Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় বাড়িভাড়া কমলেও ঢাকায় বিপদে আছেন বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া উভয়েই

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২০, ৪:২৭ পিএম

করোনাকালে ঢাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে বেশ সমস্যায় আছে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা। বাড়িভাড়া দিতে না পেরে পরিবারসহ গ্রামে ফিরে গেছেন অনেকে, তাই বাড়িভাড়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বাড়িওয়ালা। আবার কেউ কেউ অভিজাত এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া যেখানে সেসব এলাকায় চলে যাচ্ছেন। ফলে ভাড়াটিয়ার অভাবে ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে। এমন কাহিনী হরহামেশা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। আবার কেউ কেউ করোনাকালে বাড়িভাড়া মওকুফ করার দাবিও করেছেন। কেউ কেউ মওকুফ করে মিডিয়ার কল্যাণে ওঠে এসেছেন আলোচনায়।

বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার মধ্যে ক্ষোভ, বিতর্ক নতুন নয়। এসব বিষয়ে গবেষণা না হলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে ওঠে এসেছে না তথ্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, কয়েক মাস ধরে বেতন পাইনি। খরচ কমানোর জন্য শুরুতে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আর সামলাতে না পেরে নিজেও চলে যাই গ্রামের বাড়িতে।

আসাদের মতো নিম্নবিত্ত নন, মধ্যবিত্তদেরও বাড়িভাড়ার খরচ যোগাতে বেগ পেতে হচ্ছে খুব। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ৬৬ দিন সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ছিল। সেসময় বন্ধ ছিল কলকারখানা, সকল ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কঠোর নির্দেশনার কারণে অচল হয়ে পড়েছিল অর্থনীতির চাকা, যা এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। দিনমজুর থেকে শুরু করে বড় বেতনের চাকুরে সবার জীবনেই কোন না কোন ভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদিকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলছে, সাধারণ ছুটির ৬৬ দিনে ছাঁটাই, প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কর্মহীনতা এসব কারণে দেশে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ মানুষ।

ঢাকায় বাড়ি ভাড়া কমেছে এমন তথ্য শুনে হয়ত অনেকেই খুব খুশি হবেন। কিন্তু এর পেছনে এখন যেসব গল্প শোনা যাচ্ছে তা বোধহয় খুশি হবার মতো নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকার একজন ভাড়াটিয়া বলছেন, "আমি করোনাভাইরাসের কারণে মাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি সেজন্য একটু বড় ফ্ল্যাট খুঁজছিলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আমার এক বন্ধু জানালো যে, সে গুলশান ২ এ তার তিন রুমের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছে। সে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া দিত। এখন সে ১৫ হাজার টাকায় যাত্রাবাড়ি বাসা নিয়েছে। আর আমি একই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি ২০ হাজার টাকা দিয়ে।একই ঘটনার আরেকটি অংশ হচ্ছে, তিনি এই ফ্ল্যাটটি কম ভাড়ায় পেয়েছেন। তিনি বলছেন, "বাড়িওয়ালা তাকে বলেছিল যে আপনার যাওয়ার দরকার নেই। আমি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া কম নিতে পারবো। কিন্তু তার পক্ষে সেটাও দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই নতুন ভাড়াটিয়া না পাওয়ার শঙ্কায় এরকম অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া কম নিতেও রাজি হচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষজনের আয়ে যে প্রভাব পড়েছে সেই বিবেচনায় বাড়িভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছিল কয়েকটি নাগরিক সংগঠন। বাড়িভাড়া মওকুফের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধনও করেছে মোমিন মেহেদীর নতুন ধারা বাংলাদেশ এনডিবিসহ বেশকিছু সংগঠন। সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে বাড়িভাড়া মওকুফের দাবিও জানান এনডিবি প্রধান মোমিন মেহেদী ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল শান্তা ফারজানাসহ নেতৃবৃন্দ। বেশকিছু ফ্লাটের মালিক আবদুল মান্নান জানান, দুইজন ভাড়াটিয়ার অনুরোধে তিন হাজার টাকা করে ভাড়া কমিয়ে দিয়েছি। আর নিচের তলায় একটা বিউটি পার্লার আছে তারা তিনমাস ভাড়াই দিতে পারেনি। তারা বাসাটাও ছাড়েননি। আমি তাদের এরকম সময়ে কিছু বলতেও পারছি না।

দেশের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাক এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে তখনই মানুষের আয়-রোজগারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আড়াই হাজার মানুষের উপর করা জরিপ খুব বড় আঙ্গিকের নয়, তবুও জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের উত্তরের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে রোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর যে সাধারণ ছুটি ছিল তাতে এই অংশগ্রহণকারীদের ৯৩ শতাংশের আয় কমে গেছে।

পুরনো ঢাকার বংশালের এক বাড়িওয়ালা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার দুটি ফ্ল্যাট খালি হয়েছে। সেগুলো এখন পর্যন্ত ভাড়াই দিতে পারিনি। তিনি এখন যা পান তাতেই ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ, বাড়ি নির্মাণে তাকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেটা শোধ করার পাশাপাশি তার নিজের সংসারও চলে বাড়িভাড়া দিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন বিবিসি বাংলাও করেছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৬ জুন, ২০২০, ১০:২০ পিএম says : 0
    সংবাদটা খুবই সত্য, আমি একজন বাড়িওয়ালা আমি কয়েকজনের নিকট থেকে ভাড়া পাচ্ছি নিয়মিত আবার কয়েকজন ভাড়াই দিচ্ছেন না। এখন আমি কি করতে পারি এটাই বিষয়। প্রথম দিকে এপ্রিল ও মে মাসে ভাড়া উঠেনি বললেই চলে ফলে আমাকে কানাডা থেকে দারোয়ান, কেয়ারটেকারদের বেতন এমনকি তাদের বোনাসের টাকাও কানাডা থেকে দুইবারে দুই হাজার ডলার পাঠাতে হয়েছে। অবশ্য এরমধ্যে রমজান মাসে যে খরচ আমি আলাদা ভাবে দিয়ে থাকি সেটাও দিতে হয়েছে। আমাকে ভাড়া না দিলেও আমি যাদেরকে বেতন দিয়ে চাকুরীতে রেখেছি তাদেরকে আমার বেতন দিতেই হবে কাজেই আমি এখান থেকেই ওদের জন্যে টাকা পাঠিয়েছি। এটাই নিয়ম তাই আমাকে মানতেই হচ্ছে, আমি হয়ত করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের জন্যে কিছুই করতে পারিনি তবে আমার উপর যারা নির্ভর করে তাদেরকে আমি ভালভাবেই রাখার চেষ্টা করেছি। তবে আমি আশাবাদি যারা আমার বাড়ি ছেড়ে চলেগেছেন তারাও ফিরবেন এবং কিছুটা হলেও এই তিন মাশের ভাড়া দিবেন। তাদের সাথেও আমার নিয়মিত ফোনালাপ হচ্ছে। তখন হয়ত আমার কাছে উদবৃত্য থেকে যাবে কিন্তু তখন আর মানুষের জন্যে করার কিছুই থাকবেনা। করোনা পৃথিবীকে এমন ভাবে নাড়া দিয়েছে যে, এধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সেটা কেহই কল্পনা করতে পারেনি। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে এই করোনা পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে জীবন ধারন করার ক্ষমতা দিন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Israfil Islam ১৭ জুন, ২০২০, ১২:১৭ পিএম says : 0
    সরকারের আমলাদের ভূল সিদ্ধান্তের কারনেই আমরা চরম ভোন্তিতে পড়েছি। ৫দিন ১০দিন করে লক ডাউন না দিয়ে যদি একবারে ১ মাসের জন্য কারফিউ দিয়ে দিতো তবে হয়তো আর এমন পরিস্থিতিতে পরতে হতো না। যাই হোক বর্তমানের লকডাউন শুধু ভিআইপিদের জন্যই ভালো, আমারা তো শেষ হয়েই গেছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Ibrahim ১৯ জুন, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    এভাবে বিবিসির নিউজ কেউ কপি করে????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ