Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মসজিদে কোনো এসি বিস্ফোরিত হয়নি

না. গঞ্জের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ চিকিৎসাধীন ১৩ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন : অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্য পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ৬টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়।

অন্যদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ অবস্থায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মারা যান শামীম হাসান। গতকাল সকালে জুলহাস এবং আলী মাস্টার নামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেক (৬০) ও মুয়াজ্জিনসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়। সবমিলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫ জনে। বার্ন ইনস্টিটিউটে বাকি ১৩ জন, যারা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তাদের সবার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালি, মুখমন্ডলসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তারা কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। ৩ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।

এদিকে, নিহত ২৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের মধ্যে ১৮ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লাশ হস্তান্তরের পর গত শনিবার রাতেই ১৮ জনকে দাফন করা হয় নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। দু’জনের দাফন হয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। মসিজদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ফতুল্লা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে এই আগুনের সূত্রপাত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট ও পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন পৃথক ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সবগুলো তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে।

স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে নামাজ পড়ার সময় গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ইমাম ও মসজিদ কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে পুলিশের হত্যা মামলা : নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে এই আগুনের সূত্রপাত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্তে যাদের অবহেলা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলাটির তদন্ত চলছে।

মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকে গ্যাস বন্ধ, লাকড়ি দিয়ে রান্না : বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের পর তল্লা এলাকাসহ আশপাশের বাসা-বাড়িতে গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার মানুষের রান্নাবান্না বন্ধ। এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাসলাইন চালু করা হয়নি। জানা যায়, মসজিদে বিস্ফোরণের পর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তিনদিনেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি। বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকায় লাকড়ি দিয়ে রান্নাবান্না সারছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানান, তল্লা এলাকাসহ আশপাশ মহল্লায় ৫০-৬০ হাজার মানুষের বসবাস। কোনোরকম মাইকিং, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তিনদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস। এ অবস্থায় লাকড়ি ও খড়কুটো দিয়ে রান্নার কাজ সারছেন স্থানীয়রা।

তল্লা এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম জানান, তিনদিন ধরে গ্যাস নেই। রান্না তো না করে পারি না। লাকড়ি ও খড়কুটো জোগাড় করে রান্নার কাজ করছি। কবে গ্যাস আসবে জানি না। গ্যাস না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। বাচ্চার জন্য দুধ গরম করতে পারছি না। রান্নার অভাবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে আছে।

তিতাস অফিস সূত্র জানায়, তদন্তের আলামত রক্ষার স্বার্থে মসজিদ এলাকার দুটি গ্যাস বাল্ব বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা আজ লাইন খোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তদন্ত সংশ্লিষ্টরা খুলতে দেয়নি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হন ৩৭ জন মুসল্লি। এরপর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ জন।

মসজিদের একটি এসিও বিস্ফোরিত হয়নি : বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ।

তিনি বলেন, মসজিদের এসি থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ছয়টি এসির প্রতিটির ক্যাচিং পুড়েছে কিন্তু ভেতরের সব ঠিক আছে। বিস্ফোরণ হয়েছে গ্যাসের ও বিদ্যুতের স্পার্ক থেকেই। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্যও পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, সিআইডি এবং ডিপিডিসির পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা ৫টি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।



 

Show all comments
  • Mohammad Masud Rana ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:২৮ এএম says : 0
    এই খেয়ালিপনার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক তিতাস কোম্পানির বিরুদ্ধে এমডি থেকে শুরু করে রুট লেভেল পর্যন্ত এদের কার্যক্রম সবারই সমান ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Abdul Wadud ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:২৯ এএম says : 0
    এসির উপর কেচিং থাকায় এসির মুল অংশ নষ্ট হয়নি।কেচিং জ্বলে গেছে। কোন কিছু বিস্তারিত না জেনে রিপোর্ট করলেই সাংবাদিক হয় না। সাংবাদিকদের অল রাউন্ডার হতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • নীল আকাশ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:২৯ এএম says : 0
    অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল কবে শেষ হবে!
    Total Reply(0) Reply
  • Hafiz Abdullah ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩০ এএম says : 0
    প্রতিটি মসজিদের জায়গা আগে ওয়াকফ করা হয়, তারপর মসজিদ নির্মান করা হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে মন্ত্রী সাহেব এই কথা বলছেন যে মসজিদটি অবৈধ !? মানুষের কেনা জমির বা ভবনের নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন নিয়ে যাবেন,তার মানে কি ভবনটি অবৈধ..?
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Azimur ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনি সবাইকে সুস্হতা দান করেন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Shalim ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৩ এএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ, তোমার ঘরে ইবাদত করতে গিয়ে যারা দগ্ধ হয়েছে তাদের সকলকে সুস্থ করে দাও।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Alam ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৩ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি আমাদের এই রকম বিপদ থেকে বাচাও।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৪ এএম says : 0
    যারা এর জন্য দায়ি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৯ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের জনগণ দেখে আসছে কিভাবে সরকারি সংস্থা তিতাস গ্যাস অন্যায় করার পরও ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে। এটা খুবই সত্য কথা যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনগণ ভীষন ভালবাসে। নিন্দুকেরা বলছেন, এবার মসজিদের বিষয় নিয়ে মসজিদ নির্মাণের প্রসঙ্গ এনে পক্ষান্তরে তিতাস গ্যাসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্য নিয়ে জনমনে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি মসজিদ হচ্ছে আল্লাহ্‌র ঘর এটাকে নিয়ে আমরা কোন ভাবেই বিরুপ মনভাব পোষন করি না এটাই চলে আসছে যুগ যুগান্ত ধরে। আল্লাহ্‌র ঘর আল্লাহ্‌ই রক্ষা করেন এটাই আমরা জানি আর এটাই মহা সত্য। তারপরও আল্লাহ্‌র ঘরে এতবড় একটা দূর্ঘটনা ঘটেগেছে অবশ্যই এখানে আল্লাহ্‌র হেকমত জড়িত আছে আমকে বিশ্বাস করতে হবে। এখন আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে কখন আল্লাহ্‌র পক্ষে থেকে আমরা জানতে পারবো কেন এটা ঘটেছে। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদ

১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ