Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চোরাকারবারিদের পোয়াবারো

উজানের ঢল

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেও থামানো যাচ্ছে না গরু পাচার। পাচারের জন্য নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন ফন্দি-ফিকির। উজান থেকে নেমে পাহাড়ি ঢলে বন্যার সুযোগ এবং কোরবানিকে কেন্দ্র করে বেড়েছে পাচার। নদীপথে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে গরু-মহিষ। কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকার গরুর হাটগুলোতে পাচার করা ভারতীয় গরু-মহিষ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় এসব পশুর কারণে দেশীয় খামারিরা পশুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গরুর পাচার রোধে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদে প্রতিদিন ভেসে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ। দৈ খাওয়া, সাহেবের আলগা, নারায়ণপুর, রলাকাটা, কচাকাটাসহ কয়েকটি সীমান্তে নদীপথে পশু পাচার করছে দু’দেশের চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। পরে সীমান্তবর্তী যাত্রাপুরসহ কয়েকটি হাটে চিহ্নিত ভারতীয় গরু-মহিষ বিক্রির জন্য সারিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা তুলনামূলক সস্তায় এসব পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বন্যার কারণে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রচুর গরু-মহিষ বাংলাদেশে ভাসিয়ে পাচার করছে চোরাকারবারিরা। যাত্রাপুর হাটে ৫০-৬০ জন ভারতীয় গরুর কারবার করেন। শনি ও মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাট বসে। প্রতি হাটে ৪০০-৫০০ ভারতীয় ছোট গরু (বাছুর) ও ২০০-৩০০ বড় গরু ও মহিষ ওঠে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় পুরো হাট কাদায় থৈ থৈ। এরই মধ্যে গরু বেচাকেনা হচ্ছে। অবশ্য ভারতীয় বড় গরু ও মহিষগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে টিনের চালাঘরে। আর দেশি গরুসহ ভারতীয় ছোট গরুগুলো খোলা আকাশের নিচে বেচাকেনা হচ্ছে। ভারতীয় গরুর গায়ের এক ধরণের বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। পাচারকালে নদীতে গরু ভাসিয়ে দেয়ার আগেই গরুর মালিকের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে এসব চিহ্ন দেয়া হয়।

ব্রহ্মপুত্রের চর কালির আলগার গরু ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, নদী পথে ভারতের ব্যবসায়ীরা গরু ভাসিয়ে দেয়। নৌকা বা কলাগাছের ভেলায় কামলারা অপেক্ষা করে। তারপর গরু ধরে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়। আমরা কমিশনের ব্যবসা করি। বিক্রি করে টাকা পাঠিয়ে দেই। তিনি জানান, গরুর গায়ে চিহ্ন দেখে মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তারা। একজোড়া গরু ধরে বুঝিয়ে দেয়ার পর কামলা বা রাখালদের ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয়। অবশ্য যাত্রাপুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি জনি শেখ দাবি করেছেন, সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে পাচার কমে গেছে। যেসব গরু দেখা যাচ্ছে, তা অনেক আগেই ভারত থেকে আনা। খামারিরা লালন পালন করে হাটে তুলছেন।

এদিকে বিজিবি মাঝেমধ্যে গরু আটক করলেও থেমে নেই পাচার। গত জুন মাসে বিজিবি ১৬৮টি গরু আটক করে। শনিবারও আটক করা হয় ২৫টি গরু। বিজিবির ২২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, কোরবানির সময় বন্যা হওয়ায় পাচারকারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বন্যার কারণে বিএসএফ ও বিজিবির পক্ষে অনেক পোস্টে সব সময় অবস্থান করা সম্ভব হয় না। সেই সুযোগে গরু পাচারের চেষ্টা হয়। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে গরু পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। নদীপথে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত গরু আটক করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সীমান্তপথে ভারতীয় গরু পাচার রোধে বিজিবি, পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষে সমন্বিত কাজ করা হচ্ছে। দেশিয় গরুর খামারিরা যেন সঠিক মূল্য পায় সেজন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তের ইউনিয়নগুলোতে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সভা ও মাইকিং করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ