পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ প্রণয়ন করে এবং আইনটিকে আরো বেশি কঠোর ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন ও ২০১৫ সালে বিধি প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পীকার সামিট ২০১৬ তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যে অঙ্গিকার প্রদান করেন ‘২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা হবে’। প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণাকে বাস্তবায়ন করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, এমন মন্তব্য করেন মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁও এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এনজিওদের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে। ফলে দেশের উন্নয়নে এনজিওরা সরকারের একটি বড় সহায়ক শক্তি। অন্যদিকে যেকোন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি একটি বড় হাতিয়ার আর এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে এনজিওসমূহ। যেহেতু এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এসডিজি’র সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা ৩-এ অন্তর্ভূক্ত আছে এবং সরকারের ৭ম-৫ম বার্ষিকী পরিকল্পনায়ও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সুতরাং এনজিও বিষয়ক ব্যুরো তামাক নিয়ন্ত্রণে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ উদ্যোগে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক (প্রকল্প-১) ড. মো. হেলাল উদ্দিন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও সহকারী পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান।
মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে যার মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। এই তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাথে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু, তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন ব্যহতকরণে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানীসমূহ নানা ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করছে। যুবসমাজকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে ও অধিক মুনাফা অর্জনে কোম্পানীসমূহ সরকারের আইনকে অবজ্ঞা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে সম্প্রতি তামাক কোম্পানীসমূহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে স্থানীয় সংগঠন কর্তৃক বিভিন্ন তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে (যেমনÑ ফাউন্ডেশন ফর স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড তামাক কোম্পানীর একটি সংস্থা)।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক তামাক কোম্পানী ফিলিপ মরিস ফাউন্ডেশন ফর স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড নামক সংস্থা গঠন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে বিভিন্ন এনজিওকে আর্থিক অনুদান প্রদান করছে। ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশন (সিএফএস) ও টেলেনর হেলথকে অনুদান প্রদান করে। ব্রাক ও টেলেনর হেলথ পরবর্তীতে অনুদানের অর্থ ফেরত দিয়ে দেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘তামাক শিল্প এবং জনস্বাস্থ্যের মধ্যে স্বার্থেও মৌলিক দ্বন্দ্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে’ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলি বলেছে ‘তামাক শিল্প বা তামাক শিল্পের স্বার্থকে সামনে রেখে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জড়িত নয় এবং জড়িত হবে না।’ কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণের নামে তামাক কোম্পানির অনুদান গ্রহণ বিপজ্জনক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে ফিলিপ মরিস ফাউন্ডেশনের স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড -এর কার্যক্রম বড় বাধা। বাংলাদেশে যে কোন এনজিও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর রেজিস্ট্রেশন/ সনদ নিতে হয় এবং যে কোন দাতা সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সুতরাং তামাক কোম্পানীর এ সকল কূট-কৌশল রোধে ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াস সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো তামাক নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে ২০১৪ সালে নিজ কার্যালয়সহ সকল এনজিও কার্যালয়কে ধূমপানমুক্ত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ধূমপানমুক্ত সাইনেজ প্রদর্শনেরও নির্দেশনা প্রদান করে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং তামাক কোম্পনীর কূট-কৌশলকে প্রতিহত করতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কার্যক্রর পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভার সভাপতি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক ড. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করবে তামাক নিয়ন্ত্রণে এবং এনজিও কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কর্তৃক আয়োজিত সকল সভায়/অনুষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
এছাড়াও সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অন্যান্য পরিচালক, উপ-পরিচালকরা, সহকারী পরিচালক, এসাইনমেন্ট অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার আমিনুল ইসলাম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-এর গ্রান্টস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া, প্রোগ্রাম অফিসার আতাউর রহমান মাসুদসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।