পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্য পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ৬টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়।
অন্যদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ অবস্থায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মারা যান শামীম হাসান। গতকাল সকালে জুলহাস এবং আলী মাস্টার নামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেক (৬০) ও মুয়াজ্জিনসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়। সবমিলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫ জনে। বার্ন ইনস্টিটিউটে বাকি ১৩ জন, যারা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তাদের সবার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালি, মুখমন্ডলসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তারা কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। ৩ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।
এদিকে, নিহত ২৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের মধ্যে ১৮ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লাশ হস্তান্তরের পর গত শনিবার রাতেই ১৮ জনকে দাফন করা হয় নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। দু’জনের দাফন হয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। মসিজদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ফতুল্লা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে এই আগুনের সূত্রপাত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট ও পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন পৃথক ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সবগুলো তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে নামাজ পড়ার সময় গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ইমাম ও মসজিদ কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে পুলিশের হত্যা মামলা : নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে এই আগুনের সূত্রপাত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্তে যাদের অবহেলা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলাটির তদন্ত চলছে।
মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকে গ্যাস বন্ধ, লাকড়ি দিয়ে রান্না : বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের পর তল্লা এলাকাসহ আশপাশের বাসা-বাড়িতে গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার মানুষের রান্নাবান্না বন্ধ। এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাসলাইন চালু করা হয়নি। জানা যায়, মসজিদে বিস্ফোরণের পর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তিনদিনেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি। বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকায় লাকড়ি দিয়ে রান্নাবান্না সারছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, তল্লা এলাকাসহ আশপাশ মহল্লায় ৫০-৬০ হাজার মানুষের বসবাস। কোনোরকম মাইকিং, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তিনদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস। এ অবস্থায় লাকড়ি ও খড়কুটো দিয়ে রান্নার কাজ সারছেন স্থানীয়রা।
তল্লা এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম জানান, তিনদিন ধরে গ্যাস নেই। রান্না তো না করে পারি না। লাকড়ি ও খড়কুটো জোগাড় করে রান্নার কাজ করছি। কবে গ্যাস আসবে জানি না। গ্যাস না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। বাচ্চার জন্য দুধ গরম করতে পারছি না। রান্নার অভাবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে আছে।
তিতাস অফিস সূত্র জানায়, তদন্তের আলামত রক্ষার স্বার্থে মসজিদ এলাকার দুটি গ্যাস বাল্ব বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা আজ লাইন খোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তদন্ত সংশ্লিষ্টরা খুলতে দেয়নি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হন ৩৭ জন মুসল্লি। এরপর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ জন।
মসজিদের একটি এসিও বিস্ফোরিত হয়নি : বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ।
তিনি বলেন, মসজিদের এসি থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ছয়টি এসির প্রতিটির ক্যাচিং পুড়েছে কিন্তু ভেতরের সব ঠিক আছে। বিস্ফোরণ হয়েছে গ্যাসের ও বিদ্যুতের স্পার্ক থেকেই। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্যও পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, সিআইডি এবং ডিপিডিসির পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা ৫টি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।