পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেফতার করতে দেশের সব জায়গায় অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব। সাহেদের মত প্রতারণায় অন্য যারা জড়িত তাদেরও আনা হবে আইনের আওতায়। গতকাল র্যাব সদর দফরে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যাম শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণা, ঠকবাজির জগতে আইডল সাহেদ। সাহেদ প্রতারণাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের ভাবনার অতীত। প্রতারণাকে ব্যবহার করে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঠগবাজি করে কীভাবে এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যা একটি অনন্য খারাপ দৃষ্টান্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে বলে র্যাব কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। যাতে পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য সারাদেশসহ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সাংবাদিক, রাজনীতিক, আমলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাহেদের ছবি থাকার বিষয়ে র্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, সাহেদের ছবির বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। কারও সঙ্গে কারও ছবি থাকা মানে এই নয় যে, তিনি তার পৃষ্ঠপোষক। যে কারও সঙ্গে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মানুষ ছবি তুলতে চাইবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার মানে এই নয় যে, ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাহেদকে একজন প্রতারক জেনেও তার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন কারও সঙ্গে ছবি তোলেন সেটি নেহাদ সৌজন্যবশত। এর পেছনে যদি কারও পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, সেটি নিশ্চয়ই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখবেন।
র্যাব কর্মকর্তারা আরো বলেন, আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত ছিল, যাতে সে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারে, তাই সে দেশ থকে পালিয়ে যেতে পারেনি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সাহেদ যেকোনও সময় গ্রেফতার : যে কোন সমর্য় সাহেদকে গ্রেফতার করা হবে। পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সারাদেশের পাশাপাশি সীমান্তেও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে, যাতে কোনোভাবেই সাহেদ দেশ ত্যাগ না করতে পারে। আশিক বিল্লাহ বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট করে সবাইকে জানাতে চাই, সাহেদের পাসপোর্ট আমাদের কাছে। আমরা জব্দ করেছি। সে যদি দেশ ত্যাগ করতে চায়, তাহলে সেটা তার জন্য অবৈধ পন্থা হবে। সে যাতে কোনোভাবেই দেশত্যাগ না করতে পারে, সেজন্য আইন-শৃংখলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদ গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতো। তার গানম্যান ও তাদের অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার ৫ থেকে ৭জনের গানম্যানের দল ছিল। তাদের সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের অস্ত্রের উৎস ও অস্ত্রেও বৈধতা খতিয়ে দেখছি।
তিনি আরো বলেন, সাহেদ পাওনাদারদের যে চেক দিতো, তাতে একেক চেকে একেক স্বাক্ষর করতো। সত্যিকারের স্বাক্ষর সে দিতো না— যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে। এসব চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হয়েছে। এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিজ্ঞ ব্যাংকাররাও অবাক হয়েছেন। সাহেদ তার বৈধ চেকে অবৈধ স্বাক্ষর করেছে। অর্থাৎ ব্যাংকে তার যে স্বাক্ষর রক্ষিত আছে, সেই স্বাক্ষর না দিয়ে ভিন্ন স্বাক্ষর দিতো। তাই পাওনাদাররা ব্যাংক থেকে ওই চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেনি। সব চেক ব্যাংকে ডিসঅর্নার হয়েছে। সারাদেশে সাহেদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত র্যাব অর্ধশতেরও বেশি মামলার খবর পেয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রতারণার মামলা। তার বিষয়ে র্যাব আরও খোঁজ খবর নিচ্ছে।
রিজেন্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও জাল সার্টিফিকেট : সা¤প্রতিক সময়ে র্যাবের কাছে আরও অভিযোগ রয়েছে, রিজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জাল সনদ দেয়া হতো। র্যাবের পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। যে সনদগুলো শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে, তা জাল। এই সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষা জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মৌলভীবাজারে খোঁজ মেলেনি সাহেদের : সাহেদ মৌলভীবাজারে অবস্থান করছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত সোমবার দিবাগত রাতভর তৎপর ছিল জেলার সীমান্ত এলাকায়। সোমবার সাহেদের ফোন ট্র্যাক করে তার খোঁজে জেলাজুড়ে তল্লাশি চালায় র্যাব ও পুলিশ। তবে সাহেদের কোনও খোঁজ মেলেনি। জেলার সব সীমান্তে চেকপোস্ট, রিসোর্ট, হোটেল-মোটেলে বিশেষ নজরদারি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
কমলগঞ্জ থানার একজন কর্মকর্তা জানান, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা কেলেঙ্কারি ঘটনার পলাতক প্রধান আসামি সাহেদ এ পথে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্ত পথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈইলাশহরে যেতে পারে এমন সংবাদ রয়েছে। তাই সতর্কতাস্বরূপ যানবাহনে তল্লাশি করা হয়।
বিদেশিদের করোনা চিকিৎসার তালিকায়ও ছিল রিজেন্ট হাসপাতাল : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিদেশি ক‚টনীতিক ও নাগরিকদের জন্য সরকার থেকে চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দু’টি ছিল সরকারি আর দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ছিল আলোচিত মো. সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল। সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটিয়ে সাহেদ বিদেশিদের করোনা চিকিৎসার জন্য রিজেন্ট হাসপাতালকে তালিকাভুক্ত করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে চারটি হাসপাতালের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, তার মধ্যে ছিল রিজেন্ট।
ব্যাংক হিসাব ও রেকর্ডপত্র তলব
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিম স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। এর আগে সাহেদ করিমের অনুসন্ধানে তিন সদস্যের পৃথক অনুসন্ধান টিম গঠন করে কমিশন।
টিমের প্রধান আবু বকর সিদ্দিক ইনকিলাবকে বলেন,স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রধানের কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার ডা. সাবরিনার দুর্নীতি অনুসন্ধানে পৃথক টিম তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত সাহেদকে ধরতে সাতক্ষীরায় র্যাব-পুলিশের অভিযান
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সিআর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে ধরতে সাতক্ষীরায় র্যাব-পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে এই অভিযান চালাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শহরের কামালনগর এলাকার একটি ফ্লাটে গত রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। সাতক্ষীরায় অবস্থানকালে সাহেদ করিম যেখানে থাকতো। তিনি বলেন, ঢাকা যুগ্ম জজ ১ম আদালতের সিআর ১৪৮৮ নং মামলায় সাহেদের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার ওয়ারেন্ট পেন্ডিং রয়েছে সাতক্ষীরা সদর থানায়। পুলিশ সীমান্তে যাওয়ার পথে বিভিন্ন গাড়ি তল্লাশীসহ অভিযান অব্যাহত রখেছে।
খুলনা র্যাব-৬ সাতক্ষীরা ক্যা¤প কমান্ডার সিনিয়র এএসপি বজলুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, সাহেদ যাতে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য চিরুনি অভিযান চলছে। সন্দেহজনক মাইক্রো-প্রাইভেটকার তল্লাশি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে। একই সাথে বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।