পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে করোনা সংক্রমণের এই সময়টাতে অনেক শিক্ষার্থীর (১৬ শতাংশ) উদ্বেগ ও আতঙ্কে ভোগার চিত্র উঠে এসেছে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের অনেকের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠার প্রবণতাও দেখা গেছে। টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা ইত্যাদি বিবিধ কারণে অনেক শিক্ষার্থী করোনাকালীন দূরশিক্ষণে অংশ নিতে পারছে না বলেও জানা গেছে এই জরিপে।
# স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানছেনা ১০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী
করোনা মোকাবেলার অংশ হিসেবে গত ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ব্র্যাক দেশের আট বিভাগের ১৬টি জেলায় ৪ থেকে ৭ মে এই জরিপটি পরিচালনা করে। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়ুয়া ১৯৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের মধ্য থেকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিস্তারিত সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২০ জুন) বিকালে এক ডিজিটাল সম্মলেনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এছাড়াও প্যানেল আলোচক হিসেবে যোগ দেন এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম ও অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) রতন চন্দ্র প-িত, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ, এটুআই প্রকল্পের উপদেষ্টা অনীর চৌধুরী, ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগের প্রধান সুন লি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগের প্রধান নূর শিরিন মো. মোক্তার, যুক্তরাজ্য সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)-এর মানব উন্নয়নবিষয়ক টিম লিডার ফাহমিদা শবনম, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ ইউএসএইড-এর আলী মো. শহিদুজ্জামান এবং ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শাফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের উর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন চলমান সংকটের সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান। শিক্ষার্থীরা যাতে ফোনের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারে সেজন্য আমরা ৩৩৩৬ নম্বর থেকে একটি হটলাইন চালুর ব্যাপারে কাজ করছি। চলতি জুন মাসেই তা উদ্বোধন করা হবে।
সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার থেকেও শিক্ষার্থীদের জন্য দূরশিক্ষণ ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ সরকারের ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মুক্তপাঠের সাহায্যে শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এর মধ্যে সামনের জুলাই মাস থেকে শিক্ষকদের জন্য অঙ্ক বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শাফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের বিষয়ে শিক্ষকের সামর্থ্য আরো বৃদ্ধি করতে হবে যাতে তারা এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তাছাড়া, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে পড়াশোনায় কতটা ক্ষতি হচ্ছে তারও গভীর অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতিশীলতার প্রধান দুই সূচক অন্তর্ভুক্তি এবং সমতা উভয়ক্ষেত্রেই অগ্রগতি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা (২৯ শতাংশ)। নারী শিক্ষার্থী, মাধ্যমিক পড়ুয়া, পল্লীঅঞ্চলের বাসিন্দা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী - এদের সবার মধ্যে ১৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উদ্বেগ ও আতঙ্কে ভুগছে। আতঙ্কে ভুগলে কী করে এ প্রশ্নের উত্তরে তারা জানিয়েছে, একেবারেই নীরব হয়ে যায়, মেজাজ খারাপ করে, পড়াশোনা বা খেলাধূলা কোনোটাই করে না, বাইরের কাউকে দেখলে আতঙ্ক বোধ করে, একা থাকতে ভয় লাগে ইত্যাদি।
করোনা মহামারীর এই সময়ে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখার ব্যাপারে নির্দেশনা না পাওয়া এর একটি কারণ বলে প্রতীয়মান হয়। ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশেষ করে মাদরাসা ও গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা এই সমস্যার কথা জানিয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ শতাংশ ঘরে খাদ্যাভাবকে এজন্য দায়ী করেছে, যা মাদরাসা ও শহরাঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা করোনাকালীন পরিচ্ছন্নতা বিধি (সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা) মেনে চললেও ১০ শতাংশ তা মেনে চলছে না। দেশের ৩ কোটি ১০ লাখ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এই উপাত্ত যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া, ১৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছে তারা সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলাকালেও বাড়ি থেকে বাইরে চলাচল করেছে।
জরিপের উপাত্ত অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (৮২ শতাংশ) এসব নিপীড়নের ধরন মানসিক। তবে শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন, ঘরে বন্ধ করে রাখা বা জোর করে কাজ করানোর মতো ঘটনাও জানিয়েছে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। এখানেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা অন্যদের চেয়ে বেশি- ১৬ শতাংশ। এছাড়া ২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা বলেছে। নারী শিক্ষার্থীর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা আরো বেশি হতে পারে বলে জরিপ প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে তথ্য দিতে হয়তো সংকোচ বোধ করেছে।
শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ (৫৪ শতাংশ) স্কুল খোলার পর বাড়তি ক্লাস করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে তা জানা থাকলেও ৪৯ শতাংশ এখনই স্বল্প সময়ের মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। এছাড়া পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস ছোট করা এবং পরীক্ষায় কড়াকড়ি শিথিল করার পক্ষেও অনেকে মত দিয়েছে। করোনাকালীন মানসিক চাপ বা ক্ষতি নিরাময়ের জন্য উত্তরদাতা শিক্ষার্থীরা যেসব পন্থার কথা বলেছে তার মধ্যে স্কুল খোলার পর বিনোদনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, উপহার প্রদান, উপবৃত্তির অর্থ বাড়ানো এবং দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো জোরদারে পদক্ষেপ গ্রহণ উল্লেখযোগ্য।
দূরশিক্ষণে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্রুত এই কার্যক্রমকে শক্তিশালী করে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে জরিপ প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।