Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

করোনায় বহুমাত্রিক সঙ্কট

চট্টগ্রামে টানাপড়েনে মধ্যবিত্ত কষ্টে স্বল্প আয়ের মানুষ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে করোনায় কষ্টে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ। আর্থিক টানাপোড়েন চলছে মধ্যবিত্ত পরিবারেও। দুশ্চিতায় উচ্চবিত্তরাও। মার্চের শেষ থেকে টানা প্রায় তিনমাসের অঘোষিত লকডাউন গেছে। সীমিত পরিসরে সবকিছু চালু হলেও সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেনি। তাতে বহুমাত্রিক সমস্যার মুখোমুখি সব শ্রেণি পেশার মানুষ।

করোনার প্রথম ধাক্কায় আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। খেটে খাওয়া এসব লোকজনের দিন চলছে কষ্টে, ধারদেনায়। দিন যতই যাচ্ছে ততই সঙ্কটের মুখে মধ্যবিত্ত। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, কল কারখানায় উৎপাদন, বিপণনসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐ পুরোদমে সচল না হওয়ায় উচ্চবিত্তরাও উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে যাচ্ছেন তাদের চিকিৎসার খরচ জোগাতে স্বর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে। এনিয়েও মানুষের মধ্যে উৎন্ঠার শেষ নেই।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইস্ট ডেল্টা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, সবকিছু পুরোদমে সচল না হওয়ায় নগর অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে। অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে সঙ্কট আরও বাড়বে। তাতে সব শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে অনেকে তাদের সামর্থ বুঝে জীবন যাত্রার ধরন পাল্টে নিচ্ছে। আয় বুঝে ব্যয় তথা কৃচ্ছতা সাধনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। উৎপাদনশীলতা বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
করোনায় পৌনে এককোটি মানুষের এ মহানগরীর দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। ভাগ্যবদলের জন্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা অনেকে তাদের পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয় কমে যাওয়ায় সেই সাথে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় ব্যয়বহুল নগরজীবন ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে যারা সন্তানদের পড়ালেখার জন্য এই নগরীতে থাকতেন, তারাও নগরী ছেড়ে যাচ্ছেন।

স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই শহর ছেড়েছেন। সীমিত আয়ের লোকজন যারা এতো দিন শহরে বাসা নিয়ে থাকতেন তারাও পরিববার গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ছুটিতে এসব কর্মজীবীরাও গ্রামে ছুটে গিয়ে ক্ষেত খামার কিংবা পুকুরে মাছের চাষ করছেন। সামনে দিনগুলোতে খাদ্য সঙ্কট হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকে কৃষিতে মনোনিবেশ করছেন। ব্যাপকহারে লোকজন বাসা ছেড়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরনগরীর বাড়ির মালিকেরা। তাদেরও আয় কমে যাচ্ছে। নতুন ভাড়াটে মিলছে না। অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করেছেন। বাড়ি ভাড়া না পাওয়ায় তারা ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।

সরকারি চাকরিজীবীরা ছাড়া অন্যপেশার লোকজনের দুশ্চিতার শেষ নেই। ব্যবসায়ীরাও আছেন কষ্টে। মার্কেট বিপনী কেন্দ্র বন্ধ। কিছু সময়ের জন্য দোকানপাট খোলা রাখা হলেও ক্রেতা নেই। নিত্যপণ্য ছাড়া অন্যকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা নেই। মানুষের মধ্যে ব্যয় সংকোচন প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিলাসী পণ্যতো দূরের কথা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া অন্যখাতে মানুষ কোন ব্যয় করছে না।

করোনা অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন কলকারখানা, দোকানপাটসহ ছোট প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করতেন তারা এখন প্রায় বেকার। ফুটপাতের হরকার থেকে শুরু করে পরিবহন, ঘাট শ্রমিক, কুলি, মজুর, হোটেল রেস্তোঁর, কমিউনিটি সেন্টারের কর্মীদের প্রায় সবাই এখন কর্মহীন। জীবনের তাগিদে অনেকে পেশাবদল করছেন। মন্দার কারণে সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে।

এতে বিপাকে নির্মাণ শ্রমিকেরা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বিশেষ করে বন্যা কবলিত উত্তর বঙ্গের হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর এই সময়ে কাজের খোঁজে এই নগরীতে আসে। তারা মূলত দিন মজুর হিসাবে নির্মাণখাতসহ বিভিন্ন কাজ করতো। কিন্তু এখন কাজ কমে যাওয়ায় তারাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষের কষ্টের কোন শেষ নেই। কাজের খোঁজে আসা মানুষের ভিড় নগরীর শ্রমিকের হাটগুলোতে। কাজ না পেয়ে হাহাকার বাড়ছে।
লকডাউনের শুরুতে এসব হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি বেসকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিলেও এখন তা নেই। এতে তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। দানশীলরা এখন করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন।

ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আর্থিক মন্দার প্রভাব নিন্মবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের মাঝেও পড়েছে। সরকার জীবন এবং জীবিকা দুইটোই রক্ষা করার নীতি নিয়েছে। তবে এ অবস্থায় মানুষের দুর্ভোগ আর কষ্ট কমাতে প্রনোদনা বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে সীমিত আয়ের লোকজনের জন্য সরকারি সহায়তার পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের রক্ষায়ও কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ