Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাবলিক পরিবহন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানছে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৪২ পিএম

রাজধানীর শতভাগ পাবলিক পরিবহন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানছে না। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও ক্যাম্পেই ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহযোগিতায় বিআরটিএ সদর কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে ‘পাবলিক পরিবহনে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সংক্রান্ত বেসলাইন সার্ভের প্রতিবেদন প্রকাশ ও করণীয়’ শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর শতভাগ পাবলিক পরিবহন (বাস) তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানছে না আলোচ্য সভার গবেষনা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে উঠে আসে এ তথ্য চিত্র। গত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে রাজধানীর ২২টি রুটে এবং ৪১৭টি ননএসি বাসে ক্রসসেকশোনাল জড়িপ কার্যটি পরিচালিত হয়। জড়িপ পরিচালনা কল্পে দৃশ্যমান হয় যে ৯১ দশমিক ৩ শতাংশ চালক ও হেলপারগণ সরাসরি বাসে ধূমপান করে থাকে। ১০০ শতাংশ পাবলিক পরিবহন (বাস) এ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ পাওয়া যায়নি। সর্বপোরি ১০টি বাসের মধ্যে প্রায় ৯টি বাসেই ধূমপানের নিদর্শণ পাওয়া যায়। এ জড়িপ ফলাফল থেকে প্রতিয়মান হয়, ঢাকা শহরের ১০০ শতাংশ পাবলিক পরিবহন (বাস) এ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যদিও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে সকল পাবলিক পরিবহন ১০০ শতাংশ ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে। পাবলিক পরিবহন জড়িপ ফলাফল থেকে উল্লেযোগ্য সুপারিশমালা হচ্ছে আইন ভঙ্গ করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা ও রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করনের ব্যবস্থা গ্রহন করা। একই সঙ্গে পাবলিক পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ রাখার পাশাপাশি পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের সচেতন করতে নানামূখী উদ্যোগ গ্রহন করা।

সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব নুর মোহাম্মদ মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিআরটিএ সচিব খন্দকার অলিউর রহমান, লীডকনসালটেন্ট ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস(সিটিএফকে) বাংলাদেশ ড. শরিফুল ইসলাম, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পরিচালক হেল্থ ও ওয়াস সেক্টর ইকবাল মাসুদ, এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল ইসলাম, পরিচালক (প্রশিক্ষণ),বিআরটিএ। অনুষ্ঠান সঞ্চালয় ছিলেন শারমিন রহমান, প্রোগ্রাম অফিসার, তামাক নিয়ন্ত্রন প্রকল্প, হেল্থ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।

স্বগত বক্তব্যে ইকবাল মাসুদ বলেন, ধূমপানে শুধু নিজের নয় বরং পরোক্ষ স্বাস্থ্য ক্ষতিও উল্লেযোগ্য কারণ। তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সহ-সভাপতি এ্যাভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি কোন পাবলিক পরিবহনে আইন অনুযায়ী ধূমপানমুক্ত সাইনেজ স্থাপন না করে থাকে তাহলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যাতে পরিবহনের ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান না করেন।তাহলে অবশ্যই সকল পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ আইন মানতে বাধ্য হবেন।

সায়দাবাদ বাস মালিক সমিতি সভাপতি আবদুল কালাম বলেন, যদি চালক ও হেলপাররা নিজেরা পরিবহনে ধূমপান থেকে বিরত থাকেন তাহলে যাত্রীদেরকেও ধূমপান হতে বিরত থাকতে পরামর্শ দিতে পারবেন। একই সঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সকল বাস কাউন্টারে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ স্থাপন করতে হবে।

সিটিএফকে লীডকসালটেন্ট ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বাস চালক ও শ্রমিকদের তামাক নিয়ন্ত্রন আইন মানতে বিভিন্ন উপায়ে সচেতন ও উৎসাহিত করতে পারেন। তাহলে পাবলিক পরিবহনে সকলের জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস প্রদানে ধূমপানমুক্ত রাখার শর্তারোপ করতে হবে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সকল পরিবহণে ধূমপানমুক্ত চিহ্নিত সাইনেজ স্থায়ীভাবে স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এছাড়া তিনি আরো বলেন বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ৯০ শতাংশ চালক ও হেলপারদের সচেতন করা সম্ভব। এবং বাকি ১০ শতাংশ যারা সচেতন করার পরেও আইন মানতে নারাজ তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যদি সকল পরিবহন শ্রমিক, পেশাদার চালক ও হেলপারগণ আইন প্রতিপালনে সচেতন হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে আগামি ২০৪০ সালের মধ্যে একটি তামাকমুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব হবে।

আলোচ্য সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শরফউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নিবার্হী কর্মকর্তা, সাভার পৌরসভা, সাভার, সহকারী পুলিশ কমিশনার, ট্রফিক, গুলশান বিভাগ, নিউটন দাস, সিটিএফকে বাংলাদেশ এর গ্রান্টস ম্যানেজার, আবদুস সালাম মিয়া ও প্রোগ্রাম অফিসার(এ্যাডকেসী এন্ড রিসার্চ), আতাউর রহমান মাসুদ এবং বিআরটিএর পরিচালক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনজিও প্রতিণিধিরা।

সভায় সকল অংশগ্রহণকারীরা একমত পোষণ করেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সকল পাবলিক পরিবহন ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে। এছাড়াও সভায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনসহ অন্যান্য অংশগ্রহনকারীদের সুপারিশ ছিল যে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যেন নিয়মিত পাবলিক পরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এবং এর পাশাপশি বিআরটিএ আইনে ধূমপানের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ