পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনাজপুরের কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া, এখন রাজমিস্ত্রী! আর ময়মনসিংহের ৬৫ বছর বয়সী বিএ পাস শিক্ষক আবুল কালাম সংসারের ঘানি টানতে এখন রিকশাচালক। শিক্ষক নেতাদের প্রশ্ন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জীবন-জীবিকার তাগিদে আর কি করলে আপনার সহায়তা পাব? দাবি করলেন, এই খাতে ১০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা।
জানা যায়, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বছির বানিয়া বাজারস্থ টাওয়ার মোড়ের বাসিন্দা মোহাঃ গোলাম মোস্তফা ব্রাইটেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভালোই চলছিল তার জীবন-জীবিকা। হঠাৎ করোনা নামক ঝড় এসে যেন তার সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে তার স্কুল। স্কুলের পরিচালকের দুরাবস্থা দেখে বিবেকের তাড়নায় মাসিক প্রাপ্য বেতন চাইতে পারছেন না, সম্মানের ভয়ে রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণও নিতে পারছেন না। কাউকে কষ্টের কথা বলতেও পারছে না আর এই পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকেও কোন সহায়তা পান নি। পরিবারের আর্থিক কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করছেন এই গুণী শিক্ষক।
তার সাথে কথা বলে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, তার পরিবারের মানবেতর জীবন যাপনের কথা শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হল। চোখের কোণ বেয়ে ঝরে পড়ল জল কণা। তাপরও তার সন্তুষ্টির কথা জানাল- তার পরিবারের মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য রাজমিস্ত্রী কাজ করলেও তার সহকর্মীরা, কন্ট্রাক্টর, যাদের কাজ করছে তারা সবাই তাকে স্যার বলে সম্বোধন করছে। ওই শিক্ষক নেতা গণমাধ্যমকে জানান, আপনারা আমাদের এই বাস্তব চিত্রটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরুন। বলুন, আমাদের মর্যাদা আজ ভুলুন্ঠিত। রাজধানীর টিকাটুলীর সন্নিকটে অবস্থিত ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল কিডস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ডা. সিরাজুল আলম ভুইয়া বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিল্পীরা যেখানে আর্থিক সুযোগ পাচ্ছে, সেখানে জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক সমাজ কেনো বঞ্চিত হবেন? এই মহামারীতে বেসরকারি শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
এদিকে বিএ পাস ও ৬৫ বছর বয়সী আরেক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ থাকেন ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী এলাকাতে। করোনার ঝড় আসায় বন্ধ হলো তার আয় রোজগার। সেই শিক্ষক পরিবারের প্রয়োজনে ধরলেন রিকশার হাতল। শিক্ষক থেকে হয়ে গেলেন রিকশাচালক। হতভাগ্য আবুল কালাম আজাদের এমন জীবনকাহিনী জেনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার তিনি বিষয়টি জেনে রাতের বেলাতেই ওই বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। পরিবারটির হাতে তুলে দেন একটি সেলাই মেশিন, এক মন চাল, ৪ লিটার তেল, ৮ কেজি আলু, ৪ কেজি ডালসহ বেশ কিছু খাদ্যসামগ্রী।
আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৮১ সালে তিনি খুলনার দৌলতপুর কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিলেন। পড়াশোনা শেষে তিনি মাদারীপুর জেলাতে একটি স্কুলেও শিক্ষকতা করেছেন। ২০১০ সালে তিনি ময়মনসিংহ নগরীতে চলে আসেন। ৫ ছেলেমেয়ের মাঝে ২ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলেরা এখন বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, মে মাস থেকে তিনি শুরু করলেন ব্যাটারী চালিত রিকশা চালানো। এখন প্রতিদিন ৩-৪ শ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে অন্তত ডাল-ভাত জোগাড় হয়। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে এমন পরিশ্রমের কাজটা করা ছাড়া তার আর বেঁচে থাকার কোনো পথ খোলা নেই।
এবিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতির মহাসচিব শেখ মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বেসরকারি শিক্ষকদের সহায়তা-করুণার দরকার নেই, তাদের জন্য এই বাজেটে ১০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ চাই। করোনাকাল শেষ হলে যে টাকা স্কুলগুলো ইনশা আল্লাহ পরিশোধ করে দেবে। সরকারি পাঠ্যবই বিতরণ, জরিপ পরিচালনা ও সমাপনী পরীক্ষার ন্যায় উপজেলা শিক্ষা অফিস এই টাকা বিতরণ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আদায়ের ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।
এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভুইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, দুজন শিক্ষকের যে খবর পেলাম, তাদের মতো এমন বিপদে আরো অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাদের তথ্য আসলে প্রকাশিত হয়নি। এসব ঘটনা আমাদের মানবিকতাকে খুবই নাড়া দেয়। তিনি বলেন, জাতি গঠনে এবং শিক্ষা প্রসারের স্বার্থে সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদের আলোকে রাষ্ট্রের পক্ষে যারা সহায়তামূলক কাজ করছে, তাদেরকে সহায়তা করা এখন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। তাই এই বাজেটে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।