পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জীবন বিপন্নদের জন্য ডেক্সামেথাসোন উপকারী, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যত্রতত্র ব্যবহার ও বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে : প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ
মহামারী করোনাভাইরাসের ছোঁবলে টালমাটাল বিশ্ব। বিশ্বের মানুষের কাছে নতুন এই প্রাণঘাতী অদৃশ্য ভাইরাসটি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। একেবারে নতুন ধরণের সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার কারণে করোনার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাও নেই। এখনও দেশে দেশে চলছে ওষুধ-টিকা ও ভ্যাকসিন আবিস্কার নিয়ে দিন-রাত বিজ্ঞানীদের যুদ্ধ। গোটা বিশ্বের মানুষ এখন করোনার ‘যম’ ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে। যদিও এখনও পর্যন্ত সেই অর্থে কোনও দেশই দিশা দেখাতে পারেনি। স্বীকৃত কোন ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অন্যান্য ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। তারপরও করোনার চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা নানা ওষুধ নিয়ে যেভাবে গবেষণা চালাচ্ছে এবং চিকিৎসায় সুফল আসছে তাতে বাংলাদেশের চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষ এই লড়াইয়ের মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখছে।
ইতোমধ্যে এভিগান, রেমডেসিভিরসহ অনেক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন দিয়েছে করোনা চিকিৎসার জন্য। রেমডেসিভিরতো ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বেক্সিমকোসহ ১০টি প্রতিষ্ঠান বাজারেও এনেছে। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে এর চাহিদা। সুফলও পাচ্ছে মানুষ। এদিকে গত কয়েকদিন থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক আরও আশার কথা শুনিয়েছেন। গবেষকরা ইতোমধ্যে বলে ফেলেছেন করোনায় গুরুতর অসুস্থদের জীবন রক্ষাকারী প্রথম ওষুধ ডেক্সামেথাসোন। যা বিগত কয়েক যুগ ধরেই বাজারে বিদ্যমান এবং দামেও কম। হাল্কা ডোজের এই স্টেরয়েড করোনায় আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের এক তৃতীয়াংশের প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড চিকিৎসা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। গত বুধবার এই ওষুধকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়াসুস বলেছেন, আমরা একটি ভালো খবর পেয়েছি। যুক্তরাজ্যে একটি ওষুধের প্রাথমিক ট্রায়ালে ইতিবাচক ফল এসেছে। করোনাভাইরাসে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন নামক একটি কমন স্টেরয়েড প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কেবল গুরুতর করোনা রোগীদের ক্ষেত্রেই ওষুধটি ব্যবহার করতে।
করোনাভাইরাস চিরতরে রুখে দেয়ার মতো ওষুধের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দাবি করছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য ডেক্সামেথাসোন নামের এই ওষুধটি করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বাঁচাতে ইতোমধ্যেই সাহায্য করেছে। করোনা আক্রান্ত প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনই এই স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
ওই গবেষকরা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে কম ডোজের এই স্টেরয়েড চিকিৎসা সারা বিশ্বকে দিশা দেখাবে। জীবনরক্ষাকারী এই ওষুধ ভেন্টিলেশনে থাকা করোনা রোগীদের মৃত্যুহার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিতে পারে। আবার অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন যে করোনা রোগীরা, তাদের মৃত্যুহার এক-পঞ্চমাংশ অবধি কমিয়ে দিতে পারে এই ডেক্সামেথাসোন। এমনকি গবেষকদের অনুমান ব্রিটেনে করোনা মহামারি শুরুর প্রথম থেকেই যদি এই ওষুধ ব্যবহার করা সম্ভব হতো তাহলে পাঁচ হাজার পর্যন্ত জীবন বাঁচানো যেত। কারণ এই খুবই ওষুধ সস্তা। দেখা গেছে, যেসব রোগী ভেন্টিলেটরে ছিলেন তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি এই ওষুধ নেবার ফলে ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২৮ শতাংশে দাঁড়ায়। আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫ শতাংশ থেকে কমে আসে ২০ শতাংশে।
অনুসন্ধান দলের প্রধান প্রফেসর পিটার হরবি বলেছে, এখনও পর্যন্ত এটাই একমাত্র ওষুধ যা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে বলে দেখা যাচ্ছে এবং এই ওষুধ প্রয়োগে মৃত্যু ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। প্রধান গবেষক প্রফেসর মার্টিন ল্যানড্রে বলছেন, পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ভেন্টিলেটারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এমন প্রতি আট জন রোগীর মধ্যে একজনের প্রাণ এই ওষুধ দিয়ে বাঁচানো সম্ভব।
আর যেসব রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাদের প্রতি ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে একজনের জীবন এই ওষুধে বাঁচবে। এই ওষুধের সুস্পষ্ট সুফল আছে। এই চিকিৎসায় রোগীকে ডেক্সামেথাসোন দিতে হবে ১০ দিনের জন্য। এর জন্য খরচ হবে রোগী প্রতি প্রায় ৫ পাউন্ড (বাংলাদেশে ৫২৫ টাকা)। আর এই ওষুধ পৃথিবীর সব দেশে পাওয়া যায়।
প্রফেসর ল্যানড্রে বলছেন, হাসপাতালে রোগীকে প্রয়োজন হলে এখন দেরি না করে এই ওষুধ দেয়া উচিত। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, কেউ যেন এই ওষুধ বাজার থেকে কিনে ঘরে মজুত করে না রাখেন। যাদের করোনাভাইরাসের হালকা উপসর্গ অর্থাৎ যাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না, তাদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন কাজ করবে না।
সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, করোনার চিকিৎসায় বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, কিছু ওষুধের ব্যবহারও হচ্ছে। সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এটা চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য ভালো দিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। অবশ্য এ সব ওষুধ শুধুমাত্র ক্লিনিকাল ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। সবার জন্য এসব ওষুধ নয়; যারা খুবই ক্রিটিকাল বা মৃত্যুর পথে তাদের জন্য। সাধারণ রোগীরা এগুলো ব্যবহার করলে ওজন, ডায়াবেটিস বাড়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতিকর লক্ষণ দেখা দিবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক পূর্ণভাবে ডোস শেষ করতে হবে। অসম্পূর্ণ হলেও বিপাকে পড়তে হবে। যদিও এ সব ওষুধ সরাসরি করোনার নয়; অন্য ওষুধের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা চলছে। ভাইরাস মারা যাবে বা রিপ্রোডাকশন বন্ধ হবে এ রকম ওষুধ এখনও আসেনি। তবে গবেষকরা যেভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দ্রæতই আমরা সরাসরি করোনার ওষুধ পেয়ে যেতে পারি।
সর্বশেষ ব্রিটেন রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসনের সফলতার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য হতাশাও আছে উল্লেখ করে ডা. এস এম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে ফার্মেসিতে ওষুধ পাওয়া যায়। দামও কম। তাই সাধারণ রোগীরাও দেখা যাবে ওষুধ কিনে মজুত বা ব্যবহার করছে। যা আমাদের ক্ষতির কারণও হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানতে চাইলে দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, যেহেতু করোনার স্বীকৃত কোন ওষুধ নেই। তাই গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওষুধ আবিষ্কারের। তবে বিশ্বব্যাপী যেভাবে গবেষণা চলছে তাতে আশাবাদী খুব শিগগিরই করোনার ওষুধ চলে আসবে। তবে এখনও যে সব ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেয়া হচ্ছে তার কোনটাই সরাসরি করোনা চিকিৎসার ওষুধ নয়। অন্য ওষুধকে ব্যবহার করে চিকিৎসার চেষ্টা চলছে। তবে মহামারি থেকে রক্ষায় ভ্যাক্সিন আবিস্কার খুবই জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেক্সামেথাসোন করোনার ওষুধ নয়; এটি একটি স্টেরয়েড ওষুধ। বাত, হাপানী, এলার্জিসহ অন্যান্য যে কোন গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তবে করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগী বা জীবন বিপন্ন এসব রোগীদের জন্য জরুরি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারে সতর্কতা হিসেবে তিনি বলেন, অনেকদিন এই ওষুধ ব্যবহারে রোগীর চরম ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্টিক আলসার, হার ক্ষয়, চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধা, শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়া, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমা এবং ব্যাক্টেরিয়াল বা ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই কোন রোগীই যাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার না করেন এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রখ্যত এই চিকিৎসক বলেন, যত্রতত্র যেন এর ব্যবহার না হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ছাড়া যাতে কোন ফার্মেসি এই ওষুধ বিক্রি না করে এ ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
উল্লেখ্য, গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ওষুধ নিয়ে গবেষকরা ট্রায়াল চালাচ্ছে। যেসব ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল তার মধ্যে ছিল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও। এই ওষুধটির ওপর পরীক্ষা পরে বাতিল করে দেয়া হয়, কারণ এই ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় হার্টের সমস্যা এবং অন্য প্রাণনাশক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। আরেকটি ওষুধ রেমডেসিভির, যেটি অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেটি সেরে ওঠার সময় কিছুটা তরান্বিত করতে পারে বলে দেখা যাবার পর করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। অপরদিকে আভিফাভির নামে রেজিস্টার্ড একটি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নিয়ে এসেছে রাশিয়া। বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট নাকি কাজ দিচ্ছে এই ওষুধ। একই সঙ্গে হংকংয়ে করোনা চিকিৎসায় তিনটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ একযোগে প্রয়োগ করেছে করোনাকে কাবু করার চেষ্টা করেছে। ইন্টারফেরন বিটা-ওয়ান বি এর সঙ্গে লোপিনাভির-রিটোনাভির এবং রিবাভাইরিনের সংমিশ্রণে একটি অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি (চিকিৎসা) তৈরি করেছেন গবেষকরা। এতে সুফল মিলেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে করোনার চিকিৎসায় নানা ওষুধ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যেভাবে প্রচেষ্টা চলেছ তাতে খুব শিগগিরই করোনা নিরাময়ের সরাসরি ওষুধ বিশ্ব হাতে পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।