Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্যোগ মোকাবেলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ

জিসিএ’র আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রাকৃতিক দুর্যোগ চক্র থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানুষকে বের করে আনতে অভিযোজনের আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশে বৈশ্বিক অভিযোজন কেন্দ্রের ( গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস, হিমবাহে ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয় ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া। এমনকি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেক জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেকটি এসে আঘাত হানে, ফলে যেকোনো অগ্রগতি উল্টে যায়। এই চক্র ভাঙতে দক্ষিণ এশিয়াকে দুর্যোগে টিকে থাকার সক্ষমতা আরও বাড়ানোর ওপর গুরত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন, গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি রোধে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার ২০০৯ সালের বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপ এবং অভিযোজন কর্মসূচি নিয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছি এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ৪৩ কোটি ডলার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছি। আমাদের সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই সেক্টরে ২০০ কোটি ডলার করে ব্যয় করছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ তথা শতবছরের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

ইউএনএফসিসিসি’র জলবায়ু বিষয়ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এবং ভালনারেবল-২০ এর সভাপতি পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতায় জিসিএর ঢাকা কার্যালয় সমর্থন দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনন্য নজির স্থাপন করেছে। প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় এখানকার জনগণ বারবার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও পরিবর্তন করার মতো এখনো অনেক কিছু আছে। আমি মনে করি, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও অভিযোজন বিষয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা এবং কর্মসূচি রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতি জাতীয় সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। করোনার মধ্যে বাংলাদেশে কার্যালয় চালু করতে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রী জিসিএর সভাপতি বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিসিএর বাংলাদেশ কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জলবাযুর পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর প্রথম সারির একটি দেশ বাংলাদেশ। শিশু, নারী, বয়স্ক মানুষ এবং বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ঝুঁকির বিষয়টি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তিনি এই হুমকি মোকাবেলা এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়েনে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ নির্ধারিত অবদান(এনডিসি) সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের চয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের ৮ম মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ্রজলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে একটি জনগোষ্ঠি কতটা উদ্ভাবনী হতে পারে বাংলাদেশ তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জিসিএ বাংলাদেশের মাধ্যমে তাঁদের মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করে বাকি বিশ্ব নতুন জলবায়ু বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে। নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে বলেন, আমাদের দেশগুলো জলবায়ু অভিযোজনের গুরুত্ব সম্পর্কে খুব সচেতন। পাশাপাশি আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের উপযুক্ত ক্ষেত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে এখন অভিযোজন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে হবে। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভার্কুইজেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জলবায়ু সহিষ্ণুতা জোরদারকরণে অনেক উদ্ভাবনী সমাধান রয়েছে। সমাধান হিসেবে জিসিএ এর ভূমিকার মাধ্যমে জিসিএ বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে সবচেয়ে কার্যকর অভিযোজন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী লিনোপ টেন্ডি দরজি, মালদ্বীপের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হোসেন রশীদ হাসান, নেপালের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শক্তি বাহাদুর বাসনেট, পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহকারী মালিক আমিন আসলাম খান, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং জিসিএ বোর্ডের সদস্য একে আব্দুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।



 

Show all comments
  • মিনহাজ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৮ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • শাফায়েত ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অনেক দোয়া রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • সিরাজ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
    আল্লাহ যেন আপনাকে এভাবে দেশের খেদমত করার তৌফিক দান করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩০ এএম says : 0
    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস, হিমবাহে ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয় ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • লিয়াকত আলী ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩২ এএম says : 0
    আল্লাহর রহমত ছাড়া দুযোগ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • শান্তা ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩২ এএম says : 0
    হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল দুর্যোগ থেকে হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • ফাতেমা-তুজ-জোহরা ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১৯ এএম says : 0
    আশা করি সকল দেশ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখবে
    Total Reply(0) Reply
  • লাবনী ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২০ এএম says : 0
    সকল দেশের উচিত বিষয়টি অনুধাবন করে সে অনুযায়ী কাজ করা
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২২ এএম says : 0
    গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেক জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং দুর্যোগ মোকাবেলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই
    Total Reply(0) Reply
  • সবুজ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৩ এএম says : 0
    আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি তাওবা করা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ