পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতিসহ উন্নয়নের চাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পেও পড়েছে এর প্রভাব। ধীরগতিতে চলছে উন্নয়ন কাজ। অবশ্য গত ৩০ মে সরকার আংশিকভাবে লকডাউন তুলে উন্নয়ন কাজ ও অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে প্রায় আড়াই মাসের লকডাউনে বড় প্রকল্পগুলো একেবারেই থমকে যায়। এসব প্রকল্পে কাজ করা বিদেশি শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়াররাও সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারেন নি। তাদের নিজেদের দেশেও লকডাউন থাকায় এবং যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় সময়মতো কাজে যোগদান সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে জীবনযাত্রা। অর্থনীতির সবগুলো সেক্টরকে পুরোপুরি চালু করে দেয়া হয়েছে। সরকারের প্রত্যাশা পদ্মা সেতুর মত অন্যান্য প্রকল্পও দিন-রাত কাজ করে দ্রুত এগিয়ে নেয়া। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে দৃশ্যমান করা। আর তাই পুরোদমে অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোর কাজও এগিয়ে নিতে চাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে মহামারিতে স্থগিত বা ধীর হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে পূর্ণ গতি ফিরিয়ে আনতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পকাজে সহায়তাকারী বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সভা করছে সরকারের বিভিন্ন উইং। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইতোমধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পিছিয়ে পরা সময় পুষিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উভয় পক্ষের সঙ্গে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের ইকোনোমিক রিলেশনস ডিভিশন (ইআরডি) ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে ভারতের বিনিয়োগে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প রয়েছে তা বাস্তবায়নের কিভাবে গতি আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর সর্বশেষ গতকাল করোনায় স্থগিত বা ধীর হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের পূর্ণ গতি ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থ সহায়তা দ্রুত ছাড়ে চীনা সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইআরডি। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত গতিতে বাস্তাবায়নে অর্থ ছাড়সহ সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছে চীন। দু’দিন আগে অবশ্য চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, চীন এক নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আগামী দিনে দু’দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীন-ভারতের চলমান বৈরিতায় সা¤প্রতিক সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। চীন এই সময়ে যদি দ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না করে তাহলে তারা অনেকটা পিছিয়ে যাবে। প্রতিযোগী ভারত সেই সুযোগ নিবে। তবে চীন বাংলাদেশকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে পাশে পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে না। তাই নিজেদের স্বার্থেই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত অর্থছাড়সহ অন্যান্য সহযোগীতা অব্যাহত রাখবে। যদিও এ হিসেব কষেই গত কয়েক বছর ধরে চীন বাংলাদেশে করছে মেগা বিনিয়োগ। দেশটি এখানে পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি সর্বাধুনিক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ও করছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে উন্নয়নকাজে কিছুটা গতি কমেছে- এটা ঠিক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকালও বলেছেন, করোনা থাকবে, অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে উন্নয়ন কাজ যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সবাই মিলে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উন্নয়ন কাজের গতি আগের মতো স্বাভাবিক করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীনসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে চেষ্টা চলছে।
করোনা পরিস্থিতিতে মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মেগা প্রকল্পগুলো নিয়েও নতুন করে ভাবা প্রয়োজন। অর্থাৎ যেসব প্রকল্প করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সক্ষমতা বাড়াবে কেবল সেসব প্রকল্পকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন- বিদ্যুতের প্রকল্পের চেয়ে এখন জরুরি হচ্ছে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প শেষ করা। তাই প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে গুরুত্ব নির্ধারণ করা। এরপর দ্রুত বাস্তবায়নে কর্মকৌশল তৈরি করা।
সূত্র মতে, করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার কঠোরভাবে দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করে। এতে মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ে। লকডাউনের প্রভাব থেকে প্রধান প্রধান প্রকল্পগুলোও রক্ষা পায়নি। যেগুলো তখন অর্থায়নের অনিশ্চয়তা, ডিজাইন, পরিকল্পনার ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার মধ্যে ছিল। আশা করা হয়েছিল, ৩০ মে লকডাউন আংশিকভাবে তুলে দেয়ার পর থেকে প্রকল্পগুলোর নির্মাণ কাজে গতি আসবে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় কিছুটা হলেও মন্থর হয়েছে উন্নয়ন কাজ।
সূত্র জানায়, আড়াই মাসের লকডাউন মেগা প্রকল্পগুলোকে মারাত্মকভাবে স্থবির করে দিয়েছে। বিদেশি কর্মী ও প্রকৌশলীরাও তাদের কাজে যোগ দিতে পারেনি। তাদের দেশে লকডাউন বহাল থাকা ও বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে।
অর্থনৈতিক কার্যক্রম খুলে দেয়ার মাধ্যমে গত জুন মাস থেকেই সরকার কাজে ফিরে গেছে। প্রধান প্রকল্পগুলোতে পূর্ণ গতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এ জন্য সরকার এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক ও ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে গতি আনার বিষয়ে এবং ক্ষতি পোষাতে আরো বেশি তহবিল ছাড় করার প্রসঙ্গে।
ভারতীয় সহায়তায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি আনার বিষয়ে গত সপ্তাহে ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগ (ইআরডি) বৈঠক করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে আগের কাজের গতি ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজে বের করতে গতকাল ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের এবং প্রকল্পগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সভায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, সিঙ্গল-পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম), ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প, কর্ণফুলি টানেল প্রকল্প এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অধিনস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণসহ অন্যান্য অগ্রাধিকার প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এগুলো ২৭টি প্রকল্পের অন্তভর্‚ক্ত, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ও চীন যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ঐক্যমতে পৌঁছেছিল। তখন বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পরবর্তি চার বছরের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে যেটা এখন পর্যন্ত কোন একক দেশ থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। চার বছর পার হয়ে গেলেও প্রতিশ্রুত অর্থের মাত্র চার ভাগের এক ভাগ অর্থ বাংলাদেশের পাইপলাইনে প্রবেশ করেছে।
প্রথমে চীনে এবং পরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করেছে। যে প্রকল্পটি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ বাস্তবায়ন করছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চীনের অর্থায়নে বর্তমানে বাংলাদেশ ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে জুন পর্যন্ত ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে চীন যেখানে তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার।
গতকালের সভায় বর্তমান প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি পরবর্তি অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চীনের কাছে তালিকা পাঠিয়েছে অর্থায়নের জন্য।
এই তালিকার মধ্যে রয়েছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ১ বিলিয়ন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়াল গেজ রেল লাইন, ১ দশমিক ৩ বিলয়ন ডলারের আখাউড়া-সিলেট মিটার গেজ লাইনকে ডুয়াল গেজে রূপান্তরকরণ প্রকল্প। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি সংরক্ষণ ও নদী সংস্কার বিষয়ক প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে চীন।
এদিকে বিগত অর্থবছরে ২৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ যে কোন মূল্যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে পুরোমাত্রায় গতি আনতে চাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সূত্র মতে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মিলে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৫৭ কেটি টাকার উন্নয়ন ব্যয় করতে পেরেছে যা ছিল মোট বরাদ্দের ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ইআরডির এশিয়া উইংয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী ইনকিলাবকে বলেন, চীনের সহায়তায় যে সব প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান আছে এবং পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলোর মাসিক বা ত্রৈমাসিক যে রিভিউ সভা হয়, সেই সভা হয়েছে। মূলতঃ প্রকল্প কাজের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।