পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সমান। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এক অর্থবছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স এর আগে কখনই আসেনি। এর আগের অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২০১৮-১৯ এর তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এদিকে মাস হিসাবেও গত জুন মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যা ছিল ১ হাজার ৮৩৩ মিলিয়ন ডলার। এর আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছর জুনে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪৮ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বজুড়ে মহামারী চলার মধ্যেও একদিকে আমদানি ব্যয় কমে যাওয়া অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বমুখীতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহযোগিতা পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেকবার রেকর্ড ভেঙে বৃহষ্পতিবার (২ জুলাই) দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। সূত্র মতে, করোনার ভয়াল থাবায় বিশে^র শ্রমবাজারে যখন মহাসঙ্কট চলছে ঠিক তখনও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল। করোনাকালেও রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনের কারণে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে বলে জানান ছাইদুর রহমান। এই সময়ে রেমিট্যান্স বাড়ার বিষয়ে ছাইদুর রহমান বলেন, করোনায় পরিবারের-পরিজনের প্রয়োজনে সর্বশেষ জমানো টাকাও অনেকে পাঠাচ্ছেন। অনেকে আবার দেশে ফিরে আসার চিন্তাভাবনা করছে; তাই যা কিছু আছে সব আগেই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সব কারণেই রেমিট্যান্স বাড়ছে।
স্থানীয় বাজারে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান, হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপ এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ২ শতাংশ প্রণোদনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আগামীতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতি ও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট নিরসনে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, করোনা মহামারিতে গত মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সও কমে গিয়েছিল। গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। পরের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স আরও কমে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে আসে, তাও গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। কিন্তু মে মাসে চিত্র পাল্টাতে থাকে। মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সর্বশেষ জুন মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৮২ কোটি ডলার। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা প্রায় ১৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের জুলাইয়ে ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। গত আগস্টে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। সেপ্টেম্বরে আসে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অক্টোবর মাসে আসে ১৬৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভেবেছিলাম করোনার ধাক্কায় রফতানি আয়ের মতো রেমিট্যান্সও একেবারে তলনিতে নেমে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তিনি বলেন, একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এখন উপার্জন বা কাজের টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন না তারা (প্রবাসী)। জমানো টাকা যেটা ছিল সেখান থেকেই অথবা অন্য কারও কাছ থেকে ধার করে পরিবারের-পরিজনের বিপদের দিনে কিছু পাঠাচ্ছেন। সেটা ফুরিয়ে গেলে আর পাঠাতে পারবেন না। ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। জ্বালানি তেলের দাম একেবারে কমে আসায় তেলনির্ভর অর্থনীতির ওই দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে বড় সঙ্কট। ফলে সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের জন্য খুব ভালো খবর আসবে বলে মনে হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।