পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চামড়া শিল্পে সিন্ডিকেট নৈরাজ্য দুস্থ ও নিরন্ন মানুষে পেটে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। অসাধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের হাজার হাজার কওমি মাদরাসা কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ আয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এবার কোরবানির চামড়ার ন্যায্য মূল না পাওয়ায় মাদরাসাগুলো আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কোনো কোনো মাদরাসায় সংগ্রহকৃত কোরবানির পশুর চামড়া মাত্র তিনশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের দিন এবং গভীর রাত পর্যন্ত মাদরাসার ছাত্ররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করে রিকসা ও ভ্যান ভাড়া দিয়ে মাদরাসায় জমা করেছে। অনেক মাদরাসায় জমাকৃত এসব চামড়া ন্যায্য মূল্যে এখনো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। একাধিক মাদরাসার শিক্ষকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
চামড়াখাতকে রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ট্যানারির মালিকদের কোরবানি ঈদের আগেই প্রায় চারশ’ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ দিয়েছে। তার পরেও ট্যানারির মালিকরা একশ্রেণির দালাল ফড়িয়াদের মাধ্যমে কম দামে চামড়া কিনছে।
একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে বন্যায় দেশের অর্থনীতিতে চলছে ভাটার টান। মাদরাসার এতিম দুস্থ অসহায় অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীরা কোরবানির চমড়া বিক্রির টাকার মাধ্যমে উপকৃত হয়। চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় মাদরাসার এতিম ও অসহায় ছাত্র ছাত্রীরা আজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার পরিকল্পিতভাবে চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করছে। কোনোভাবে দায় এড়াতে পারবে না সরকার। কোরবানির পশুর চমড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ আজ রোববার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা চমড়া শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষা এবং মাদরাসার গরিব এতিম অসহায় ছাত্রদের হক্ব আদায়ে সরকারি উদ্যোগ ন্যায্য মূল্যে জরুরিভিত্তিকে চামড়া ক্রয়ের জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা সারওয়ার কামাল আজিজী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার আজ রোববার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, চামড়া শিল্পে সিন্ডিকেট নৈরাজ্য দুস্থ ও নিরন্ন মানুষে পেটে চরমভাবে আঘাত হেনেছে। অসাধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের হাজার হাজার কওমি মাদরাসা কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ আয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। নেতৃদ্বয় বলেন, এবার কোরবানির চামড়ার ন্যায্য মূল না পাওয়ায় মাদরাসাগুলো আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। চামড়া খাতে বিপর্যয়কে কওমি মাদরাসা ধ্বংসের একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। তারা বলেন, এর লজ্জা ও ব্যর্থতার দায়ভার সরকার কোনভাবেই এড়াতে পারে না। নেতৃদ্বয় গরিবের হক বিনষ্টকারী এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। সিন্ডিকেট চক্রের কাছে মাথানত করে সরকার এ শিল্পকে শেষ করে দিয়েছে। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে রক্ষায় সরকার ব্যর্থ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চামড়ার দাম নির্ধারণ ও সংঘবদ্ধ চক্রের হাত থেকে চামড়াশিল্পকে রক্ষার দাবি জানিয়েছিলেন ইসলামপ্রিয় জনতা ও মাদরাসার শিক্ষকরা। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে একটি চক্র চামড়া খাতে নৈরাজ্য করে যাচ্ছে। ফলে চামড়াশিল্প ও বহু দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেইসাথে দেশের এতিম ও গরিব জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ রোববার এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, চামড়ার ন্যায্য দাম নির্ধারণ ও এ শিল্পখাত রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এবছরও মাদরাসাগুলো পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে হাজার হাজার দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এবার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছে তা খুবই কম। এবছর গরুর চামড়া যে দামে বিক্রি হয়েছে বিগত ২০১৩ সালে একটি খাসির চামড়া এরচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করতে সিন্ডিকেটভিত্তিক কাজ চলছে। এ সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দিতে হবে। তিনি বলেন, চামড়ার মূল্য বর্গফুট হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়া হলেও সেভাবে কেউ চামড়া কিনছে না। তিনি চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এখন গরুর চামড়া ২০০ টাকায় নেমে এসেছে। এই প্রবণতা জনপ্রিয় বাংলাদেশের চামড়া শিল্প ধংস হবে এবং বিদেশী কোম্পানীর পোয়াবারো হবে। সিন্ডিকেট চক্রের কারণেই কোরবানির চামড়া নিয়ে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, গুটি কয়েক ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটে কোরবানির কাঁচা চামড়া ব্যবসায় ধস নামছে। ভ্রান্ত নীতি কৌশলের কারণে এবার চামড়া খাতে অনাকাংখিত বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। পীর সাহেব বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতার কারণে সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প ধ্বংস হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ আজ সকালে নগরীর ভাটারাস্থ সাঈদনগরে ওলামায়ে কেরামের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, এক সময়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিযোগ্য শিল্প চামড়াকে সরকার আজ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। সরকারের ইচ্ছা থাকলে চামড়া শিল্পকে অবশ্য রক্ষা করা যেতো। এদেশে এ শিল্পের কাঁচামাল চামড়ার পর্যাপ্ততা থাকার পরেও সরকার এটাকে কাজে লাগাতে পারছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। সারা বছর যে পরিমাণ পশুর চামড়া সংগৃহিত হয় তার অর্ধেকের যোগান হয় ঈদুল আজহার সময়। অথচ এ সময়টাতে সরকারের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট গুলো এমনভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে যেন তাদের চামড়ার কোনো প্রয়োজনই নেই। তিনি বলেন, কাজেই চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে বাধ্য করতে হবে এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, মুফতি ফরিদুল ইসলাম, মুফতি নিজাম উদ্দিন, মুফতি আলী মুর্তজা ও মুফতি হাবিবুল্লাহ।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজিপুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিগত কয়েক বছর থেকে অব্যাহত ভাবে চামড়ার দরপতন ঘটানো হচ্ছে। সিন্ডিকেট করে শুধু চামড়া শিল্পটিকেই ধ্বংস করা হচ্ছে না বরং গরিব দুখীর হক্বও অন্যায় ভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। অপরদিকে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে যাকাত ও কোরবানির চামড়া খাতের আয় থেকেই গরিব ছাত্রদের পড়া লেখার ব্যয় নির্বাহ করা হয়ে থাকে। চামড়ার দরপতন ঘটিয়ে এই জায়গাটাতেও কুঠারাঘাত করা হয়েছে। নেতৃদ্বয় বলেন, সরকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোন ভাবেই এই অবিচারের দায় এড়াতে পারে না। দুনিয়াতে এই অবিচারেরর প্রতিকার না হলেও পরকালে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এর জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে। তারা আরো বলেন এমনিতে দেশে চলছে করোনা মহামারি ও বন্যার মত কঠিন দুর্যোগ, এহেন সঙ্কটেও যারা গরিব মানুষের হক্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলাম চামড়ার মূল্যে ধসের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন দিন দিন চামড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় বিশেষ করে কওমি মাদরাাসাগুলো সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ীসহ কিছু কুচক্রি মহল সিন্ডিকেট করে মাদরাসাগুলোর ক্ষতি করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইারাসের কারণে পবিত্র রমজান মাসে মাদরাসাগুলো বিত্তবানদের যাকাত ও অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে বানিজ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।