পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেজর (অবঃ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামী টেকনাফ থানার সাবেক বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখন পুলিশের কলঙ্ক। সেনাবাহিনীর অবঃ মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তিনি এখন জেল হাজতে। আছেন র্যাবের রিমান্ডে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় চাকরীকালীন সময়ে তার সীমাহিন স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ বণিজ্য ও বেপোয়া মানুষ খুনের কারণে প্রদীপ সাধারণ মানুষ শুধু নয় তার বাহিনী পুলিশের কাছেও ঘৃণিত এবং কলঙ্কিত ও ঘৃণিত। তারা মনে করেন এটি ওসি প্রদীপের পাপের প্রায়চিত্ত। বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপের আত্মসমর্পণকালে কক্সবাজার আদালত চত্তরে পুলিশের মাঝে এরকম গুঞ্জন শুনাগেছে।
পাশাপাশি এতদিন ওসি প্রদীপকে যারা আশ্রয় দিয়েছিল প্রদীপের এই পরিনতির জন্য তারাও লজ্বিত এবং সঙ্কিত। আর যারা তার আশ্রয় প্রশ্রয়ে টাকা বানিয়েছে, যারা ক্ষমতার দাপট ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করেছিল তারাও কেউ আজ ওসি প্রদীপের পাশে নেই। বরং তারা এখন উল্টো ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়েচে বেশী।
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ক্রসফায়ারের পরিসংখ্যান। বিশেষ করে ক্রসফায়ারে বিপর্যস্থ হয়ে উঠে টেকনাফ জনপদ।
গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের একটি বড় অংশ সংঘটিত হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে। আর এই ক্রসফয়ারের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে শত কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য।
তার দাপটে এতদিন কথা বলতে পারেনি নির্যাতিত মানুষ। এখন কথা বলতে শুরু করেছে। তার বেপরোয়া চাঁদাবাজী, লুটপাট ও বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শত শত পরিবার গুলো ওসি
প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ শামলাপুর চেক পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন সেনাবাহিনীর অবঃ মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদখান। সে দিন ওসি প্রদীপের নির্দেশে শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক আইসি মামলার ১ নং আসামী লিয়াকত মেজর সিনহাকে নির্মমভাবে খুন করে বলে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার একাধিক রিপোর্টে উঠে আসে।
ওসি প্রদীপের চাকরি জীবনের অধিকাংশ সময়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় কাটিয়েছেন। ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার দায়িত্ব পালন করা কালীন সময়ে রিফাইনারি পণ্য আটক মামলায় বখস্ত হয়েছিলেন ওসি প্রদীপ।
কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া ও উখিয়া-টেকনাফে কাটিয়েছেন তিনি চাকুরী জীবনের অনেক সময়। আর এই সময়ে তিনি বিস্তর মানুষকে হয়রানী ও নির্যাতন করে ঘুষ বাণিজ্যের নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে এখন।
গত একবছর আগে ফরিদুল মোস্তফা নামের একজন সাংবাদিক ওসি প্রদীপের ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় চরমভাবে নির্যাতন করে মাদক মামলায় জেলে পাঠিছে ওসি প্রদীপ। এখনো কক্সবাজার কারাগারে জেল খাটছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। এতদিন ওসি প্রদীপের ভয়ঙ্কর আকশনের কারণে কোন সংবাদ মাধয়ম ও মুখ খুলতে পারেনি।
এদিকে ৩১ জুলাই টেকনাফ শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের গুলিতে
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় বের হয়ে আসছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে মেজর সিনহা হত্যার বিষয় নিয়ে ওসি প্রদীপের সাথে এসপির ফোন আলাপ ও আই সি লিয়াকতের সাতে এসপির ফোনালাপ। এসব ফোনালাপে কিন্তুু মাদক সংক্রান্ত কোন বিষয় উল্লেখ নেই বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় গত ৫ আগস্ট মেজর নহা মুহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা একটি হত্যা মামলায় প্রদীপ সহ ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।তার প্রেক্ষিতে ৬ অগাস্ট কক্সবাজার সফর করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমদ।
ওই দিন দুই বাহিনীর প্রধান কক্সবাজারে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে জানিয়েছেন এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তির যথাযথ শাস্তি হবে এবং এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের কোন দায় কোন বাহিনী নেবে না। তাঁরা সেদিন মেজর সিনহা নিহত হওয়ার স্থান টেকনাফ শামলাপুর মেরিন ড্রাইভ সড়কের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানেও গণমাধ্যমের সাথে একই কথা বলেছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কি হতে যাচ্ছে বিষয়টি আগেই হয়ত ওসি প্রদীপ আঁচ করতে পেরে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ৪ আগষ্ট অসুস্থতাজনিত ছুটি! নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যান ওসি প্রদীপ। কিন্তু বিধি বাম! কথায় আছে 'পাপ ছাড়েনা বাপকেও' সেখানে তিনি চট্টগ্রাম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
আত্মসমর্পণের জন্য তাকে অন্যান্য আসামীদের সাথে কক্সবাজার আদালতে হাজির করা হয় ৬ আগষ্ট বিকেলে। টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও তদন্তকারী সংস্থা র্যার তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায়।
এ প্রেক্ষিতে আবার আদালত বসে ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দদুলালের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
তবে রাত ৯ টার দিকে ওসি প্রদীপ সহ রিমান্ড মঞ্জুর করা ৩ জনকেও জেলহাজতে পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে রাতেই র্যাব কমান্ডার মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানান, রিমান্ড মঞ্জুর করা তিন আসামি কারাগারে থাকলেও যখন প্রয়োজন তারা তাদের হেফাজত নিয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত চালাবেন।
এদিকে ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর থেকে কারাগারে প্রেরণ করা পর্যন্ত তিনি একজন হত্যা মামলার অভিযুক্ত দুই নাম্বার আসামি তার কোন প্রমাণ দেখা যায়নি। তাকে হাতকড়া পড়ানো তো দূরের কথা, তিনি ছিলেন আদালতে বেপরোয়া এবং পেয়েছেন সব ধরনের পুলিশি নিরাপত্তা। এই বিষয় নিয়ে আদালতে উপস্থিত অভিজ্ঞ আইনজীবি এবং সচেতন মানুষের কাছে প্রশ্ন আসলে কি এই বিচার প্রক্রিয়া লোকদেখানো? আদৌ কি হবে ওসি প্রদীপের শাস্তি?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।