Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেকনাফ পুলিশের হাতে মানুষ হত্যার লাইসেন্স!

দুই বছরে ১৪৪ কথিত বন্দুকযুদ্ধে খুন ২০৪

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫৮ পিএম | আপডেট : ৭:৫১ পিএম, ৩ আগস্ট, ২০২০

মাদক নির্মূলের নামে যেন টেকনাফ পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে মানুষ হত্যার লাইসেন্স! গত দুই বছরে শুধু টেকনাফে ১৪৪ টি কথিত বন্দুকযুদ্ধের সাজানো ঘটনা ঘটেছে। আর এসব বন্দুকযুদ্ধের নামে ওসি প্রদীপ কুমার ২০৪ জন মানুষ গুলি করে হত্যা করেছে।

সর্বশেষ ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় দেশজুড়ে এখন তোলপাড় চলছে।

এ ঘটনা নিয়ে গঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এবং সেনা বাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে ।

তদন্ত চলা অবস্থায় রবিবার রাতে সেনা কর্মকর্তাকে সরাসরি গুলি বর্ষনকারী সেই এসআই লিয়াকত সহ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ২০ জন পুলিশকে প্রত্যাহার করা হলেও অভিযোগ উঠেছে হত্যার নির্দেশদাতা টেকনাফ থানার আলোচিত ও বির্তর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখনো বহাল তবিয়তে স্বপদে বহাল রয়েছে।

এছাড়া প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) একটি টিম মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষে সদর দপ্তরে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে বলেও জানা গেছে। ইতোমধ্যে সেই রিপোর্ট দেশ বিদেশ থেকে প্রচারিত কয়েকটি অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে জানাগেছে, থানার ওসির নির্দেশ ছাড়া কোন অফিসার গুলি চালাতে পারে না। ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী বিবরণ থেকে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। গুলি করার আগে এসআই লিয়াকত তার মোবাইল ফোন থেকে ওসি প্রদীপের সাথে কথা বলে তার নির্দেশেই সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোন কথা বলতে না দিয়েই সরাসরি বুকে পর পর তিনটি গুলি করেন।

এদিকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) গোপন তদন্ত প্রতিবেদনে স্থানীয় টেকনাফ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন অপরাধীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, “হত্যার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা পুলিশ একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যায়ও কোনরূপ দ্বিধা করেনি।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে টেকনাফের বির্তর্কিত ওসি প্রদীপের কথিত ক্রসফায়ারের নামে বিচার বর্হিভূত গণহত্যার কারণে পুলিশ যে কাউকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করছে না। যার শেষ পরিণতি মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন।

অভিযোগ রয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর ওসি প্রদীপ টেকনাফে যোগদান করেন। এর পর থেকে গত দুই বছরে শুধু টেকনাফে ১৪৪টি কথিত বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব বন্দুকযুদ্ধের নামে ওসি প্রদীপ কুমার ২০৪জনকে গুলি করে হত্যা করেছে।

মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ট্যাগ লাগিয়ে নিরীহ এবং অনেক ধনাঢ্য লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে মোটা অংকে অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। যারা টাকা দিতে পারে না তারাই ভাগে জুটে ক্রসফায়ারের নামে নির্মম মৃত্যু। অভিযোগ আছে অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে খুশী হতে না পেরে তাদের বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে তাদেকে খুন করেছে ওসি প্রদীপ।

জানাগেছে মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সকে অপব্যবহার করে টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মেতে উঠেছেন বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে। বিএনপির আমলে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর আশির্বাদে চাকুরীতে যোগ দিয়ে নিজের কুকীর্তি আড়াল করতে তিনি এখন রূপ পাল্টিয়ে হয়েছেন মহা আওয়ামী লীগ।

এদিকে মেজর (অবঃ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন হত্যার ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ যেই বিবৃতি দিয়েছে, সেটির সঙ্গে ডিজিএফআইর করা মাঠ প্রতিবেদনটি সাংঘর্ষিক। পুলিশ দাবি করেছে, পুলিশের একটি বহর মেজর (অবঃ) সিনহার গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অস্ত্র বের করেন। এ সময় আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি করে। এটি অনেকটা পুলিশের ওই বেপরোয়া খুনকে আড়াল করারই শামিল।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর (অবঃ) সিনহা তার অস্ত্র বের করেননি। যখন তাকে গাড়ি থেকে বের হতে বলা হয়, তখন তিনি হাত উঁচু করে বের হন। এরপর কোনো বাতচিত ব্যতিরেকেই তাকে গুলি করে হত্যা করেন পুলিশবহর প্রধান এসআই লিয়াকত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও ৪৫ মিনিট ধরে মেজর (অবঃ) সিনহাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখে পুলিশ, “পুলিশ কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃতদেহ হাসপাতালে আনা একটি পৈশাচিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।”

এর আগে শনিবার রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে তদন্ত শেষে একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় সংবাদ মাধ্যমকে। ঘটনার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিবরণের সাথে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের মিল পাওয়া গেছে।

ডিজিএফআই’র প্রতিবেদনের “মন্তব্য” বিভাগে বলা হয় যে, টেকনাফ পুলিশের মধ্যে মাদক নির্মূলের নামে এক ধরণের “হত্যার প্রতিযোগিতা” বিদ্যমান। এতে বলা হয়, “এই প্রতিযোগিতা অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও আরও দিবে বলে ধারণা করা যায়।”



 

Show all comments
  • শহিদুল ইসলাম ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৩২ পিএম says : 1
    কিছু বলার নাই
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৩৩ পিএম says : 3
    আশাকরি আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী সততা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবে
    Total Reply(0) Reply
  • ইমতিয়াজ ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৩৩ পিএম says : 1
    সবকিছুর জন্য সঠিক তদারকি হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • ইমতিয়াজ ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৩৫ পিএম says : 2
    তথ্য দেখে তো সেরকমই মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • হেলাল উদ্দিন ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৩৬ পিএম says : 0
    কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন এই ঘটনার শিকার না হয়
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন আহমেদ ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৪৭ পিএম says : 3
    এই ওসি অত্যন্ত বিতর্কিত কর্মকর্তা। তার কঠোর বিচার হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির আহমেদ ৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৪৮ পিএম says : 3
    ক্রসফায়ার অচিরেই বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • habib ৩ আগস্ট, ২০২০, ৬:১৩ পিএম says : 0
    Musolman tomra ghumai thako...era sobai indian raw er agent...
    Total Reply(0) Reply
  • RUBAIYAT FERDOUS ৩ আগস্ট, ২০২০, ৬:৪৮ পিএম says : 10
    রিপোর্ট টি পড়েছি। ইয়াবা ব্যবসা করে সেখানে অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে ইয়াবা দিয়ে সয়লাব করে দিচ্ছে। ওখানে যারা যায়, সবাই ম্যানেজ হয়ে যায়। একমাত্র প্রদীপ হয় নাই। যাই হোক বিষয়টি তদন্তাধীন। প্রদীপ আমাদের সন্তানদের ইয়াবার হাত থেকে বাচাবার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। ওখানের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অনেক রকম রিপোর্ট করাচ্ছে।
    Total Reply(2) Reply
    • Mohammed Shah Alam Khan ৩ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪০ পিএম says : 0
      এখানে পুলিশের গোয়েন্দা বলছে থানার ওসির নির্দেশে গুলি ছোড়া হয়েছে। তাছাড়া মেজরের কথা বলা হয়েছে তিনি হাত উপরে তুলে গাড়ি থেকে বের হবার পর তাঁর সাথে কোন কথা না বলেই তাঁকে গুলি করা হয়েছে।
    • ৩ আগস্ট, ২০২০, ১১:৪৮ পিএম says : 0
  • RUBAIYAT FERDOUS ৩ আগস্ট, ২০২০, ৭:০৮ পিএম says : 8
    বাংলাদেশ কে ইয়াবা দিয়া সয়লাব করে দিয়েছে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে শক্তহাতে দমন করেছে ইন্সপেক্টর প্রদীপ। আমরা ক্রস ফায়ার চাই বলেই পুলিশ এইসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের শক্ত হাতে দমন করছে। প্রেসিডেন্ট দুতার্তে তার দেশে ডাইরেক্ট অর্ডার দিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যা করার জন্য। এইসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা লোকাল পত্রিকার রিপোর্টারদের উচ্ছিস্ট দিয়ে অনেক রকম রিপোর্ট বহুদিন ধরে করে যাচ্ছে। আমি তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলছি না। কক্সবাজারে যারা আগে মাছ ধরে খেত, এরা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। এদের সন্তানরা গ্রুপ তৈরী করে নাম দেয় "রিচ কিড গ্রুপ"। ইয়াবার সাথে জড়িত কম বেশী সবাই।
    Total Reply(2) Reply
    • Mohammed Shah Alam Khan ৩ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪১ পিএম says : 0
      দালালী করুন কোন আপত্তি নেই। তবে মুসলমান হয়ে অপরাধীকে বাচানোর জন্যে মিথ্যা কথা বলাটা পাপ নয় কি??
    • ৪ আগস্ট, ২০২০, ৮:২২ এএম says : 0
  • Mahmudul ৩ আগস্ট, ২০২০, ৯:১১ পিএম says : 0
    Government should be stern action who are responsible for illegal crossfire . stop so called crossfire.
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Ahmed ৩ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪০ পিএম says : 0
    অপেক্ষায় রইলাম বিচার বিভাগের দিকে তাকিয়ে
    Total Reply(0) Reply
  • Rahim ৪ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৫ এএম says : 0
    ওসি প্রদীপ সত্যিকারের মাদক নির্মূল করতে চাইলে টেকনাফের মাদক গড ফাদার খ্যাত এমপি বদি ও তার পরিবারের তালিকা ভূক্ত যারা ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের কাউকেতো সে ক্রসফায়ার দেইনি !! এই যাবত যাদের ক্রসফায়ার দিয়েছে সবার কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে । অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে । মায়ানমারের লোকজন টেকনাফের লোকজনের চেয়ে অনেক ভাল ছিল । টেকনাফের লোকজন ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনা ! টেকনাফের লোকজনের কাছ থেকে ওসি প্রদীপ না জানে মত খোঁজ নিয়ে দেখুন তার অপরাধের ইতিহাস খুলে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ৪ আগস্ট, ২০২০, ৭:৫৫ এএম says : 0
    Ashole eai dhorone kisu polisher shorkarer bivinno gurottopurno daitto nia tara nijera ebong oshotder protection dia valo shadharon niriho jonogonke arthik dik dia shorbo shanto korse noytaba tader hotta kore moloto muslim nidhone mete uthese era hoyto varotio shib shenader eai deshio agent kina balo khotie dekhar dorkar...
    Total Reply(0) Reply
  • parvez ৪ আগস্ট, ২০২০, ৯:১৮ এএম says : 0
    একজন ওসিকে যদি কেউ বোকা বলে, বিশ্বাস হবে না। সুতরাং সে জানে তার হাত কত লম্বা, সে কতটুকু শামাল দিতে পারবে। অতএব, বিচারের বানী/দাবী নিভৃতে কাঁদবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৪ আগস্ট, ২০২০, ১১:২৫ পিএম says : 0
    থানার ওসি এই হত্যাকান্ডের জন্যে দায়ী এটা এই সংবাদ পড়লেই বুঝা যায়। তারপরও ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়নি এটা একটা আশ্চার্য জনক ঘটনা। এরকারন বের করাতে হলে সাংবাদিকদেরকে কঠিন হতে হবে এবং সত্য সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে অবগত করাতে হবে। এটা করতে পারলেই সরকার পুলিশকে বাঁচাতে চাইলেও বাঁচাতে পারবেনা কারন জনগণ বিস্তারিত জেনেগেছে এবং সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের পুলিশদেরকে সত্য কথা বলা এবং সততার সাথে চলার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ