পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিনিয়োগ শিল্পায়নের আদর্শ ঠিকানা চট্টগ্রাম। দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশের প্রবেশদ্বার। বঙ্গোপসাগরের কোলে পাহাড়-নদী-হ্রদ চর-দ্বীপাঞ্চল ঘেরা ভূ-প্রাকৃতিক কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থানে চট্টগ্রাম। এসব গুরুত্বের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ আকৃষ্ট হয়েছে বৃহত্তর এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন, বিনিয়োগে। প্রসারিত হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।
বাংলাদেশে শিল্প-বাণিজ্য, অবকাঠামো বিনির্মাণে প্রধান বিনিয়োগকারী অকৃত্রিম বন্ধুদেশ চীন। বলা হয় চীনা বুদ্ধি-কৌশল মাথা ঘুরিয়ে দেয় গোটাবিশে^র! চট্টগ্রামে বিনিয়োগ শিল্পায়নে শীর্ষে চীন। শিল্প-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক জোন, অবকাঠামো প্রকল্পে বিশাল পরিসরে চীন আর্থিক ও কারিগরি সহযোগী।
করোনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ গত মার্চ মাসে স্থবির হয়ে পড়ে। চীনে দ্রুত করোনা মোকাবেলা এবং গত ৩০ মে দেশে লকডাউন শিথিলের পরই সচল হয়েছে চীনা প্রকল্পবহর। উত্তর প্রান্তে মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী থেকে বন্দরনগরীর পতেঙ্গা-আনোয়ারায় বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে দক্ষিণে মহেশখালী অবধি চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ৬টি প্রকল্পস্থল এখন কর্মচঞ্চল। চীনা প্রকৌশলী-কর্মীদের পাশাপাশি দেশীয় কর্মী ও শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। চীন সরকারের সবুজ সঙ্কেতের ফলে প্রকল্পসমূহে চীনের অর্থায়নে এসেছে গতি। সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালে এসব প্রকল্প দৃশ্যমান এবং ২০২২ সালে চালু করা।
প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান ইনকিলাবকে বলেন, চীনের সহায়তায় চট্টগ্রামে চলমান প্রকল্পগুলো সচল হওয়ায় আশাবাদ তৈরি হয়েছে। এসব প্রকল্প প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক-নির্ভর। শ্রমনিবিড় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে জনগণ আরও উপকৃত হতো।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘চীন এখন অনেকগুলো সুবিধা দিয়ে আকৃষ্ট করেছে বাংলাদেশকে। আরও বিভিন্ন সুবিধা তারা দেবে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের প্রকল্পগুলো ভালো উদ্যোগ। তবে নিকটতম প্রতিবেশী ভারতকে না চটিয়ে বরং উভয় দেশের সঙ্গে আমাদের ভারসাম্যের সম্পর্ক বজায় রাখাই হবে বিচক্ষণতা এবং দূরদর্শিতা’।
মহেশখালীর কালামার ছড়ায় সিপিপি-চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরো চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লি. জ্বালানি তেলের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম), মজুদাগার এবং ডাবল পাইপলাইন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পটিতে চীন সরকারের বিনিয়োগ ৪ হাজার কোটি টাকা।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন দেশীয় ও চীনা প্রকৌশলী-কর্মীরা। টানেলের বাম পাশে নির্মাণকাজ গত ২ আগস্ট সম্পন্ন হয়। ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে খনন কাজ করে টানেলে রিং বসানো হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাস থেকে টিবিএম নদীর তলদেশে মাটি খনন করে দক্ষিণে আনোয়ারা প্রান্ত থেকে পতেঙ্গায় অগ্রসর হবে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ এ যাবৎ ৫৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দেশে প্রথম ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই টানেলের ভেতরে দুটি টিউবের মধ্যদিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৪৫০ মিটার। ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার মূল টানেলের সাথে আনোয়ারা অংশে ৫ দশমিক ৫২৭ কি.মি. এবং পতেঙ্গা অংশে দশমিক ৫৫ কি.মি. সংযোগ সড়ক হচ্ছে। এই মেগাপ্রকল্পে দেশি-বিদেশি এক হাজার ৭শ’ শ্রমিক, কর্মী ও প্রকৌশলী নিয়োজিত।
বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি- টু টাউনে’ রূপান্তরিত হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেতু কর্তৃপক্ষ টানেল বাস্তবায়ন করছে। নির্মাণকাজে নিয়োজিত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। এই মেগাপ্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।
এদিকে চীনের ২৮ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় আনোয়ারায় ৭৮৩ একর জমিতে চীনা অর্থনৈতিক জোন নির্মাণকাজ চলছে। তবে খুবই ধীরগতিতে। ৪শ’ শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী এই অর্থনৈতিক জোনে চীন থেকে শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রি-লোকেট (স্থানান্তর) করার টার্গেট রয়েছে।
সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ মেগাপ্রকল্পের অন্যতম ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় নির্মাণাধীন দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ মেগাপ্রকল্পে চীনা প্রকৌশলী ও কর্মীরা ইতোমধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে অবকাঠামো নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রকল্পে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত একশ’ দশমিক ৮৩ কি.মি. এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত আরো ২৮ দশমিক ৭৫ কি.মি. রেলপথ নির্মিত হবে।
মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে চীনা বিভিন্ন কোম্পানি বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। ১০ একর জমিতে জুঝাউ জিনইয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লি. নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে। এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের অঙ্ক ৮০ কোটি ডলার। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে তৈরি হবে উন্নত প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক গাড়ি। একশ’ একর জমিতে গাড়ি কারখানা নির্মাণ করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লি.। এর সঙ্গে অংশীদার চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং মোটর গ্রুপ লি.। আগামী বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশি ব্র্যান্ড নামে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারজাতের পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
এদিকে অফুরান সম্পদ আর সম্ভাবনার ধারক কক্সবাজার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শহরগুলোর সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ সহজতর কক্সবাজার থেকেই। অথচ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়নে শুধুই জটিলতা আর সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এটি অপরিহার্য হিসেবে স্বীকৃত এবং একনেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও, পদে পদে আটকে যাচ্ছে বাস্তবায়ন। কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করে বিদেশি পর্যটক এবং বিনিয়োগ-শিল্পায়ন আকর্ষণের জন্য অপরিহার্য।
এ বিমানবন্দরের রানওয়ে শক্তিশালী ও দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা দু’বছর আগেই। আন্তর্জাতিক রুটের বিমান ওঠানামার উপযোগী করতে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুট রানওয়েকে ১২ হাজারে উন্নীতকরণ, রানওয়ে মজবুত করা, মহেশখালীমুখী সমুদ্রের দিকে ব্লক তৈরি করে প্রায় দেড় হাজার ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম বৃদ্ধি, নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য অপরিহার্য অবকাঠামো সুবিধা গড়ে তোলার পরিকল্পনা এখনও ঝুলে আছে। ঘুরপাক খাচ্ছে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়।
২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে স¤প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় টেন্ডার প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারেনি। গত ২৮ জুলাই সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এক হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজে টেন্ডার চুড়ান্ত হওয়ার কথা। অথচ ডকুমেন্টে অসঙ্গতির অভিযোগ আসে।
এর মধ্যদিয়ে ক্রয়সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি প্রকল্পটি অনুমোদন বন্ধ রাখে। প্রধানমন্ত্রীর রিভিউয়ের জন্য ফরওয়ার্ড করা হয়। এরআগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ টেন্ডার মূল্যায়নে ত্রুটি খুঁজে পায়। এখন দুই মন্ত্রণালয়ে রশি টানাটানিতে রি-টেন্ডার করা হলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরও দুয়েক বছর পিছিয়ে যাবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ যাতে অনির্দিষ্টকাল ঝুলে না যায় জাতীয় স্বার্থেই প্রকল্পটির ত্বরিৎ বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।