Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রিটের চূড়ান্ত শুনানি হয়নি ১৪ বছরেও

বিচার বহির্ভুত হত্যা-ক্রস ফায়ার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫৮ পিএম

বিচার বহির্ভুত হত্যা কিংবা ‘ক্রসফায়ার’র বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হয়েছিলো ২০০৬ সালে। সেই রিটের নিষ্পত্তি হয়নি ১৪ বছরেও। কেন নিষ্পত্তি হয়নি-এ প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের সুপরিচিত এবং প্রসিদ্ধ আইনজীবী। দেশের সর্বাধিক সংখ্যক জনস্বার্থের মামলার বাদী। আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রিটেরও বাদী তিনি। এ রিটের জের ধরে তৎকালিন প্রধান বিচারপতি এস.কে. সিনহাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো। দেশ ছাড়তে হয়েছিলো। অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দেশ ও জনমানুষের স্বার্থে বিচারাঙ্গনে সদা সোচ্চার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি চ্যানেল তার সাক্ষাতকার নিয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন,আলোচিত ক্রস ফায়ার সংক্রান্ত মামলার বছরের পর বছর ঝুলে থাকার কারণ। তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়-ক্রস ফায়ার কিংবা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে মানুষ হত্যা এবং এ নিয়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা সম্পর্কে। জবাবে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ২০০৬ সালে রিট করেছিলাম সেটির শুনানি হয়নি। সে সময় অনেকগুলো ক্রস ফায়ারের ঘটনা উদ্ধৃত করে আমি আদালতে গিয়েছিলাম একজন সাহসী বিচারপতির আদালতে। তিনি বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর। তিনি রুলতো দিয়েছিলেনই- একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশও দিয়েছিলেন। আপানারা জানেন যে, প্রত্যেক মিডিয়ার খবরটাই ছিলো যে, আসামিকে গ্রেফতার করার পর রাতের বেলা তাকে নিযে অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া হয়। সেখানে ও^ৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের ওপর আক্রামণ করে। আতœরক্ষার্থে র‌্যাব পাল্টা গুলি ছোড়ে। সেখানে গোলাগুলি হয়। আরও ওই গুলিতে আসামি মারা যান। অথচ যাদের গ্রেফতার হচ্ছে তাদের নিরাপত্তাও দেখার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর।সবগুলো ঘটনা একই রকম। আমরা তখন চিন্তা করলাম,এটির একমাত্র সমাধাণ হতে পারে, যে লোকটাকে গ্রেফতার করা হলো তাকে যদি নিরাপত্তা দেয়া যায়। গ্রেফতারের অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া তাকে প্রটেকশন দেয়া জরুরি। আমরা আদালতে আবেদন করেলাম গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যেন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে যাওয়া হয়। তাহলে গোলাগুলিতে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত আসামি মরবে না। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অন্তর্বর্তীকালিন আদেশ দেন আদালত। সেই আদেশে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিরাপত্তার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নিশ্চিত করতে বলা হয়। আদেশের আলোকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে আসামি গ্রেফতারের পর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানোর বিষয়টি যুক্ত করে। সেটির কারণে কিছুদিনের জন্য ক্রস ফায়ার বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু কিছুদিন পরই সরকারের পক্ষে এটর্নি জেনারেল আবার একটি আবেদন নিয়ে আসলেন। শুনানির পর আদেশটি রি-কল করা হয়। তখন আর অন্তর্বর্তীকালিন আদেশটি থাকলো না। পরে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি আর রইলো সা। তবে রুলটি এখনও রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এরপরই আমরা ক্রস ফায়ার নিয়ে ২০১০ সালে একটি মামলা করেছি।২০১১ সালে মামলা করেছি। তারপর কাস্টডিতে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, একবার ঢাকার দারুস সালামসহ কয়েকটি থানায় ৩ জন লোক একদিন মারা গেলেন পুলিশী নির্যাতনে।এটি নিয়ে আমি আদালতে গিয়েছি। মামলা করেছি। একাধিক মামলা আমি করেছি। সব ক’টি মামলায় অন্তর্বর্তীকালিন আদেশ হয়।রুল জারি হয়েছে। রুল জারির পর এটি শুনানির জন্য যখন আদালতে যাই, যখন শুনানির জন্য ‘ফিক্সআপ’ হয় তখন কয়েক শ’ মামলা থাকে কার্যতালিকায়। শুনানির জন্য মামলাটি টপে আসতে আসতে ছয় মাস এক বছর লেগে যায়। যখন টপে আসে তখন দেখা যায় বিচারক পরিবর্তন হয়ে গেছে। অথবা তার শুনানির জুরিসডিকশন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এমনও হয়েছে মামলা যখন শুনানির পর্যায়ে এসেছে, যখন আদালত শুনানির জন্য মামলাটি ধরেছে তখন সরকার রুলেরই জবাব দেননি। সরকার যদি রুলের জবাব না দেয় তাহলে মামলাটি একতরফাভাবে শুনানি হতে পারে না। তখন সরকারপক্ষকে রুলের জবাব দিতে আরও সময় দেন আদালত। এসব কারণে ক্রস ফায়ারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে করা রিটের নিষ্পত্তি হয়নি ১৪ বছরেও। ২০০৬ সালে ক্রস ফায়ার নিয়ে করা রিটের রুলের জবাবের কপি এখনও হাতে পাইনি। তবে গত দুই-তিন বছর আমি এটির শুনানির জন্য যাই নি। কারণ হলো দু’তিন বছর আগে মোহাম্মদপুরে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। ক্রস ফায়ার দেয়ার ব্যাপারে। সারারাত ধরে মহিলার পক্ষে আমি বিনা ফিতে পিটিশন রেডি করে গিয়েছিলাম গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য। দুটি আদালতে গিয়েছিলাম দরখাস্ত নিয়ে। কিন্তু কোনো আদালত হস্তক্ষেপ করেনি। এতে আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ হয়েছি। এর পরে ক্রস ফায়ারের মামলা নিয়ে স্যুয়োমোটো রুল জারি হয়েছে। সেটিরও শুনানি হয়নি । আদালত পরিবর্তন হয়ে গেছে। এর পর আমি আর এটির শুনানি জন্য আগ্রহ দেখাইনি। তবে আদালত পুরোপুরি খুললে আমি এটি নিয়ে আবার ও আদালতে যাবেন-মর্মেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যা কিংবা ক্রস ফায়ারের নতুন সূচনা হয় ২০০২ সালে। 'অপারেশন ক্লিনহার্ট' নামের অভিযানে অনেকে ক্রস ফায়ারের শিকার হযেছেন। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন বহু মানুষ। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার'র তথ্যে বিএনপি সরকারের ২০০২-০৬ সালে ১ হাজার ১৫৫ জন ব্যক্তি ক্রস ফায়ার কিংবা বিনা বিচার হত্যার শিকার হন। ২০০৭-০৮ এই দুই বছরে ৩৩৩ জন একইরকম হত্যাকান্ডের শিকার হন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে এ পর্যন্ত আড়াই হাজার মানুষ বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে মর্মে দেশীয় –আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়।



 

Show all comments
  • Jack Ali ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:০৪ পিএম says : 0
    We liberated our country from Pakistan for what ???????? All the government since liberation started killing us.. O'Allah rescue us from all these killer government and establish Your Law Islam,, then we will be live in our Beloved Country in peace with human dignity..
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ