Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর প্রায় শতভাগ রেস্তোরাঁ মানছে না তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন : ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের জরিপ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২০, ৭:৫৯ পিএম

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানছে না রাজধানীর প্রায় শতভাগ রেস্তারাঁ। শনিবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় আইন বাস্তবায়নের চিত্র পর্যবেক্ষণ জরিপের ফলাফল ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক এক অনলাইন সভায় জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, রাজধানীর প্রায় শতভাগ রেস্তোরাঁ মানছে না তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ অনুযায়ী রেস্তোরাঁ পাবলিক প্লেস এবং এই আইন অনুযায়ী রেস্তোরাঁ ধূমপানমুক্ত ও এ সংক্রান্ত সতর্কতামূলক নির্দেশিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। ২০১৯ সালের জুন মাসে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তত্বাবধায়নে ‘ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা’ জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপের উদ্দেশ্যÑ ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থার পর্যবেক্ষণ ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ, মালিক সমিতি এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের প্রমাণভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করা।

ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার মোট ৩৭১টি (উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২১১টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৬৬টি) রেস্তোরাঁয় এই জরিপটি পরিচালিত হয়। যার মধ্যে ২৪৫টি রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স আছে আর বাকী ১২৬টি রেস্তোরাঁর কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই এবং ৫৪টি রেস্তোরাঁ বাংলাদেশ রেস্তোরাঁঁ মালিক সমিতির সদস্য ও বাকী ৩১৭টি রেস্তোরাঁ সদস্য নয়। এই ৩৭১টি রেস্তোরাঁর ৯৮ শতাংশে সামগ্রিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লক্সঘনের চিত্র উঠে আসে অর্থাৎ মাত্র ২ মতাংশ রেস্তোরঁাঁ যথাযথভাবে আইন বাস্তবায়ন করছে। আরো দেখা গিয়েছে যে ৩৪ শতাংশ রেস্তোরাঁয় ধূমপানের সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়, ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ রেস্তোরাঁয় সরাসরি ধূমপানের দৃশ্য দেখা যায়; ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ রেস্তোরায় সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ/ছাঁই দানি পাওয়া গিয়েছে এবং ২ দশমিক ৬ শতাংশ রেস্তোরাঁয় ধূমপানের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। ৯৮ শতাংশ রেস্তোরাঁয় আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি এবং ৯২ শতাংশ রেস্তোরাঁয় কোন ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। জরিপে আরো প্রকাশ পায় যে, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য রেস্তোরাঁয় ধূমপানের হার ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সদস্য নয় এমন রেস্তোরাঁয় ধূমপানের হার ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ধূমপানমুক্ত রেস্তোরাঁ গঠনে একত্রে কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য রেস্তোরাঁয় আইন লঙ্ঘনের হার তুলনামূলক কম। তবুও সদস্য রেস্তোরাঁও মানছেনা আইনের ধারা ৮ প্রদর্শিত হচ্ছে না ধূমপানমুক্ত সতর্কতামূলক নোটিশ। মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় প্রদর্শিত হচ্ছে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ। যেখানে সদস্য নয় এমন রেস্তোরাঁর চিত্র আরো খারাপ, মানছে না আইন।

তাই আইনের শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতি কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন-তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে সকল সদস্য রেস্তোরাঁকে অবগত করা এবং এ বিষয়ে রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মচারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা আয়োজন, বিভিন্ন উপকরণ প্রকাশ ও বিতরণ করা; রেস্তোরাঁয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শনের জন্য নির্দেশনা প্রদান ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহন; বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের শর্ত আরোপ করা এবং পালনের প্রতিবেদন প্রদান বাধ্যতামূলক করা; একটি মনিটরিং টিম গঠন, মনিটরিং ফরমেট তৈরি এবং তামাক আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিনিয়ত মনিটর করা; সমিতির মাসিক/ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি অন্তর্ভূক্তকরণ ও এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা সহ আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান সভার সভাপতি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার রবিন এবং সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রহুল আমিন। সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম খান এবং সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন রহমান। এছাড়াও সভায় বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন মিরধা বেলু এবং যুগ্ম মহাসচিব ইমরান হাসান। সভায় আরো অংশ নেয় রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অন্যান্য সদস্যসহ অন্যান্য তামাকবিরোধী সংস্থার প্রতিনিধিরা। জরিপের তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারি পরিচালক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মোখলেছুর রহমান। সভায় সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব, প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ