পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদুল আহজার নামাজ আদায় ছাড়াও পশু কোরবানি মুসলমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাজধানীতে পশুর হাট মানেই ব্যাপক লোকসমাগম-হইচই। যা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। এ কারণে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম শহরে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছে। গত শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি হাটের পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয়।
কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রতিবছরের মতো দুই সিটি কর্পোরেশন অনেকগুলো যায়গায় হাট বসানোর উদ্যোগ নিলেও পরে তা সীমিত করে আনেন। এর মধ্যে অনলাইনে গরু বিক্রি করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন গত ১১ জুলাই ডিজিটাল হাট নামের একটি প্লাটফর্ম চালু করেছে; যার সঙ্গে রয়েছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন।
ডিজিটাল হাটের প্রথম দিনই অনলাইনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কোরবানির পশু ক্রয় করেছেন। অনলাইনে কোরবানির গরু কেনাবেচা নিয়ে প্রতিদিন মিডিয়ায় খবর বের হচ্ছে। মানুষকে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো কোরবানির গরু অনলাইনে কেনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা কতটুকু? গ্রাহকদেরই কোন বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত?
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ফেসবুকভিত্তিক বা অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে গরু কেনার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেয়া উচিত। সবাই যেন বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে কোরবানির গরু কেনেন। পেমেন্ট দেয়ার আগে শর্তগুলো ভালো করে দেখা এবং বুঝে নেয়া উচিত যে, তারা সুস্থ গরু পাবেন কিনা। কীভাবে গরু সরবরাহ করা হবে, সেগুলো বিশেষভাবে বুঝে নেয়া উচিত।
করোনার কারণে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসতে শুরু করেছে। প্রয়োজন ছাড়া রাজধানীর কম লোকই বাইরে বের হচ্ছেন। দেশে ঈদুল আযহার আর কিছুদিন বাকি থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে গরুর হাটে যেতে অনেকের অনীহা রয়েছে। সচেতন মানুষ মনে করছেন কোরবানির হাট করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর হটস্পট হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে অনলাইন শপ। এসব ওয়েবসাইটে নানা দামের গরু বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
কোরবানির পশু বিক্রি সম্পর্কে অনলাইন শপ দেশীগরুবিডি ডটকমের প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান বলেন, ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ক্রেতারা বিভিন্ন আকারের ও দামের গরুর ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে পছন্দ করতে পারবেন। এরপর প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যাবে। ক্রেতা চাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে গরু দেখতে পারবেন এবং গরু পালনকারীর সাথে কথাও বলতে পারবেন। পছন্দ হলে প্রথমে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে হবে। ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে এই টাকা জমা করা যাবে। তাহলে গরুটি বুকিং হয়ে যাবে। ঈদের এক-দুইদিন আগে গরুটি সরবরাহ করা হবে। তখন নগদ বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই অনলাইনে গরু কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানি দেয়ার জন্য অনলাইন শপ থেকে একটি গরু কিনেছেন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মহসিনউজ্জামান খান। তিনি বলেন, ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে গরুটি দেখানো হয়। তারপরে আমি অর্ডার দিয়েছি। করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে বের হওয়া কঠিন, নিরাপত্তার একটা ঝুঁকি আছে। গরুর হাটে যাওয়াও অসুবিধাজনক। তাই সবকিছু মিলে এবার অনলাইনে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে করোনার কারণে অনলাইনে তথা ডিজিটাল গরুর হাট নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মানুষকে সতর্ক করছেন। তারা বলছেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে পালাতে পারেন অনেক প্রতারক। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয় সেখানে কোরবানির গরুর হাটে চুরি-চামারির চেষ্টা হবে না তা বলা মুশকিল। ফলে কেনাবেচা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রির প্লাটফর্ম ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট’ উদ্বোধন করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, অনলাইনে গরু কেনাবেচা আমাদের দেশে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব না থাকলেও মানুষের কাছে একটি নির্ভরশীল জায়গা হবে অনলাইন পশুর হাট। অনলাইন হাটের কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতারা কিভাবে লেনদেন করবেন, মূল্য নির্ধারণ না করে দর কষাকষির সুযোগ থাকা প্রয়োজন ছিল।
অনলাইনে কোরবানির গরু কেনার ক্ষেত্রে দাম অর্ধ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ছবি দেখে, অনলাইনের মাধ্যমে গরু ক্রয়ের আদেশ দেয়া কতটা নিরাপদ? গরু বিক্রেতা অনলাইন শপ দেশীগরুবিডি ডটকমের প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান বলছেন, আমরা আসলে খামারিদের সঙ্গে ক্রেতাদের সমন্বয়ের কাজটি করছি। এতে একদিকে যেমন খামারিদের সহায়তা করা হচ্ছে, তেমনি ক্রেতারাও প্রচলিত হাটের ঝামেলা এড়িয়ে নিরাপদে গরু কিনতে পারেন।
দাম পরিশোধ থেকে শুরু করে গরু সরবরাহ করা পর্যন্ত সবকিছুর দায়িত্ব আমাদের অনলাইন শপের থাকবে। খামারিদের কাছ থেকে আমরা গরু সংগ্রহ করলেও, পুরো দায়িত্ব থাকবে আমাদেরই। যদি গরুর কান, লেজ কাটা থাকে, রঙ ঠিক না থাকে, তাহলে ক্রেতা গরুটি বদলে নিতে বা রিফান্ড নিতে পারবেন।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ডিজিটাল হাটে যেসব সদস্যরা অংশ নেবে তাদের দায়িত্ব আমাদের সংগঠন নিচ্ছে। কারণ এখানে সব জেনুইন খামার ও গরুই বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। ফলে তাদের পেমেন্ট এবং ডেলিভারির গ্যারান্টি আমাদের অ্যাসোসিয়েশন নিচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গরু কেনার পর প্রতিশ্রুতি মাফিক গরু না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।