Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা বিপর্যয়ের পরও ইতিবাচক পরিবর্তনের আশাবাদ অর্থমন্ত্রীর

বিডার চতুর্থ বর্ষপূর্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:৫৭ পিএম | আপডেট : ৮:৩৯ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

. পণ্যের বৈচিত্র্যের জন্য বিডাকে ‘উইং’ খোলার পরামর্শ

. উন্নত দেশে পৌঁছাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : সালমান এফ রহমান

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডাকে একটি আলাদা ‘উইং’ খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, পরামর্শ এসেছে বিডার মতো আরেকটি প্রতিষ্ঠান করার জন্য। তারা উপদেশ দেবে কোন লাইনে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন করব, আরেকটি প্রতিষ্ঠান না করে বিডা যদি আরেকটি উইং করে পৃথিবীর কোন কোন দেশ কীভাবে ডাইভারসিফিকেশন করছে আমাদের সাথে সঙ্গতি করে করা যায়। তিনি বলেন, ৪ থেকে ৫টি প্রোডাক্ট নিয়ে রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে পারব না। পুরো বিশ্ব আমাদের মনে রাখতে হবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগাতে হবে। জনশক্তিকে কাজে লাগান, লোকাল ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য অবারিত দরজা খুলে রেখেছি।

গত চার বছর ধরে বিডা আশার আলো দেখাচ্ছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ফেইল করার কোনো মানুষ এখন বিডার সাথে সম্পৃক্ত নেই। অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। প্রত্যেকটা বিপর্যয়ের পরে একটা পরিবর্তন আসে। করোনা বিপর্যয়ের পরেও পরিবর্তন আসবে। যার ফলে একটা ইতিবাচক পরিবর্তনই হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যেই রেমিট্যান্স খাত ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই-আগস্টে রফতানিখাতও ঘুরে দাঁড়াবে।

বৃহষ্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিডার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বেসরকারিকরণ কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে একীভ‚ত করে ২০১৬ সালে বিডা গঠন করা হয়।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কম জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পৃথিবীতে এ মুহূর্তে জিডিপি সাইজ হচ্ছে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ হচ্ছে ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট, ভেরি আনফরচুনেটলি এফডিআইয়ের পরিমাণ আমাদের কম। এফডিআই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে ইউএসএ, তারপর চায়না এবং তারপর সিঙ্গাপুর ১০৫ বিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৫১ বিলিয়ন ডলার। বেশিরভাগ এফডিআই তাদের দখলে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভৌত অবকাঠামোগুলো তৈরি করেছি এখন বিনিয়োগ আসবে। ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার আমাদের হয়ে গেছে, নন ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার মানবিক কাজগুলো দরকার। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করব মানুষকে ভালোবাসব। দেশি বা বিদেশি সব বিনিয়োগকারীরা আমাদের কাছে সমান। আমরা কোন বৈষম্য করব না, করি নাই। যারা বিনিয়োগ করবে তারাই আমাদের সম্পদ। আমাদের সম্পদকে আমরা সম্পদশালী হিসেবে দেখতে চাই। তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগই বিনিয়োগই অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড অন্যতম। আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ ধরতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে সেগুলো ঠিক করার তাগাদা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভিয়েতনাম যেভাবে পেরেছে সেভাবে আমাদের করতে হবে। জিডিপি গ্রোথ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা সাউথ এশিয়ার সবার উপরে থাকবে। একমাত্র ভিয়েতনামকে আমাদের কাছাকাছি মনে হয়। এছাড়া আমাদের সমপরিমাণ কেউ হবে না। জুলাই-আগস্ট মাসে সামস্টিক অর্থনীতির প্রতিটি কম্পোনেন্ট খুব পজিটিভলি উপস্থাপিত হয়েছে, রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে। আমাদের যে সম্পদ তার পুরোটা ব্যবহার করতে পারিনি। আমাদের সম্পদ জনশক্তি। সব জায়গা ডিজিটাইজড হচ্ছে। আামাদের জনশক্তি যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি আমি বিশ্বাস করি এরাই হবে বড় শক্তি।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছাতে আমাদের দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বিনিয়োগের ওপর জোড় দিয়েছেন। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর সে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের বিনিয়োগ আনতে হবে। তবে শুধু বিদেশি বিনিয়োগ না দেশি বিনিয়োগও আনতে হবে। দেশি বিনিয়োগ আসলেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবে। এজন্য বিডাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, বিডা যে কাজটি করেছে সেটা ইজ অফ ডুয়িং বিজনেসে। তবে আরো জরুরি হয়ে গেছে সেটা হলো ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস)। এটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি। তাহলে বিনিয়োগকারী যারা আছেন তারা আগ্রহী হবেন। ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) ও ডিজিটালাইজেশনে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সহজেই সমাধান করা যায়। কেননা ডিজিটালাইজেশন অনেকটা বাস্তব করে ফেলেছি। এখন সরকারি সেবাটা যদি অনলাইন সার্ভিস করে ফেলি তাহলে আলো অনেক দূর এগিয়ে যাবো। ইতোমধ্যে রাজস্ব আদায়ে অনলাইন করা হয়েছে। আমাদের সমস্যা আছে। তবে অনেক জায়গায় সফলতা পেয়েছি। ফলে আমরা যদি চাই অবশ্যই এটা করতে পারি। এখন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছি কারণ সেখানকার লোকজন বুঝে উঠতে পারেনি। তাদের মানসিকতা এখনও পরিবর্তন হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো করা হচ্ছে বিশেষ করে ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্ক করা হচ্ছে। এছাড়া মেগা প্রকল্প হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর অনেক উন্নত হয়ে গেছে, পতেঙ্গাতে বে টার্মিনাল হচ্ছে। কিন্তু আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে সেটা সম্পন্ন হলে দেশে অবকাঠামোখাতে অনেক পরিবর্তন আসবে। ফলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছানোর জন্য যা যা করা দরকার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় সবাই ভেবেছিল আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। কিন্তু দেখা গেছে আমাদের ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ হয়েছে। যেখানে অন্যান্য দেশ নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ৮ শতাংশ কিন্তু অর্জন করেছি ৫ দশমিক ২ শতাংশ। রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ায় রেমিট্যান্স বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রবাসী কর্মী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য। এজন্য আমি অভিনন্দন জানাতে চাই আমাদের বিনিয়োগকারীসহ বিদেশে থাকা প্রতিনিধিদের।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সহায়তার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার কাজ করে যাচ্ছি। বিনিয়োগ বিকাশের জন্য নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা প্রয়োজন, বর্তমানে যারা উদ্যোক্তা হয়েছে তাদের নিজেদের চেষ্টায় হয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা সম্ভব। নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করার জন্য বিডা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ৬৪টি জেলায় বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, জন্মদিনে উপহার দিতে হয়। তবে আমরা ছোট দাবি করছি, ভিয়েতনামের মতো সেক্টর ডাইভারসিফিকেশন কাউন্সিল করার। বিডার অধীনে এই কাউন্সিল করলে আইন ও অবকাঠামো সুবিধা হবে। আশাকরি এ বিষয়ে বিডা ভ‚মিকা রেখে যাবে।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও-এমডি কেদার লেলে, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেংজুন, প্রাণ-আরএফএল গ্রæপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বাংলাদেশ মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জর্জ রবার্টসন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সেলিমা আহমাদ, হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ- বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।



 

Show all comments
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০৩ পিএম says : 0
    ইনশায়াল্লাহ, বাংলাদেশের ওপর আল্লাহর রহমত আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০৪ পিএম says : 0
    আমরাও আশাবাদি। আপনাদের সক্রিয় ভূমিকা চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০৪ পিএম says : 0
    মহান আল্লাহ আমাদের ওপর দয়া করুন। তিনিই বাঁচাতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ