Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশুরা ঈমানী চেতনার দিন

জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

পবিত্র আশুরার দিন ঈমানী চেতনার দিন। বাতিলের কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা দেয় আশুরা। আশুরার তাৎপর্য থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন চালাতে হবে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুরসণ করে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানুষের যেমনি শারীরিক ব্যাধি আছে। তেমনি আত্মার ব্যাধিও রয়েছে। শারীরিক ব্যাধি বৃদ্ধি পেলে হায়াত না থাকলে মানুষ ইন্তেকাল করেন। আর আত্মার ব্যাধি বৃদ্ধি পেলে কখনো কখনো মানুষের ঈমান চলে যায়। মনে রাখতে হবে ঈমান মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। যার ঈমান আছে তার সব আছে। যার ঈমান নেই তার কিছুই নেই। সুতরাং ঈমানকে মজবুত করতে হলে অবশ্যই আত্মার ব্যাধি সংশোধন করতে হবে। আল্লাহপাক শারীরিকভাবে অসুস্থ রাখেন এবং আত্মার সমস্ত ব্যাধি থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন। পেশ ইমাম বলেন, আত্মার কঠিন ব্যাধি হচ্ছে গীবত। এই গীবত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

গীবত সর্ম্পকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘তোমরা কি জান ‘গীবত’ কী? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা অপছন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম গীবত। জিজ্ঞেস করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি তার ‘গীবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে। (মুসলিম; মিশকাত)। আল্লাহপাক সকল প্রকার গীবত থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন আমীন।

ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মুহাররম মাসের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরা আরবী ’আশারাতুন’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ দশ। আল্লামা আইনী বলেছেন, কারো কারো মতে যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালা এদিনে দশজন নবীকে দশ ধরণের মর্যাদা দান করেছিলেন তাই তাকে আশুরা বলা হয়। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.)-কে সাহায্য করেছিলেন। সমুদ্রের মধ্য দিয়ে তার জন্য রাস্তা করে দিয়েছিলেন আর ফেরাউনকে স্বদলবলে পানিতে নিমজ্জিত করেছিলেন। নূহ (আ.) এর নৌকা জুদি পাহাড়ে থেমে ছিল। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই দিনে আদম (আ.) এর তাওবা কবুল করেছিলেন। ইউছুফ (আ.) কে কুয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এই দিনে হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম হয় এবং এই দিনেই তাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। দাউদ (আ.) এর তাওবা কবুল করা হয় এই দিনে। ইবরাহিম (আ.) এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। এইদিনে ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। এইদিনে রাসূল (সা.) এর পূর্ব পরের সমস্ত গুনাহ মাফের ঘোষণা দেয়া হয়।

রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, রমযানের পরে শ্রেষ্ঠ রোজা হল মুহাররমের রোজা। তিনি আরো এরশাদ করেছেন, আশুরার দিনে রোজা রাখলে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়। পেশ ইমাম বলেন, আশুরার দিন ঈমানী চেতনার দিন। কারণ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র হযরত হুসাইন (রা.) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই দিন শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তারপরেও বাতিলের কাছে মাথা নত করেননি। প্রত্যেক মুমিনের উচিৎ কারবালার দিনের এই শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরমানিটোলা শাহী জামে মসজিদের খতিব বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুসা বিন ইযহার জুমা পূর্ব বয়ানে বলেন, আশুরা ইসলামের ইতিহাসে একটি অনন্য দিন। এই দিনে আল্লাহপাক বিভিন্ন নবীদেরকে তার বিশেষ নেয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন। সেই সুবাদে ইসলামী শরীয়তে আশুরা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোজা রেখেছেন তবে ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য থেকে বাঁচার জন্য আগে অথবা পরের দিন রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মুসলিম সমাজে ভ্রান্ত শিয়া মতবাদের প্রভাবের কারণে আমরা আশুরা কেন্দ্রিক বহুমুখী বিদআত ও শরিয়া বহিভর্‚ত কাজে লিপ্ত হয়ে থাকি। শিয়া মতবাদ এবং এর অনুসারীরা যুগে যুগে ইসলামের এবং মুসলমানদের যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করেছে তা অন্য কেউ পারেনি। তাই এই ভ্রান্ত মতবাদের আকিদা বিশ্বাস থেকে মুসলমান সমাজকে সচেতনভাবে দূরে থাকতে হবে।
চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার বয়ানে বলেছেন, মুহাররমের ১০ তারিখে নবীজী (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শাহাদত বরণ করে ইনসাফ ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। আল্লাহর নেজাম প্রতিষ্ঠায় ইমাম হোসাইন (রা.) এই শাহাদত নিঃসন্দেহে শিক্ষণীয় এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলেও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই দিনে শোক মিছিল বের করা, স্বীয় শরীরে আঘাত করে মাতম করা এবং হায় হোসাইন হায় হোসাইন স্লোগান দিয়ে বিশেষ কোন কর্মসূচি পালন করার সাথে ইসলামী শরীয়তের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি কোরআন সুন্নাহ পরিপন্থি এসব কর্মকান্ড পরিহার করার আহবান জানিয়ে বলেন, হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি গালে আঘাত করে, কাপড় ছিঁড়ে এবং বর্বরযুগের মত করে বিলাপ করে সে আমার উম্মতের অন্তভর্‚ক্ত নয়।



 

Show all comments
  • Monjur Rashed ২৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৩ পিএম says : 0
    Is there any similar program in Kawmi / Deobandi mosques of madrasas commemorating the contributions of Ahle Baith E Rasul (sm)?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ