Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রকল্প বাতিলের পর যে বিকল্প চিন্তা সরকারের

সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এসেছে সরকার। ২০১২ সালে সোনাদিয়া দ্বীপে সমুদ্র বন্দর তৈরির প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে ঐ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে কোনো অগ্রগতি ছিল না। গত সোমবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে আট বছর আগে নেয়া ঐ সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সোনাদিয়ার জায়গায় কিছুটা দূরত্বে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান সোনাদিয়ার কাছে মাতারবাড়ীতে আরো বেশি গভীরতার সমুদ্র বন্দর তৈরি করার সুযোগ থাকায় সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ীতে জাপানের অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের শুরুর দিকে যখন কয়লার জন্য জেটি নির্মাণ করা হয়, তখন সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের একটি সম্ভাবনার কথা জানা যায়। মাতারবাড়ীতে ১৮ মিটার ড্রাফটের একটি তৈরি চ্যানেল পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, যেটা সোনাদিয়ায় সর্বোচ্চ ১৪ মিটার ড্রাফটের হত। এছাড়া সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর হলে ঐ এলাকায় পরিবেশগত ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি’, বলেন মি. চৌধুরী।

যে কারণে মাতারবাড়ীতে তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর-
জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির উপকরণ আনার জন্য তিনটি জেটি তৈরি করার সময় সমুদ্র বন্দর তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করা শুরু হয়। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য জাফর আলম জানান, ‘জাইকা ২০১৬ সালে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি সার্ভে করে, যেখান থেকে জানা যায় যে, তিনটি জেটির সাথে যে চ্যানেলটি আছে সেটিকে ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে বন্দর তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জরিপের পর মন্ত্রণালয় ঐ অঞ্চলে সমুদ্র বন্দর তৈরির সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য সমুদ্র বন্দর তৈরি করা সম্ভব বলে জানায়।

প্রাথমিক জরিপ শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, বন্দরের জন্য প্রায় ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রায় সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল তৈরি করা হবে, যেটির সিংহভাগ সমুদ্রে থাকলেও প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ মাটি খুঁড়ে তৈরি করা হবে।

জাফর আলম বলেন, ‘সোনাদিয়াকে ‘ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ বা পরিবশেগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই সোনাদিয়ায় এই ধরনের প্রকল্প করা হলে তা পরিবেশের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেৎ। সেই তুলনায় মাতারবাড়ী বন্দর মানুষের বসতি থেকে কিছুটা দূরে এবং তীরের চেয়ে কিছুটা ভেতরের দিকে নিয়ে ‘খননকৃত বন্দর’ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, কাজেই এখানে পরিবেশগত ঝুঁকি কম তৈরি হবে’। পাশাপাশি কম জনবহুল এলাকা হওয়ায় বড় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন জনাব আলম। জাফর আলম জানান ২০২৬ সালে এ বন্দর বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হবে।
যেসব কারণে মাতারবাড়ী বন্দর অন্যান্য বন্দর থেকে আলাদা হবে
চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেগুলো মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের ক্ষেত্রে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জাফর আলম। চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলি নদীর ওপর হওয়ায় এখানে শুধুমাত্র জোয়ারের সময়ই জাহাজ ঢুকতে বা বের হতে পারে। এছাড়া কর্ণফুলি নদীতে দু’টি বাঁক থাকায় ১৯০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ বন্দরে ঢুকতে পারে না। আর গভীরতা কম থাকায় সাড়ে ৯ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজও বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না’।

মাতারবাড়ী বন্দরে এরকম কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকায় যে কোনো সময় সর্বোচ্চ সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ সেখানে ঢুকতে পারবে বলে জানান জনাব আলম। ফলে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ থেকে পণ্য আনতে ব্যবসায়ীদের অপেক্ষাকৃত কম খরচ হবে এবং তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পণ্য আনা নেয়া করা যাবে। ‘এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের সাথেই বন্দর অবস্থিত হওয়ায় পণ্য বহনকারী ট্রাকের কারণে শহরের কার্যক্রমে ব্যাঘাত তৈরি হয়, যেটি এ বন্দরের ক্ষেত্রে থাকবে না’।

মাতারবাড়ী বন্দর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি রাস্তা সরাসরি হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবে। পাশাপাশি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও বন্দরের ভেতর রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে তাদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে জানান জাফর আলম। অর্থাৎ নদীপথ, রেলপথ ও সড়কপথে বন্দরের সাথে ত্রিমুখী যোগাযোগ থাকবে, আর ডাবল গেজ ট্রেন ব্যবহার করায় কন্টেইনার বহনের ক্ষেত্রে সেগুলোর সক্ষমতাও বেশি থাকবে’। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের খরচ বহন করা হবে জাইকার ঋণ, সরকারি অর্থায়ন ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ