Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢামেক করোনা ইউনিটে পরীক্ষার নামে যা হচ্ছে

২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের মৃত্যু

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা অর্থের বিনিময়ে নিয়ম ভেঙ্গে বাইরে করোনা আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষার করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ঢামেকে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের পরীক্ষা স্যাম্পল সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে।

অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢামেকের করোনা ইউনিটে ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ নিয়ে গত ২ মে থেকে ৪৮ দিনে ঢামেকের করোনা ইউনিটে ৬৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকায় থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে নোমান আহমেদ ঢামেকে গিয়ে ডাক্তারের পরার্মশ নেন। ডাক্তার তাকে বলেন, ভর্তি ছাড়া করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না।

নোমান আহমেদের অভিযোগ, এমন সময় হাসপাতালের একজন কর্মচারী তাকে বলেন আমি আপনার করোনা পরীক্ষা করিয়ে দিতে। এ জন্য দিতে হবে ৭ হাজার টাকা! পরে তিনি অনেক বলে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। পরে ওই কর্মচারী বলেছে, টাকা দিলে হাসপাতালে ভর্তি লাগে না। সে আরও জানায় টাকা হলে করোনার রিপোর্টও পরিবর্তন করা যায় ।

জানা গেছে, হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তারা টাকার বিনিময়ে বাইরে থেকে করোনা রোগী এনে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, এমন অনিয়মের খবর পাওয়ার পর তাদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢামেকের ভাইরোলজি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর করোনা রোগীদের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিনই ২৫০ থেকে ৩০০ রিপোর্ট ডেলিভারী দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিয়মের বাইরে কর্মকর্তাদের অনুরোধ ভাইরোলজি বিভাগের রাখতে হয়। সেই অনুরোধেই বাইরের কিছু লোকের স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি ছাড়া অন্য কোনো করোনা রোগীর পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করা যায় না। হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে শুধু ভর্তি হওয়া রোগীদের স্যাম্পল সংগ্রহ করার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী রিপোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সরকারি কর্মচারী ও হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের স্যাম্পলও পরীক্ষা করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, ভাইরোলজি বিভাগে নিজস্ব টেকনোলজিস্ট মাত্র কয়েকজন। বাইরে থেকে টেকনোলজিস্ট এনে কাজ করানো হয়। ইতোমধ্যে বিভাগের ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট ও ক্লিনারসহ বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। লোকবল সঙ্কট থাকলেও নিয়ম ভেঙে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের অনুরোধ রাখতে হয়।
ঢামেকের ভাইরোলজি বিভাগে একটি মেশিন দিনে তিনবার পরীক্ষা করা হয়। অনেক লোডের কারণে মেশিনকে বিশ্রাম দিতে হয়। তাই অনেক সময় স্যাম্পলগুলো জমে থাকে। হাসপাতালে করোনা ইউনিট শুরু থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজারের বেশি করোনা রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন এই অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মনে হয় হাসপাতালের কিছু অসাধু ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে বাইরে থেকে লোক এনে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা পরীক্ষায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অগ্রধিকার আগে দেয়া হচ্ছে। এরপর সুযোগ পাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ