Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবরি মসজিদ জবরদখল হিন্দুত্ববাদিদের জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২০, ৪:৪৮ পিএম

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জায়গার ওপর অবৈধভাবে রাম মন্দির নির্মাণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, গায়ের জোরে জবর দখলকে কখনো ইতিহাসে বৈধতা দেয়া যাবে না। বাবরি মসজিদের ইতিহাস কেউ মুছতে পারবে না। আগামী প্রজন্মের সকলেই জানবেন, পাঁশত বছর ধরে এই ভূমির ওপর মসজিদ ছিল এবং মুসলমানরা আযান ও নামায আদায় করে আসছিলেন। তিনি বলেন, বাবরি মসজিদের ওপর জবরদখল করে রাম মন্দির নির্মাণ হিন্দুত্ববাদিদের জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
কিন্তু বিশ্ববাসীর চোখের সামনেই হিন্দুত্ববাদিরা সন্ত্রাসী কায়দায় ঐতিহাসিক মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় এবং প্রতিবাদি কয়েক হাজার মুসলমানকে হত্যা করে। এরপর কয়েক যুগের আইনী লড়াইয়ে ন্যায় বিচারের ভরসাস্থল ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টও হিন্দুত্ববাদে প্রভাবিত হয়ে কোনরূপ প্রমাণপত্র ছাড়া ঐতিহাসিক এই মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের রায় দেয়। এই রায় যে আইনসম্মতভাবে হয়নি, বিশ্ববাসী দেখেছে। আদালতের এই আদেশ ইতিহাসে বেআইনী রায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদিরা যদি ভারতবর্ষের ইতিহাস জানতো, মসজিদ উৎখাত, এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন করার ভাবনা জাগলেও এ জন্য শতবার লজ্জিত হতো। কারণ দীর্ঘ কয়েক শত বছর মুসলমানরা ভারতবর্ষ শাসন করেছে। সভ্যতা, সংস্কৃতি ও সম্পদের অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাহীন এক বিশৃঙ্খল ভারতবর্ষকে তারা বিশ্ববাসীর কাছে অন্যতম সভ্য, শিল্পোন্নত ও প্রাচুর্যশালী দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। এই দীর্ঘ শাসনামলে মুসলিম শাসকরা ভারতের হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকারকে একদিনের জন্যও সামান্যতম খাটো করে দেখেনি। যদি মুসলমান শাসকরা সাম্প্রদায়িককতার চর্চা করতো, তাহলে দিল্লীতে কোন মন্দির যেমন খুঁজে পাওয়া যেতো না, তেমনি মুসলমানরাও আজ সংখ্যালঘু থাকতো না। আমরা মুসলিম শাসকদের এমন সম্প্রীতি ও ইনসাফপূর্ণ শাসনকার্যের জন্য গৌরববোধ করি।
তিনি বলেন, জাতিকে বহুধাবিভক্ত ও অন্তর্কলহে লাগিয়ে শাসন দীর্ঘস্থায়ী করার অসৎ চিন্তায় ইংরেজ শাসনকাল থেকেই অত্র অঞ্চলে সম্প্রদায়িকতার ঘৃণ্য রাজনীতির চর্চা শুরু হয়। ভারতের বর্তমান শাসক মহলও একই অপকৌশল থেকে মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িকতার চর্চা শুরু করে সেটাকে নিষ্ঠুরতায় ঠেকিয়েছে। এই বিজেপির শাসনকালে ভারতের মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বহু মুসলিম স্থাপনা আক্রান্ত হচ্ছে। মুসলমানদের ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনে আঘাত হানা হচ্ছে। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে। নাগরিকত্বহীন করার অপচেষ্টা চলছে। খাদ্যাভাসের মতো একান্ত মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। ভারতীয় মুসলমানরা বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদের আক্রমণের নিশানায় পরিণত হয়েছে। মাত্র ৬-৭ বছরের শাসনকালেই বিজেপি ভারতীয় মুসলমানদের জন্য চরম নিরাপত্তাহীন এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী চলমান নিষ্ঠুরতার একদিন অবসান ঘটবে। ভারতীয় মুসলমানরা তাদের সকল ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এবং বাবরি মসজিদের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত মন্দিরের অবসান ঘটে আবারো সেখানে আযান ও জামাত আদায় হবে। কখনোই হিন্দুত্ববাদিরা অবৈধ জবরদখলকে বৈধ ও স্থায়ী রূপ দিতে পারবে না। ইনসাফ ও সত্যের জয় অবধারিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ