হাতে আসে গত ৪ মার্চ ঘোড়াঘাট সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সম্পাদিত দানপত্রের কপি।
ঘোড়াঘাটের স্থানীয় এস টি সিদ্দিকীর দুই ছেলে যথাক্রমে মো. ফারুক সিদ্দিকী ও মো. সিদ্দিকী গত ৪ মার্চ ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবা মো. ওমর আলী শেখের নামে ১৮০ শতক জমি রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে (দলিল নম্বর ৭২৯/২০২০) দান করে দেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বা কোন উপকার বা ঋণসহ বিশেষ কোন কারণে দান করার কথা লেখা নেই সেখানে। সাবেক ঘোড়াঘাট ইউনিয়ন বর্তমান ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার খোদাদপুর মৌজার অন্তর্গত এই জমির এস এ রেকডীয় মালিক খোদাদপুর এলাকার আজগর আলী। অপরদিকে ওই জমির মালিকানা নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবী করেছে, ৭১’ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর আজগর আলী’র খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতা পরবর্তীতে মালিকানাহীন জমি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই সূত্রে উক্ত জমিসহ মোট ৩০ বিঘা জমি বরাদ্দ পান ঘোড়াঘাটের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জেনারেল (অব.) ডা. মইদ সিদ্দিকী। তিনি এখনও জীবিত রয়েছেন। ডা. মইদ সিদ্দিকীর ভাতিজা হচ্ছেন জমি দানকারী মমিন ও ফারুক সিদ্দিকী। তারাই মূলত ভোগদখল করে আসছেন। সূত্রটির মতে মমিন ও ফারুক সিদ্দিকী ভোগ দখল করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক কতিপয় নেতা মোটা অঙ্কের ফায়দা নিয়ে আসতো। এভাবে যে যেভাবে পেরেছে মূল্যবান এসব সম্পত্তি থেকে লাভবান হয়ে আসছিল। নিজ চাচার নামে বরাদ্দ থাকা এবং সেই সূত্রে ভোগ দখল করে আসা আবদুল মমিন সিদ্দিকী ও ফারুক সিদ্দিকী ১৯৮৯ সালের ১৬ ও ১৮ মার্চ দুটি রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে হদিস না থাকা আজগর আলীর কাছ থেকে ক্রয় করেন। পরে ৯-১/১৬৬ ১৯৯০-৯১ নং খারিজ মোকদ্দমা সুত্রে ৩৫ নং খতিয়ানে খারিজ করে খাজনা পরিশোধ করেন।
এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন এসে যায় আজগর আলী’র অস্তিত্ব থাকলে খাস হিসাবে জমিগুলি বরাদ্দ দেয়া হলো কিভাবে। আর বরাদ্দ দেয়ার সময় আজগর আলী প্রতিবাদ বা বাধা ছিলো না কেন। একইভাবে খাস কবলা দলিল মূলে ক্রয় করা সম্পত্তি আবদুল মমিন সিদ্দিকী এবং ফারুক সিদ্দিকী কেনই ইউএনও’র বাবাকে বিক্রয়নামা না করে দানপত্র দলিল সম্পাদন করলেন।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের বেশী সময় ধরে ঘোড়াঘাট উপজেলায় এসি ল্যান্ড পদটি খালি রয়েছে। এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করে থাকেন ইউএনও। অপরদিকে ওয়াহিদা খানম বালু উত্তোলনে ড্রেজার মেশিন ধ্বংসসহ অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন। যা কিনা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে চিন্তিত করে তুলেছিল। ফলে দায় এড়াতে তড়িঘড়ি না করে তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারীত্বের পরিচয় দিয়ে হামলার প্রকৃত কারণ এবং এর সাথে যারা জড়িত তাদের আটক করে জনসম্মুখে আনা জড়িত হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।