পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘুম থেকে উঠে আমি জায়নামাজ খুঁজি। সকালে উঠেই আগে নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পরে কোরআন তেলওয়াত করি। তারপর এক কাপ চা নিজে বানাই। আমার সকালের চা-টা নিজে বানিয়েই খাই। চা বানাই, কফি বানাই যা বানাই নিজে বানিয়েই খাই। আমার ছোট বোন থাকলে আমার ছোট বোন আর আমি, যে আগে উঠে সে বানায়। এখন আমার মেয়ে পুতুল আছে, যে ঘুম থেকে আগে উঠে সে-ই বানায়। আমরা নিজেরাই করে খাই। তার আগে বিছানা থেকে নামার সাথে সাথে নিজের বিছানাটা গুছিয়ে রাখি নিজের হাতে। এরপর বই পড়ি। তবে আর একটা কাজ করি এখন, গণভবনে একটা লেক আছে। সেখানে যখন হাঁটতে যাই, হেঁটে যখন লেকের পাশে বসি তখন ছিপ নিয়ে বসি। মাছও ধরি। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিএনপির এমপি হারুন-অর-রশিদের করা এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অপরাধের সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোনোক্রমেই ছাড় দেয়া হবে না। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনার বিচার হবে জানিয়ে এমপিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এমপিদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন এ ধরনের অপরাধীদের কখনো রক্ষা করার চেষ্টা না করেন। অপরাধ যে করে এবং অপরাধীকে যারা রক্ষা করে সমানভাবে তারা দোষী। শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যেই ইউএনওর যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটি তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এর আসল রহস্যটা আসলে কী। বলা হচ্ছে চুরি করার জন্য সেখানে গিয়েছিল। আসলে সেখানে আরো কী কী ঘটনা থাকতে পারে সেগুলো এখন যথাযথভাবে দেখা হচ্ছে। তাকে হেলিকপ্টারে করে সাথে সাথে নিয়ে এসে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থাই কিন্তু আমরা গ্রহণ করেছি।
সংসদ নেতা বলেন, আমি আগেই বলেছি অপরাধী কিন্তু আমার চোখে অপরাধী। সে কোন দল, কে, কি আমি কিন্তু সেটা বিচার করি না। সেটা আপনারা দেখেছেন। আমি অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখি। সেখানে যদি আমার দলেরও লোক হয়, সমর্থক হয় তাকেও আমি ছাড়ি না, ছাড়ব না। এটিই হলো আমার নীতি এবং সেই নীতি নিয়ে আমি চলছি।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের সময়ে আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যেকে আমাদের প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, পুলিশ বাহিনী এবং আমাদের দলের নেতাকর্মী আমাদের ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ আন্তরিকতার সাথে মাঠে কাজ করেছে। এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের বহু নেতাকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়ে গেছেন, অনেকেই মারা গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটার পর একটা ধাক্কা এলো। করোনা ভাইরাসের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানে ২৪ লাখ মানুষকে আমরা সরিয়ে তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। এই ঝড়ের ধাক্কা না কাটতে কাটতেই এলো বন্যা। সেই বন্যা মোকাবেলা করা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাদের সাহায্য করা এটি কিন্তু সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে করেছে। করার ফলে আমরা সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছি। যারা এত আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে তাদের এভাবে আঘাত করা এটা তো কখনো গ্রহণযোগ্য না। আমরা কিন্তু ইতোমধ্যে অপরাধী শনাক্ত করা এবং যাদের ধরা হয়েছে তাদের পেছনে কারা আছে, সেটিও কিন্তু তদন্ত করা হচ্ছে এবং খুব ভালোভাবেই তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে কোনো ঘাটতি নেই এবং ঘাটতি হবে না। অপরাধী ঠিকই শাস্তি পাবে।
বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অতীত টেনে কথা বলি কেন? অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনের চলার পথ নির্দিষ্ট করতে হয়। নইলে শিক্ষা হয় না। এখানে অতীত নিয়ে কথা না, একানব্বই সালের কথা আমি বলেছি, সেই ঘূর্ণিঝড়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা। আমরা তো দেখেছি কত অবহেলার শিকার হয়েছিল এই দেশের মানুষ। ঠিক সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর যেমন মানুষ অবহেলিত ছিল। সেই সময় আমরা বিরোধী দলে থেকে আমরাই সেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তৎকালীন সরকার তো ঘুমাচ্ছিল। আর এই পার্লামেন্টে বলেছিল যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি। এটি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল। এটাই হলো দুর্ভাগ্য। অতীতকে স্মরণ করতে হবে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাহলে আমরা আগামী দিনে পথ চলতে পারব।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদার ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাড়ির ভেতরে ঢুকে এভাবে আক্রমণ করা বা হাতুড়ি দিয়ে পিটানো অত্যন্ত গর্হিত কাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটা কথা আপনারা জানেন এই বাংলাদেশে কি ঘটনা না ঘটেছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘরে ঢুকেই গোটা পরিবারকে হত্যা করেছে। তিনি তো প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তারপরও এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছিল। সেই খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে মুক্ত করা হয়েছিল। এ ধরনের খুনি ক্রিমিনালদের যখন প্রশ্রয় দেয়া হয় মানসিকভাবে সেই দেশের মানুষের কি রকম চরিত্র হতে পারে সেটাও হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একথা তো বাস্তব যে বেডরুমে তো কেউ পাহারা দিতে পারে না। তারপরও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং দেশে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সবসময় সজাগ রয়েছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, একজন ইউএনওর ওপর যে ঘটনা ঘটে গেছে বা ওয়াহিদার ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। চোর ঢুকে চুরি করতে কিন্তু এভাবে একজন সরকারি কর্মচারীর ওপর কেন হামলা হলো সেটি দেখা হচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, ঘটনা যে কোনো সময় ঘটতে পারে কিন্তু সেই ঘটনার সাথে সরকারের পক্ষ থেকে যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি কি না সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। যখনই যেখানে যে ঘটনাই ঘটুক তার সঙ্গে যারা জড়িত যার নাম আসবে সে কে কি করে আমি সেটা দেখতে চাই না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা নেব। এর বেশি আর কিছু বলার নেই।
তিনি বলেন, যে দেশে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়, দূতাবাসে চাকরি দিয়ে যে দেশে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে, সেই দেশটাকে শৃঙ্খলায় ফিরে আনা বা নিয়মমাফিক চালানো খুব কঠিন একটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্বটা তো আমরা সরকারে আসার পর পালন করে যাচ্ছি। এই দেশে ৫০০টি বোমা হামলা হয়েছে একযোগে, প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে। আস্তে আস্তে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মানুষের জানমাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এত জনসংখ্যা, এত ঘনবসতির একটা দেশে খুব কঠিন এই কাজটি চালিয়ে যাওয়া। তারপরও আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট সক্রিয় আছে।
বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের করা সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, এটা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া। তিনি এটা বিশ্বাস করতেন। আর তার আদর্শে অনুপ্রাণিত আমরাও সেটাই বিশ্বাস করি। আমরা ছোটবেলা থেকে সেভাবেই শিক্ষা নিয়েছি। আমার বাবার নির্দেশ ছিল রিকশাওয়ালাকে আপনি করে কথা বলতে হবে। ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলতে হবে। আর কাজের লোকজন তাদের কখনো চাকর-বাকর বলা যাবে না। হুকুম দেয়া যাবে না। তাদের সাথে সম্মান করে, ভদ্রভাবে চাইতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হতে পারি এখন বাড়িতে যে ছোট কাজের মেয়ে আছে বা যারাই আছে কারো কাছে যদি কখনো এক গ্লাস পানিও চেতে হয়, যতদূর পারি নিজে করে খাই। যদি চেতে হয় তাহলে তাদের জিজ্ঞেস করি আমাকে এটা একটু দিতে পারবে। এই শিক্ষা আমরা নিয়ে এসেছি, এটা এখনো আমরা মেনে চলি। এটা আমার বাবারই শিক্ষা, শুধু বলে গেছেন তা না সেই শিক্ষা আমাদের দিয়েও গেছেন। সেই দিক দিয়ে আমি মনে করি আমাদের সকলেরই গরিব দেখলে, ভালো পোশাক না পরলে তাকে অবহেলা করতে হবে, আমাদের কাছে সেটা না। আমাদের কাছে সকলে সমান সমাদর পায়। বরং যাদের কিছু নেই তাদের দিকে আমরা একটু বেশি নজর দেই, দৃষ্টি দেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।