Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে খুন-ডাকাতি

টার্গেট ব্যাংকপাড়া : ভাড়া করা হয় অ্যাম্বুলেন্স

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানীর মতিঝিলসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকপাড়াকে টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি ডাকাত চক্র। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তারা ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতি করে তারা। শুধু তাই নয়, ডাকাতি করতে গিয়ে খুনের মত ঘটনা ঘটাতেও পিছপা হয়নি ওই চক্রের সদস্যরা। তবে ওই চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

পুলিশ জানায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সুলতান হোসেন (৪৬)। তিনি দি ফ্যাশন বায়িং হাউজ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৪ জুলাই সকালে অফিসের উদ্দেশে বের হন তিনি। অফিস শেষে পুনরায় বাসায় না ফেরায় নিহতের ভাই পরদিন ১৫ জুলাই তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়া ওই দিন মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার হাইওয়ে রাস্তার ঢালে ঝোপের ভেতর একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে সুলতানের স্বজনরা তার পরিচয় শনাক্ত করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই ১৮ জুলাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। গত বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের সখিপুর থানার সরকার গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফরহাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে মো. জালাল উদ্দিন ওরফে সুমন নামের আরকে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন দুপুরে পুরানা পল্টন লাইন এলাকা থেকে কাজী মো. আকবর আলী, মো. সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর, মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে সবুজ, রুহুল আমিন ও মো. ইব্রাহীম ওরফে নেতা ইব্রাহীম ওরফে মেম্বার ইব্রাহীম নামের পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তারা সবাই ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি অ্যাম্বুলেন্স, র‌্যাবের দুইটি জ্যাকেট, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়্যারলেস সেট, একটি পিস্তল, ম্যাগজিন সংযুক্ত পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি খেলনা পিস্তল ও একটি পিস্তলের কভার উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গত ১৪ জুলাই সুলতান হোসেন মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে ব্যাগ হাতে বের হন। পরে পল্টন মোড় থেকে বিআরটিসি বাসে ওঠেন তিনি। এ সময় গ্রেফতারকৃত সাগর ও সবুজ বাসে উঠে পাশের সিটে বসে তাকে অনুসরণ করেন। তারা তাদের দলের আকবরকে ফোন করে বলেন বাসটি ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছে। তখন টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশে সোহেলের মাধ্যমে ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্স আকবর, ড্রাইভার সুমন, ফরহাদ ও মনির ওই বাসটি অনুসরণ করে পেছনে পেছনে আসতে থাকেন। বাসটি ফার্মগেট থামলে সুলতান বাস থেকে নেমে মিরপুরগামী বাসে ওঠেন। সাগর ও সবুজ তাকে অনুসরণ করে ওই বাসে উঠেন। তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফের আকবরকে জানান লোকটির কাছে অনেক বিদেশি ডলার আছে, কাজটি করতে হবে। তখন আকবর অ্যাম্বুলেনটি নিয়ে পুনরায় মিরপুরগামী বাসটিকে অনুসরণ করতে থাকেন। পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের সামনে গিয়ে বাস থামলে সুলতান বাস থেকে নামেন। তিনি বাস থেকে নেমে রাস্তার অপর পাশে গেলে সাথে সাথে আকবর তার দলবলসহ হাজির হন। এছাড়া নিজেদেরকে র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যান।
এ সময় আকবরের হাতে ওয়্যারলেস সেট, মনিরের গায়ে র‌্যাবের পোশাক, ফরহাদের গায়ে র‌্যাবের পোশাক এবং হাতে একটি হ্যান্ডকাফ ছিল। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে যাত্রা করা হয়। এ সময় সুলতান বুঝতে পারেন তারা র‌্যাবের সদস্য না, তখন তিনি চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। পরবর্তীতে সুলতানের হাতে থাকা ব্যাগটি তল্লাশি করেন এবং কোন ডলার না পেয়ে ডলার কোথায় জিজ্ঞাসা করেন ডাকাত দলের সদস্যরা। সুলতান ভয়ে ফের চিৎকার চেচামেচি করলে দুইদিক থেকে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে জোরে টান দিলে সুলতান মারা যান। এরপর তারা লাশসহ গাড়িটি নিয়ে গাবতলী-হেমায়েতপুর-সাভার হয়ে নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ান। গাড়িতে চালক ও লাশ রেখে সুকৌশলে সবাই পালিয়ে যান। পরে চালক সুমন একা লাশটিকে নিয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন। এক পর্যায়ে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের জঙ্গলে লাশটি ফেলে দেন তিনি।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের এডিসি মো. গোলাম সাকলায়েন জানান, ওই চক্রের সদস্যরা রাজধানীর মতিঝিলসহ দেশের ব্যাংকপাড়াগুলোতে অবস্থান করে সেই এলাকায় যারা হুন্ডির ব্যবসা করে, বেশি ডলার ভাঙায় ও ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকার লেনদেন করে; এমন লোকদের টার্গেট করে। পরবর্তীতে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তাদেরকে অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে মারধর করে। এক পর্যায়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা অর্থসহ যাবতীয় মালামাল ছিনিয়ে নেয়।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ডিসি মো. মশিউর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ওই চক্রের সদস্য মোট ছয় থেকে সাত জনই থাকে। তাদের মধ্যে কিছু থাকে ব্যাংকের মধ্যে, কিছু থাকে বাসে এবং কিছু তাকে মাইক্রোবাসে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো এক ব্যক্তি বের হলে তাকে টার্গেট করে তারা। পরে ওই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ