Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ

অর্থমন্ত্রীকে চিঠি বিএবি’র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২০, ২:০৮ পিএম

আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) অর্থমন্ত্রীকে দেয়া এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছে।

সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত আবগারি শুল্কের হার বাস্তবায়িত হলে আমানতকারীরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়বেন। এতে একদিকে যেমন ব্যাংকগুলো তহবিল সংকটে পড়বে, অন্যদিকে আমানতের সুদের ওপর নির্ভরশীল আমানতকারীরা বিকল্প কোনো নন-ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। এ অবস্থায় আমানতকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নতুন হারে আবগারি শুল্ক আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন তিনি। চিঠির অনুলিপি অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়েছে।

বছরে ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয় এমন ব্যাংক হিসাবের ওপর ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। বাজেটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

ব্যাংকে জমানো টাকা ও লেনদেনের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধিকে সরকারি শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব হিসেবে দেখছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনে নিরুৎসাহিত হবে। ব্যাংকে টাকা না রেখে মানুষ নিজেদের ঘরে জমা রাখবে। এতে দেশের ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান তারল্য সংকট আরো বহুগুণ বাড়বে।

চিঠিতে বলা হয়, আমানতকারীদের সঞ্চয় বা আমানত ব্যাংকিং ব্যবস্থার রক্তপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর্থিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যাংক সংগৃহীত আমানত থেকে বিধি অনুযায়ী বিনিয়োগের মাধ্যমে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাই আমানত হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি।

এতে বলা হয়, চলমান করোনা মহামারীর প্রকোপে সাধারণ আমানতকারীদের সঞ্চয়ের সক্ষমতা ও প্রবণতা এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে সুদের হার ৯ শতাংশ করা হয়েছে। ঋণের সুদ কমে যাওয়ায় তহবিলের খরচ (কস্ট অব ফান্ড) কমানোর নিমিত্তে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে বাধ্য হয়েছে। সাধারণ আমানতকারীদের অনেকেই ব্যাংকে গচ্ছিত তাদের আমানতের বিপরীতে প্রাপ্ত সুদ বা মুনাফার ওপর নির্ভরশীল। তাই আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে আমানতকারীরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের টার্নওভার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে আমানতের প্রবাহ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এরই মধ্যে কমে গেছে।

এ অবস্থায় প্রস্তাবিত আবগারি শুল্কের হার বাস্তবায়িত হলে আমানতকারীরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়বেন বলে মনে করছে সংগঠনটি। বিষয়টি তুলে ধরে বিএবি বলেছে, আবগারি শুল্ক বাড়লে একদিকে যেমন ব্যাংকগুলো তহবিল সংকটে পড়বে, অন্যদিকে আমানতের সুদের ওপর নির্ভরশীল আমানতকারীরা বিকল্প কোনো নন-ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। ফলে তারা আরো বড় আর্থিক ঝুঁকিতে পড়বেন। তাই আমানতকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে নতুন হারে আবগারি শুল্ক আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দি এক্সাইজেজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট-১৯৪৪-এর আওতায় বর্তমানে ব্যাংক হিসাব ও বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক আদায় করা হয়ে থাকে। ওই আইনের প্রয়োগ সহজবোধ্য ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কতিপয় ধারা সংযোজন ও সংশোধনের প্রস্তাব করছি। এর পরের বাক্যেই অর্থমন্ত্রী আবগারি শুল্ক বাড়ানোর স্লাভগুলো উল্লেখ করেন। শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব ছাড়া পুরো বাজেটে ১৯৪৪ সালের আইনটি সহজবোধ্য ও যুগোপযোগী করার কোনো প্রস্তাব দেননি।

বর্তমানে কোনো ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ টাকার বেশি, কিন্তু ৫ লাখ টাকার কম থাকলে ১৫০ টাকা এবং ৫ লাখ টাকার বেশি, তবে ১০ লাখ টাকার কম হলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে এ দুটি স্তরের বিদ্যমান আবগারি শুল্ক অপরিবর্তিত রেখেছেন। কিন্তু আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন এর পরের স্তরগুলোতে। প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর থেকে কোনো ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম থাকলে ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। বর্তমানে এ স্তরের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। সে হিসেবে এ স্তরে আবগারি শুল্ক বাড়ছে ২০ শতাংশ।

১ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫ কোটি টাকার কম থাকলে বর্তমানে সাড়ে ১২ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক কেটে রাখে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৬০ শতাংশ আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ কোটি টাকার বেশি আছে এমন ব্যাংক হিসাবের ওপর। এ স্তরে বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

আবগারি শুল্ক কাটা হয় বছরে একবার। ব্যাংকের আমানত কিংবা ঋণ-দুই ধরনের হিসাবের ওপর এ শুল্ক কাটা হয়। কোনো ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ টাকার বেশি অর্থ একসঙ্গে লেনদেন বা জমা হলেই আবগারি শুল্ক কাটা শুরু হয়। ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক কাটা নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ বহু পুরনো। এ শুল্ক তুলে নেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন গ্রাহকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ