Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রিমান্ডে প্রদীপ-লিয়াকত ওসিসহ সাত পুলিশ বরখাস্ত : প্রদীপসহ তিন পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডে

কক্সবাজারে মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলা

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

৪ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসবাদের নির্দেশ এবং পলাতক দু’জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
মুখ খুলতে শুরু করেছে নির্যাতিত মানুষ : মামলার প্রস্তুতি
টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহার হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকতসহ ৩ জনের ৭ দিন করে পুলিশি রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ৪ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসবাদের নির্দেশ এবং পলাতক দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কক্সবাজারের একটি আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতে হাজির হয়ে আসামীরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর মামলায় বিকেলে ৭আসামীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামীদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে বিচারক এজলাস থেকে উঠে যান।
কিন্তু মামলা তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। র‌্যাব আসামীদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। বাদীর পক্ষের আইনজীবী এড. মোহাম্মদ মোস্তফা রিমান্ডের শুনানী করেন। এতে করে টেকনাফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (আদালত নম্বর-৩) এর বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন মাগরিবের পরে আবার আদালত বসিয়ে আসামী প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দদুলাল সহ তিনজনকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্য চারজন আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এসময় আদালত প্রাঙ্গনে র‌্যাব -১৫ এর সিও লে. কর্ণেল আজিম উদ্দিন আহমদসহ র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অবিজ্ঞ মহলের মতে এই ঘটনা নজির বিহীন। আসামিরা হলেন-টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া।

করোনাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম দফায় ৪ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৩ জন আসামিকে হাজত খানা থেকে কাঠগড়ায় আনা হয়। মামলার বাকী ২জন আসামি আত্মসমর্পণ করেননি। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন, মামলায় উল্লেখিত ৮নম্বর আসামি এসআই টুটুল এবং ৯ নম্বর আসামি কনস্টেবল মো. মোস্তফা নামে কোন পুলিশ সদস্য জেলা পুলিশে নেই।

আসামিদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া ও এডভোকেট রাখাল চন্দ্র মিত্র জামিন আবেদন শুনানি করেন। পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, এপিপি এডভোকেট সাঈদ হোসাইন, রাষ্ট্র পক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। গত ৩১ আগস্ট মেজর (অবঃ) সিনহা মো. রাশেদ নিহত হওয়ার পরদিন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২১পুলিশ সদস্যকে বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ৬ জন আসামি আদালতে সারেন্ডার করতে আসে। অপরদিকে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি ও মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে চট্রগ্রাম পুলিশ হেফাজতে রেখে চট্টগ্রাম থেকে এনে কক্সবাজার আদালতে সারেন্ডার করানো হয়।

মেজর (অবঃ) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলাটি টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেরের আদালতের আদেশ মতে, টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত একটি হত্যা মামলা হিসাবে ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রুজু করা হয়। যার নম্বর টেকনাফ থানা : ৯/২০২০, যাহার সিআর মামলা নম্বর : ৯৪/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)। দন্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি রুজু করার সাথে সাথে মামলার এজাহারভুক্ত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

মামলার ২নম্বর আসামি জেল হাজতে যাওয়া টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গত ৪ আগস্ট থেকে অসুস্থ হয়ে ছুটিতে যান। গতকাল দুপুরে তাকে চট্টগ্রাম পুলিশের একটি দল সেখানে পুলিশ হাসপাতাল থেকে আটক করে বিকেলে সরাসরি কক্সবাজার আদালতে হাজির করে।

এদিকে, আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় রুজু হওয়া মামলাটি তদন্তের জন্য র‌্যাব-১৫ এর কাছে গতকাল সকালে পাঠানো হয়। বিষয়টি টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি এবিএমএস দোহা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী টেকনাফ মডেল থানা কর্তৃপক্ষ এ মামলার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে, র‌্যাব-১৫ থেকে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে মামলার সার্বিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে খুন হওয়া মেজর (অবঃ) সিনহা মো. রাশেদ খানের বড়বোন ও মো. শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (৪২) বাদী হয়ে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ৯জনকে আসামি করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৫ আগস্ট সকালে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় মেজর (অবঃ) সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গী ও ৩১ জুলাই এর ঘটনায় টেকনাফ পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

গতকাল ৭ আসামি সারেন্ডার করতে আসার আগে বেলা ২ টা থেকেই কক্সবাজার আদালত চত্বর ও আশেপাশে চোখে পড়ার মতো বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আদালত চত্তর ছিল লোকেলোকারন্য। ওসি প্রদীপকে একটি সাদা মাইক্রোতে করে আগে পরে র‌্যাব পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আনা হয়।

টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার নানা ধরনের অপকর্ম নিয়ে নির্যাতিত মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। কেউ কেউ উল্লাস প্রকাশ করে ন্যায় বিচার ও শাস্তির দাবি করে। ইতোমধ্যে নির্যাতিত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধশত মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেই প্রদীপকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি বহরের আদালত চত্বরে পৌঁছালে কড়া নিরাপত্তার পরেও ভুক্তভোগী মানুষ তার শাস্তির দাবি করে ¯েøাগান দিতে দেখা যায়।

বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশ
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারাগারে যাওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল রাতে ইনকিলাবকে বলেন, কারাগারে যাওয়া সাতজনকে নিয়ম অনুযায়ী সাসপেন্ড করা হয়েছে। পরবর্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ হোসেন বলেন কারাগারে যাওয়ার পরই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সবকিছু আইন অনুযায়ী হবে। প্রদীপ কুমার দাশকে বুধবার ক্লোজ করা হয়। পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ বাকি ছয়জনকে ঘটনার পর ক্লোজ করা হয়েছিলো। হত্যা মামলায় নয় জনকে আসামি করা হয়। সাত জনকে কারাগারে পাঠানো হলো।

 

 

 



 

Show all comments
  • Salim Uddin ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
    They misuse their power.
    Total Reply(0) Reply
  • nasir ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
    সিনহা হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব RAB এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে দেওয়া হউক
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Hossen ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
    Fashi deta hobe r kono kotha nai, ay .......... golor karone deshar aj ay obostha.
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Forhad ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
    সিনহা রাসেদ হত্যার বিচারের সাথে সাথে পূর্বের ১৪৪ হত্যার বিচারও চাই
    Total Reply(0) Reply
  • Ak Akbar ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৯ এএম says : 0
    আজ কোথায় তুমাদের পাওয়ার তাই আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monju Alom ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৫০ এএম says : 0
    প্রদীপ রা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এত সাহস পায়, তাদের কে কি চিহ্নিত করা হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Bahar ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
    Why Bangladesh police dept is polluted bcoz of like this police officer prodip. There are many / more surrounding by you who can destroy your country, law and humanity. We want huge punishment for this guy.
    Total Reply(0) Reply
  • মাহেব ৭ আগস্ট, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
    আইন যারা বানায় ও আইনের রক্ষক হয়ে যারা আইনের খেলাপ করবে তাদের শাস্তি বেশি হওয়া দরকার যাতে সাধারণ মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ