Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাতা নির্ভর বাজেট দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২০, ৭:৩২ পিএম

বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ মূলত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর খাতের বাজেট মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর খাতের বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, (গত বছর ২ দশমিক ১৯ শতাংশ) যা মোট বাজেটের মাত্র শূণ্য দশমিক ৩৩ শতাংশ (গত বছর শূণ্য দশমিক ৩১ শতাংশ)। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার তুলনায় এ বাজেট খুবই অপ্রতুল। ভাতার উপর অধিক নির্ভরতা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উৎপাদনমুখী উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর কোন প্রতিফলন এ বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি। দেশে ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হলেও এবছর উপকারভোগীর সংখ্যা ও বাজেট পূর্বের মতো রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে তেমন কোন ভূমিকা রাখবে না।

রোববার (১৪ জুন) অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে ও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা’র সঞ্চালনায় ‘জাতীয় বাজেট ২০২০-২১: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান” শীর্ষক ভার্চুয়াল বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সভায় এসব কথা বলা হয়। বাজেট প্রতিক্রিয়াটি যৌথভাবে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন, সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসি-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউকেএইড, ডিজএবিলিটি রাইটস ফান্ড এবং ৫টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন-ডিসিএফ, এনসিডিডাব্লিউ, সীতাকুন্ড ফেডারেশন, টার্নিং পয়েন্ট ও ডাব্লিউডিডিএফ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ উপর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা। তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৫৫ হাজার বৃদ্ধি করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

আলবার্ট মোল্লা বলেন, প্রতিবন্ধী, বিধবা, এতিম (দুস্থ, অসহায়, অনগ্রসর) ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন এর জন্য ৪৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট করা উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বরাদ্দ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ অথচ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণায় মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সনদ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর মত শক্তিশালী আইনী কাঠামো আমাদের সামনে রয়েছে তথাপিও উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন ও অধিকার বিষয়টির সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি হয়নি।

তিনি এবং সভায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু দাবি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করেন। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সঠিক পরিসংখ্যানের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা, সকল অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় আগামী ৯ থেকে ১২ মাসের খাদ্য রেশনের ব্যবস্থা করা, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা জনপ্রতি মাসিক ন্যূনতম ১৫০০ টাকায় উন্নীত করা, বেকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেট বরাদ্দ রাখা, সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বিশেষ বীমা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অ্যাসেসটিভ টেকনোলজি সাপোর্ট ফান্ড, অ্যাকসেসিবল বুকস এন্ড টেকনোলজি ফান্ড গঠন, তথ্যগত প্রবেশগম্যতার নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেট বরাদ্দ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ।

উক্ত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থার দেশস্থ প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সুশীল সমাজ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, ঢাকার বাইরে যেমন-রংপুর, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ