পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং টাস্কফোর্স মেগা প্রকল্প কাজে গতি আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি। ফলে বিভিন্ন প্রকল্পে দেশি কর্মীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও যোগ দিচ্ছেন। এতে করে করোনার মধ্যেও কাজের গতি ফিরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মেগা প্রকল্প। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মেগা প্রকল্পগুলোর গতি শ্লথ হয়েছে। তবে গতি বাড়াতে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক কিছুই নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর টাস্কফোর্সের একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাস্তবায়নাধীন ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে করোনাভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য পুরোদমে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়, প্রকল্পগুলোর বিদেশি পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞদের দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার ওপর। সে অনুযায়ী প্রকল্পগুলোতে দেশি কর্মীদের পাশাপাশি বিদেশিরা যোগ দেয়া শুরু করেছেন। চলতি মাসেও আরও বিদেশি কর্মী আসছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কাজ। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তৈরী করা হচ্ছে কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন সেন্টার।
সূত্র জানায়, করোনার প্রভাবে প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ৬টি মেগা প্রকল্প। এগুলো হলো, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু হতে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ এবং মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পদ্মা সেতু ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলোতে রয়েছে বৈদেশিক অর্থায়ন।
গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) বরাদ্দের অর্ধেক খরচ হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত গত অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত উল্লিখিত ছয়টি প্রকল্পের অনুক‚লে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। পুরো বরাদ্দ ব্যয় করতে হলে গত জুনে প্রায় ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এতে করে নির্ধারিত মেয়াদে বৃহৎ এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শঙ্কার মুখে পড়েছে। তবে সময় একটু বেশি নিলেও প্রকল্পগুলো যাতে একেবারে ঝুলে না যায় সে দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা সংকটের মধ্যেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা যেটা আছে, সেটা পরামর্শকদের নিয়ে। ইংল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পরামর্শকরা করোনার কারণে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তাদের দ্রুত প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এসে পৌঁছলেই পুরোদমে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তবে বিষয়টা আমাদের ওপর নির্ভর করছে না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার তাদের নাগরিকদের দেশ ত্যাগের অনুমতি দিলে তবে তারা আসতে পারবেন। তারাও আসতে আগ্রহী। কয়েকজন চলতি মাসেই এসে যাবেন বলে আমরা আশাবাদী।
করোনার কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ ছিল সরকারের মেগা প্রকল্পের অন্যতম মেট্রোরেলের কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে কাজ। প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে, আগামী সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে কর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতে দুইটি হাসপাতালের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে শ্রমিকদের কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন সেন্টার। প্রকল্প সূত্র জানায়, করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গত ৪ জুন থেকে উত্তরায় মেট্রোরেলের সিপি-৩, সিপি-৪ এই দুই প্যাকেজের কাজ আবার শুরু হয়েছে। এছাড়া উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটের বিভিন্ন অংশে কাজ চলছে। মেট্রোরেলের প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সবগুলো সেগমেন্ট প্রস্তুত হয়েছে।
আরেকটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল সংযোগ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। করোনাভাইরাসের কারণে নির্মাণকাজের গতি কমেছে এ প্রকল্পটিরও। প্রকল্পটির মাসভিত্তিক অগ্রগতির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ কাজের অগ্রগতি হয়েছিল ২ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরো ২ দশমিক ৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়। এরপর থেকেই কমতে থাকে কাজের গতি। ফেব্রুয়ারিতে ১ শতাংশ, মার্চে দশমিক ৫ শতাংশ ও এপ্রিলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, করোনার মধ্যেও প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল না। তবে গতি কমে গিয়েছিল। এখন আবারও গতি ফিরে আসছে। বিদেশি কর্মীরা ফিরতে শুরু করেছে। প্রথম দিকে দেশীয় শ্রমিকরা ভয়ে আসতে চাইত না। এজন্য আমরা টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে তারাও কাজে যোগ দিতে উৎসাহিত হয়। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই গতি বাড়বে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পেও থাবা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যেই স¤প্রতি প্রকল্পের ইউনিট-১-এর মূল রিঅ্যাক্টর ভবনের তৃতীয় ধাপের কনক্রিট ঢালাই কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ ডিসেম্বর উৎপাদনে যাওয়ার কথা রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের। পুরো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। এ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন রাশিয়ার নাগরিকরা। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, পরামর্শকদের ফিরিয়ে আনতে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে এরই মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। দ্রæত তাদের চার্টার্ড ফ্লাইটে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের পরামর্শক ও কর্মীদের চিকিৎসাসেবার জন্য পাবনা হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথাও জানান তারা। প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, করোনার মধ্যেও এ প্রল্পটির কাজ স্থবির হয়নি। নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করায় এখন গতি আরও বড়েছে। গত মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে রাশিয়া থেকে নতুন করে প্রায় ৫৭০ জন কর্মী এসেছেন। জুলাই-আগস্ট মাসে আরও ৭০০ কর্মী যোগ দেবেন। সাব-কন্ট্রাক্টরদের মধ্যে জার্মান থেকে ১১ জন এসেছে। ভারত থেকে ৮১ জন আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। করোনা শুরুর আগে সাড়ে ছয় থেকে আট হাজার কর্মী প্রতিদিন কাজ করতেন। কিন্তু এখন প্রতিদিন কাজ করছেন সাড়ে আট থেকে সাড়ে ১০ হাজার কর্মী।
মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্টা সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। আরএডিপিতে বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ২২৫ কোটি টাকা, মে মাস পর্যন্ত ব্যয় তিন হাজার ২০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই প্রকল্পটিতে গত অর্থবছরে বরাদ্দ হওয়া অর্থ অনেকটাই ব্যয় করা হয়েছে। শুরু থেকে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, আর্থিক ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ প্রকল্পের গতি বাড়াতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের লক্ষ্য ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। আরএডিপিতে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯০৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরে এই প্রকল্পটিতেও ব্যয় হয়েছে সিংহভাগ অর্থ। তবে প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় চার হাজার ৮০৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে ১০ বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।