Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মসজিদে ট্র্যাজেডি

নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণে ২০ জনের মৃত্যু টাকার জন্য গ্যাস লাইন সংস্কার করেনি তিতাস-মসজিদ কমিটির সভাপতি ঘরে ঘরে আহাজারি, কে কাকে সান্তনা দেবে গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

নারায়ণগঞ্জ শহরে মসজিদে বিস্ফোরণ থেকে আগুনে দগ্ধ হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যে ১৭ জন ভর্তি আছেন, তাদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। গতকালই ১৬ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় । ইতোমধ্যে তিনজনের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। বিস্ফোরণের ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃৃপক্ষ একটি ও জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় তিতাস কর্মকর্তারা মসজিদের গ্যাস পাইপে লিকেজ সংস্কার করেননি বলে অভিযোগ করেছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের ফোন করে দগ্ধ ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। 

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তারা মনে করছেন, গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে যায়। পরে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা অন্য কোনোভাবে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হলে সেখানে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে ও আগুন লেগে যায়।
গতকাল শনিবার সকালে এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকার অলি-গলিগুলোতে হাজারো মানুষের ভিড়। ক্লাব ও পাড়া মহল্লাগুলোতে কালো কাপড় ঝোলানো হয়েছে। স্বজনহারাদের আহাজারি চলছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। যাদের কেউ হতাহত হননি, তারাও সহ্য করতে পারছেন না একসঙ্গে এত মৃত্যু ও দগ্ধের ঘটনা। হঠাৎ প্রতিবেশীদের এমন পরিণতিতে অঝোরে কাঁদছেন তারা। আহতদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন। ঘরে ঘরে আহাজারি, কে কাকে সান্তনা দেবে।
ফায়ার ব্রিগেডের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, এসিতে ব্যবহৃত ফ্র্রেয়ন গ্যাসের অস্থিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি। গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবদল্লাহ আল আরেফিন জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপ রয়েছে। ওই পাইপের লিকেজ দিয়ে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে যায়। এর মধ্যে এসি চলার কারণে মসজিদের ভেতরে সবগুলো জানালা ও দরজা বন্ধ ছিল। ফলে নির্গত গ্যাস বের হতে পারেনি। বিস্ফোরণের আগে কেউ হয়তো বাতি বা বিদ্যুতের কিছু জালানোর সময় স্পার্ক করে। সেই স্পার্ক থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে সেটার কারণে এসি ও বাইরের ট্রান্সফরমারেও আগুন ধরতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখানে এসে প্রথমেই ধারণা করি এসিগুলো বিস্ফোরণের সঙ্গে বৈদ্যুতিক কারণের সংশ্লিষ্টতা কম। পরে মেঝেতে থাকা পানিতে গ্যাসের বুদবুদ উঠায় সন্দেহ হয়। এরপর দেখা যায়, মসজিদের নিচে দিয়ে তিতাস গ্যাসের অনেকগুলো লাইন গেছে। লাইনের পাইপগুলোর প্রতিটিতে একাধিক লিকেজ রয়েছে। সেই লিকেজের গ্যাস সবসময় মসজিদে উঠত। নামাজের আগে থেকেই মসজিদ বন্ধ করে এসিগুলো চালু করার ফলে পুরো রুমেই এসি ও গ্যাস মিশে যায়। আর গ্যাসের ধর্মই হল বিস্ফোরণের অবস্থা তৈরি হলে বা কোনও আগুনের সংশ্লিষ্টতা পেলে এরা বিস্ফোরিত হয় বা জ্বলে উঠে। সেই সূত্র মতেই এ ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে এসিগুলো বিস্ফোরিত হয় কারণ এসিতেও গ্যাস রয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিহত ও দগ্ধ রোগীদের দেখতে যান নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন। দগ্ধ ও নিহতদের দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। যদি কারো গাফলতি থাকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর মসজিদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। মসজিদের ভেতরে থাকা ছয়টি এসির সব কটি পুড়ে গলে গেছে। মসজিদ ভবনের স্লাইডিং জানালার কাচ উড়ে গেছে, ভেতরে ফ্যান, বিদ্যুতের তার, প্যানেল বোর্ড সবকিছু পুড়ে গেছে।
ঘরে ঘরে আহাজারি, কে কাকে সান্তনা দেবে
শনিবার সকালে এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকার অলি-গলিগুলোতে হাজারো মানুষের ভিড়। ক্লাব ও পাড়া মহল্লাগুলোতে কালো কাপড় ঝোলানো হয়েছে। স্বজনহারাদের আহাজারি চলছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। যাদের কেউ হতাহত হননি, তারাও সহ্য করতে পারছেন না একসঙ্গে এত মৃত্যু ও দগ্ধের ঘটনা। হঠাৎ প্রতিবেশীদের এমন পরিণতিতে অঝোরে কাঁদছেন তারা। আহতদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন। বিস্ফোরণে হতাহত অধিকাংশ মুসল্লির বাড়ি মসজিদের গা ঘেঁষে পশ্চিম দিকে চলে যাওয়া সরু সড়কটির আশপাশে। এ সড়ক ধরে ২০ গজ এগিয়ে গেলেই ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারীর (৬৫) বাড়ি। বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা গেছেন। কুদ্দুস ব্যাপারীর বাড়ির দেয়াল ঘেঁষেই খান ভিলা। এই বাড়ির একটি টিনশেড ঘরে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন হাফেজ ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪২)। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে পড়াশোনা করাতেন দুই ছেলে- মেয়েকে। শনিবার সকালে তার বাড়িতে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা বলেন, রাতেই ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর জেনেছেন তারা। স্বামীর লাশ নিয়ে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছেন ইব্রাহীমের স্ত্রী।
ইব্রাহীমের বাড়ি থেকে ৩০ গজ এগিয়ে গেলেই বোমালা মাঠ। এই মাঠের পাশে নূরজাহান বেগমের বাড়িতে তিন ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকেন পারুল বেগম। অনেক আগেই স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে চলে যান নুরুদ্দীন। পেশায় আরবির শিক্ষক পারুল প্রাইভেট পড়িয়ে বড় করছিলেন তিন ছেলেকে। বিস্ফোরণের সময় পারুল বেগমের তিন ছেলে সাব্বির (২১), জোবায়ের (১৮) ও ইয়াসিন (১০) ছিলেন মসজিদে। ভাগ্যক্রমে তার ছোট ছেলে ইয়াসিন বেঁচে ফিরলেও আগুনে পুড়ে মারা গেছেন পারুল বেগমের বড় দুই ছেলে। ঘটনার পর থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন পারুল বেগম। পারুল বেগমের বাড়ির ২০গজ দূরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত সাত বছরের শিশু জোবায়েদ। শুক্রবার বাবা জুলহাস মিয়ার হাত ধরে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল সে। তারপর আর সে বাড়ি ফেরেনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জোবায়েদের। একসঙ্গে এত লাশ রাখার ব্যবস্থা নেই তল্লা এলাকায়। এই এলাকার লোকজন তাই ছুটছেন দূর-দূরান্তের মসজিদগুলোতে। খাটিয়া সংগ্রহ করে এনে রাখছেন মসজিদ থেকে ১৫০ গজ দূরের বোমালা বাড়ির মাঠে। প্রাথমিকভাবে মাঠেই লাশা রাখার প্রস্তুতি চলছে।
টাকার জন্য গ্যাস লাইন সংস্কার করেনি তিতাস
পঞ্চাশ হাজার টাকা না দেয়ায় নারায়ণগঞ্জের তিতাস কর্মকর্তারা বাইতুল সালাত মসজিদের গ্যাস পাইপে লিকেজ সংস্কার করেননি বলে অভিযোগ করেছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর। গতকাল শনিবার সকালে তিতাস গ্যাসের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে তাদের সামনেই এ অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, লিকেজের বিষয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় তারা এ সমস্যা সংস্কার করেননি। তবে মসজিদ কমিটি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেনি। মৌখিকভাবে নারায়ণগঞ্জের তিতাস গ্যাস অফিসের কর্মকর্তাদের জানানো হয়।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি বিষয়ে বলেন, তদন্ত কমিটি সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। যদি তিতাস কর্তৃপক্ষের ৫০ হাজার টাকা অভিযোগের বিষয়ে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আহতদের অবস্থাও সঙ্কটাপনঃ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, দগ্ধ বাকি ১৯জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনেকের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের উপদেষ্টা চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ ব্যক্তিদের বেশির ভাগের শরীরের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। আহতদের অবস্থাও সঙ্কটাপন। তিনি জানান, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি দগ্ধ ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে মোট ৩৭জন রোগী এসেছিলেন। আহতদের মধ্যে কয়েক জনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সর্বাত্মক চেষ্টা করার জন। আমারা দগ্ধদের বাঁচিয়ে তুলতে সর্বাত্মক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
৩টি তদন্ত কমিটি গঠনঃ বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি ও জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্মন, উপপরিচালক(অপারেশন্স) নুর হাসান ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আরেফিন। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ অফিসের ডিজিএম মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে তিতাস গ্যাসের ঢাকা অফিসের মহাব্যবস্থাপক আবদুল ওহাবকে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় অতিরি জেলা প্রশাসক খাদিজা তাহেরী ববিকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী রুবি জানান, ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ হওয়ার মত একটা শব্দ শোনার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। এর পর পরই বাইরে মানুষের চিৎকার শুনতে পাই। চিৎকার শুনেই দৌড়ে বের হয়ে যা দেখি তা মুখে বলার মতো নয়। কারও পরনেই কোনো কাপড় নেই। সবার শরীর কালো হয়ে আছে। সবাই পানি পানি বলে চিৎকার করছে। রাস্তায় সামান্য কিছু জমে থাকা পচা পানি ছিল। সেখানেই গড়াগড়ি খাচ্ছে আর পানি পানি করে চিৎকার করছে। আমার স্বামীও নামাজ পড়তে গিয়েছিল। এরকম অবস্থা দেখে আমি আমার স্বামীকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু তাকে কোথাও পাচ্ছিলাম না। এমন পরিস্থিতে আমি অজ্ঞানের মতো সেখানে পড়ে থাকি বেশ কিছুক্ষণ। পরে জানতে পারি আমার স্বামীকেও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ‘নারায়ণগঞ্জ টিভি’তে কর্মরত একজন সাংবাদিকও দগ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, এশার নামাজ শেষে কেউ কেউ সুন্নত পড়তে নিয়ত করেছে, আবার কেউ কেউ বেরিয়ে গেছে। তবে যারা বেরিয়ে গেছেন তারা বেঁচে গেছেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বিদ্যুৎ চলে যায়। এর এক থেকে দেড় মিনিটের ব্যবধানে পুরো মসজিদ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। একটু পরেই সবার চিৎকার। অনেকের গায়ে আগুন। সবাই দৌড়ে বাইরে বের হচ্ছেন। কেউ কেউ জানালার কাচ ভেঙে বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৩৭ জনের মধ্যে শিশু ও মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনসহ ২০ জন মারা গেছেন। তারা হলেন- মসজিদের
ইমাম আ. মালেক নেসারি (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার (৪৮), জুয়েল (৭), মিজান (৪০), জামাল (৪০), সাব্বির (১৮), জুবায়ের (১৮), হুমায়ুন কবির (৭০), কুদ্দুস বেপারী (৭০), ইব্রাহিম (৪২), মোস্তফা কামাল (৩৪), রিফাত (১৮), জুনায়েত (২৮), রাসেল (৩০), মাইনউদ্দিন (১২), কাঞ্চন হাওলাদার (৪০), নয়ন (২৭), জয়নাল ও রাসেল (৩৪)।

পরিদর্শনে মেয়র আইভী : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকাল বিকেলে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় সড়কের বেহাল দশা দেখে তিনি নিজেই সড়কটি করে দেবেন বলে জানান। পরে তিনি নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।



 

Show all comments
  • Yasmin Rahman ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    কোন জঘন্য দেশে আমরা বাস করি!যেখানে একজন ইউএনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের অবস্থান কোথায়,ভাবলেই গা শিউরে ওঠে!
    Total Reply(0) Reply
  • Tariful Mowla ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    গ্যাস লিকেজ থেকে দূর্ঘটনা, এসি বিষ্ফোরণ হয়েছে পরে। এখানে এসির দোষ নয়, দোষ গ্যাসের..
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাঈম সরকার ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    এসি বিষ্ফরণ হয়নি...সত্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরেকটা নাটক....!
    Total Reply(0) Reply
  • Towfikul Islam Ripon ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    যারা বলতাছেন এসি বিস্ফোরণ হইছে,ভাই এসি বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম,যদিও হয় তাহলে আউট ডোর কম্প্রেসার হতে পারে কিন্তু ইনডোর ইউনিটে সম্ভাবনা নাই,আর এসিতে যেই গ্যাস R410A & R22 গ্যাস ব্যবহার করা হয় তা non-flammable বা অদ্রাহ,তাই কম্প্রেসার বিস্ফোরণ হলেও অগ্নি কান্ডের সম্ভাবনা নাই, আল্লাহ সবাইকে সুস্থতা দান করুন,যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, আমিন ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Taj Uddin Ahmed Taj ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    দিন রাত একটানা ২৪ ঘন্টাও এসি চলে আরব দেশে।তার পরেও এরকম কোন দূর্ঘটনার কথা আজও কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Omor Faruq ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    এসির গ্যাসের ব্যাপারে ভালো ভাবে যেনে নিবেন। গ্যাস নাম্বার R22 এটা বন্ধ করুন ব্যবহার। প্রিয়ন R410a দেখে এসি কিনবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • বাস্তব বাদী ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
    দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার পর সেফ্টির জন্য মরিয়া হয়ে উঠি আমরা ! বিদ্যুত্ লাইন, ডিসলাইন,টেলিফোন লাইন কত ভয়াবহ আকার ধারণ করে আছে,বিদ্যুত্ বিভাগের মাঠ কর্মীরা অহরহ দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে পঙ্গুত্বের স্বীকার হচ্ছেন, জীবন দিচ্ছেন, আমার মনে হয় গ্যাস ও বিদ্যুত্ বিভাগের কয়েক হাজার কর্মী দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরন করে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোন দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে ! নেই হেলমেট,নেই সেফটি সুজ,নেই হ্যান্ডগ্লোবস্ ,টপ-আপ খাম্বা ওঠার জন্য নেই ভাল কোন মই---'
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Haque ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশে এসি বিস্ফোরণের মূল কারণ এসি কোম্পানিগুলোর মালিক তারা কি পরিমাণে দুর্নীতি করে তা কাছে থেকে আমি নিজের চোখে দেখেছি৷ সাধারণত এসির উপরের কভার দেখেই মানুষ এসি কিনে থাকে কারণ ভেতরে দেখার সুযোগ নাই৷ আর এসির ভেতরেই সব দুর্নীতি উপরের কভার আনা হয় জাপান মালয়েশিয়া বা আরও বিভিন্ন দেশ থেকে কিন্তু ভেতরের যন্ত্র গুলা আনা হয় চায়না থেকে তাও নিম্ন মানের যন্ত্র তার ঐগুলা বাংলাদেশের নবাবপুরের বিভিন্ন গোডাউনে রেখে ফিটিং করা হয়
    Total Reply(0) Reply
  • Leo Gilbert Rozario ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
    মূলতঃ কমপ্রেসার অভার হিট হওয়ার কারন outdoor condenser ময়লায় জেম হয়ে গেলে কমপ্রেসার অভারহিট হবে, যদি কমপ্রেসার over heat relay automatic কাজ না করে দুরগঠনা সম্ভবনা থাকে, ঐ অভার হিট অবস্হায় যদি condenser leakage এর গ্যাস ও কমপ্রেসার তেল আসলে দুরগঠনা সম্ভবনা হয়ে থাকে আগুন ধরে গিয়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • Roksana RoKu ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
    যখন একটা র্দুঘটনা ঘটে তখন সর্তকতার কথা আসে, এ আবার কেমন নিয়ম!সবার আগে কেন সর্তকতা নিয়ে আমরা চিন্তা করি না জাতি হিসেবে কোন মানুষের পর্যায়ে পারি না আমরা।এ দেশের মানুষ নিজ স্বার্থ আর টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না।সব কিছুতে দুর্নীতি
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam Saif ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
    ফাজলামোর একটা সিমা থাকে কিন্তু বাংলাদেশে সেটা নেই। সত্য জিনিষটা আজ বাংলাদেশে হাস্যকর জিনিস। তাই বলা চলে দেশ নয় এটা একটা মগেরমুল্লুক।
    Total Reply(0) Reply
  • R K Rubel Sarker ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
    এতদিন কি সরকারের কানে এসব যায়নি, নাকি এইদিকে সরকার চোখ কান সব বন্ধ রেখেছিল। এখন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে বলে, ধামাচাপা দিতে অনেক কিছুই সামনে নিয়ে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:১৫ এএম says : 0
    খবর পড়ার পর পরিষ্কারভাবেই বুঝাযাচ্ছে যে, তিতাস গ্যাস কোম্পানির গাফলতির জন্যেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখান এই দূর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্যে ১০০% ভাগ দায় দায়িত্ব তিতাস গ্যাস কোম্পানীকে বহন করতে হবে। ইয়া আল্লাহ্‌ যারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেছে তাদের আত্মার শান্তি দিন এবং যারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন তাদেরকে সুস্থ করে তুলুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদ

১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ