Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্নবিদ্ধ উন্নয়ন এবং কমিশন বাণিজ্য

এমপিদের ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

জাতীয় সংসদের এমপিদের জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নে প্রতিবছর বরাদ্দকৃত ৫ কোটি টাকা তাদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ নির্বাচন ও বাস্তবায়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। স্কিমের সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি ও আর্থিক বিশ্লেষণের সুযোগের অনুপস্থিতি বিদ্যমান এবং বাস্তবায়নের সময় অর্থ অপচয়ের ঝুঁকিসহ কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তারা বলেছে, এতে আত্মীয়-স্বজন তোষণ ও কর্মীদের মোটাতাজাকরণ ছাড়াও কমিশন বাণিজ্য হয়। এমপিদের প্রতিবছর দেয়া ৫ কোটি টাকা রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা, নির্বাচনে ভোট নিশ্চিত করার চেষ্টা ও অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রকল্পের কার্যকর তদারকি, প্রকল্পের সার্বিক মূল্যায়ন এবং সংসদ সদস্যের সততা ও স্বার্থের দ্ব›দ্ব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধির অনুপস্থিতি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে আরও উৎসাহিত করছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে।

গতকাল বুধবার ‘অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ: অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে এসব কথা জানাই টিআইবি। ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ; ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ৫০টি নির্বাচনী এলাকায় এই গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণাপত্রে বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতিমধ্যে পল্লী এলাকার উন্নয়নের জন্য এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবেদনও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এবং মাঠ পর্যায়ে দুইটি প্রকল্পের কিছু স্কিমের সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও ম‚ল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে স্কিম বাস্তবায়নের কাজে চ্যালেঞ্জ ও অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। তবে আইএমইডি ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত কোনো প্রকল্পেরই পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করেনি।
এছাড়া প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, জবাবদিহিতার অভাব, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার অকার্যকরতা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহার না করা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি, অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার, ট্যাক্স ফাঁকি, আঞ্চলিক গোষ্ঠীর প্রভাব, কার্যাদেশ বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, বাস্তবায়িত স্কিমের নিম্নমান এই প্রকল্পের সমস্যা হবে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা অনুযায়ী, কোনো কোনো এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের কাছে বছরে ২০-২৫% কাজ বিক্রি (অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট) হয় কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক নথিতে সাব-কন্ট্রাক্টের কোনো প্রমাণ রাখা হয় না। মাঠ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সার্বিকভাবে ৭৭.৮ শতাংশ সম্পূর্ণ এবং ১৭.৮ শতাংশ স্কিমে আংশিক কাজ হলেও ৪.৪ শতাংশ স্কিমের কোনো কাজ হয়নি।

ঠিকাদাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলের কর্মী/ পরিচিত/ আত্মীয় হলে কাজ চলাকালীন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে তদারকির ঘাটতি দেখা যায়। ঠিকাদারের থেকে কমিশন/লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং দলীয় নেতা-কর্মী/আত্মীয়-পরিচিত যারা ঠিকাদার তাদের মাধ্যমে ভোটের সময় ও ক্ষমতাসীন থাকাকালীন এলাকার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ফলে সংসদ সদস্যের একাংশ কর্তৃক তদারকির ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। স্কিম বাস্তবায়নকালীন কাজের মান সম্পর্কে অভিযোগ থাকলেও ৭৭.৬ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিযোগ দিলে তার নিষ্পত্তি না হওয়া, প্রতিবাদ বা সরাসরি অভিযোগ করলে হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হওয়া এবং ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের আত্মীয়/পরিচিত/দলীয় কর্মী হলে ভয়ে কোনো অভিযোগ করতে আগ্রহী না হওয়া।

নমুনায়িত ৫০টি নির্বাচনী আসনে সার্বিকভাবে ৩৪ শতাংশ স্কিমের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে চাহিদা ও মতামত নেওয়া হয়েছে। এই ৫০টির মধ্যে ২৯টি নির্বাচনী আসনের মোট স্কিমের ২৮.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য এলাকা পরিদর্শনের সময়ে সরাসরি এলাকাবাসীর চাহিদা ও মতামত নিয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সমন্বয় কমিটিতে এলাকার সাধারণ জনগণের তুলনামূলক কম প্রতিনিধিত্ব এবং কমিটিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চায় জনগণের মতামত নেওয়া হয় না।

টিআইবি বলছে, স্কিমের দরপত্র পাওয়া থেকে পুরো কাজ শেষ করে চ‚ড়ান্ত বিল ও জামানতের টাকা উত্তোলন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন অংশীজনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে (কখনো কখনো এককালীন) নিয়মবহির্ভ‚ত কমিশন বাণিজ্য বিদ্যমান। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য ই-টেন্ডার পদ্ধতিতে দরপত্র প্রক্রিয়া প্রবর্তন হলেও তদারকি প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অনিয়ম রয়েছে। আইনি প্রতিবন্ধকতা, মিথ্যা মামলার ভয় ও হয়রানির আশঙ্কায় অনিয়মের তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ ও আগ্রহের ঘাটতিসহ প্রতিবাদ এবং অভিযোগ না করার প্রবণতাও দেখা যায়। এসব দ‚র করতে এরই মধ্যে বাস্তবায়িত সংসদীয় আসনে থোক বরাদ্দের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পৃথকভাবে নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করে এগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ করাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিআইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ