Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনায় বিক্রি হচ্ছে করোনা সার্টিফিকেট

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ‘ভুয়া সার্টিফিকেট’ দেয়ার সঙ্গে জড়িত জেকেজি হেলথকেয়ার নিয়ে দেশজুড়ে যখন সমালেচনার ঝড় বইছে, তখনই খুলনায় করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ‘বিক্রির’ খবর পাওয়া গেছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে গড়ে উঠেছে একটি জালিয়াতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করছে। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, সাধারণ চিকিৎসার জন্যও এখন হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হতে গেলেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়। এই সার্টিফিকেট ছাড়া রোগী ভর্তি তো দূরের কথা অনেক সময় চিকিৎসাই দিতে চায় না তারা। এর বাইরে কর্মস্থল, পোশাক কারখানা এবং ভ্রমণের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে করোনার টেস্ট এখানে সময় সাপেক্ষ এবং উপসর্গ ছাড়া পরীক্ষা করানো কঠিন। আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। তারা করোনা সার্টিফিকেটের স্টাইল জাল করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছে। তারা শুধু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ সার্টিফিকেটও দিচ্ছে। পজিটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ আবার অফিসে না গিয়ে বাসায় ছুটি কাটানোসহ নানা সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুয়া সার্টিফিকেট অনুসন্ধানে খুমেক হাসপাতালের লিফটম্যান পদে কর্মরত নওশাদ নামে ব্যক্তির মাধ্যমে করোনা নেগেটিভ সনদ দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এই সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা রয়েছে সম্পূর্ণ ধরাছোঁয়ার বাইরে। নওশাদ মহানগরীর ২৬ বি কে রায় ক্রস রোডে করোনা পজিটিভ তানিয়া নামে এক গৃহবধূকে গত ১২ জুলাই তাকে নেগেটিভ সনদপত্র দেন। ওই নারীর নেগেটিভ রিপোর্টে স্যাম্পল আইডি নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে কেএমসি-২০০২৩ এবং স্যাম্পল গ্রহণের তারিখ ৭ জুলাই, টেস্টের তারিখ ১২ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মহানগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার ঠিকানায় শামীম আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ৮ জুলাই খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারের স্যাম্পল টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট এলেও নওশাদ একদিন আগের তারিখে অর্থাৎ ৭ জুলাই তারিখে আইডি নম্বর কেএমসি-১৯০৩১ দেখিয়ে পজিটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ উল্লেখ করেছে।

শামীম আহমেদ ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নওশাদ তার পরিচিত ছোট ভাই। তার মাধ্যমেই নেগেটিভ রির্পোট পেয়েছেন। গৃহবধূ তানিয়া জানান, হাসপাতালেই নওশাদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, সেই পরিচয়ের মাধ্যমেই তার কাছ থেকে তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন। সঠিক না নকল রিপোর্ট তা তার জানা নেই। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে নওশাদ অস্বীকার করেন।

এদিকে খুমেক হাসপাতাল আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও আইসোলেশন ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মিজানুর রহমান জানান, কেএমসি-১৯০৩১ এবং কেএমসি-২০০২৩ স্যাম্পল আইডি নম্বর দুটোই ভুয়া। এই নম্বরে কোনো রিপোর্ট নেই। তিনি অসাধু চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে, খুলনায় করোনা সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন গতকাল এ তথ্য জানান। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিনিধি রয়েছে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুপ আলী বলেন, সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের সবাই নিম্নশ্রেণির কর্মচারি।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ