পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘনঘোর মেঘ-বাদলের মৌসুম দরজায় কড়া নাড়ছে। গ্রীষ্ম ঋতু ‘পালানো’র পথ খুঁজছে! কেননা আবহাওয়ার ব্যতিক্রম দিকটি হলো এবার এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) এবং মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে) মাসে শীতল মেঘমালা ঘন ঘন বৃষ্টির ধারাপাত হিমেল হাওয়ার সামনে তেজ দেখাতেই পারেনি গ্রীষ্মের তাপদাহের। মে মাসজুড়ে সমগ্র দেশে স্বাভাবিক হারের তুলনায় গড়ে ১৭ দশমিক এক ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মাঝখানে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দুর্যোগ বাদ দিলে করোনাকালে আবহাওয়া-প্রকৃতিতে নিরবচ্ছিন্ন অপার প্রশান্তির ছায়া আর স্বস্তি বজায় রয়েছে। ১৭ মে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ‘স্কোর’ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে যায় রাজশাহী ও যশোরে। অথচ দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস ছিল ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে দেশে ৪ থেকে ৬টি মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের।
এ অবস্থায় চলতি জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু অর্থাৎ পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষা বিস্তার লাভ করতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া জুন মাসে মৌসুমী ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল (রংপুর থেকে সিরাজগঞ্জ), উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট-ময়মনসিংহের একাংশ) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (বৃহত্তর চট্টগ্রাম) কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারতে অতি বর্ষণে ঢলের সঙ্গে দেশে অতিবৃষ্টির পানি যোগ হয়ে এ ধরনের ‘ছোট’ বন্যায় ডুবে যেতে পারে বিভিন্ন এলাকা। বাড়বে জনদুর্ভোগ।
গতকাল বিকেলে আবহাওয়া-জলবায়ু, স্পারসোর বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দীর্ঘমেয়াদি উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বৈশি^ক আবহাওয়া-জলবায়ু তথ্য-উপাত্ত, মানচিত্র, মডেল-মডিউল, এল-নিনো অথবা লা-লিনা অবস্থা প্রভৃতি উপাদান বিশ্লেষণ করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ।
অন্যদিকে আবহাওয়া ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, জুনে দেশে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও তখন বঙ্গোপসাগরে এক বা দু’টি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমী নিম্নচাপে সমুদ্রের মেঘমালা স্থলভাগে ধেয়ে গিয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত, বজ্রবৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি বৈরী আবহাওয়ায় তখন তাপমাত্রার হেরফেরে কালবৈশাখী ঝড়, ভয়াবহ টর্নেডোর মতো ঘনঘটা তৈরি হতে পারে। হঠাৎ সীমিত জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যেতে পারে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক রাস্তাঘাট নিম্নাঞ্চলের ঘন বসতি এলাকাগুলো। নগরবাসী পানিবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়বেন।
চুয়েটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিকের গবেষণায় জানা যায়, গত ৫০ বছরের হিসাবে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের হার প্রতি বছর ক্রমেই বৃদ্ধির দিকে। বিপরীতে বাড়ছে তাপমাত্রার হার। খুব সীমিত জায়গায় হঠাৎ করে অতিভারী বর্ষণের প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশিহারে। নগরাঞ্চলে পানিবদ্ধতার এটি বড় দিক।
সভা সূত্র জানায়, গত মে মাসে দেশে সার্বিকভাবে গড়ে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিভাগওয়ারি হিসাবে বৃষ্টিপাতে তারতম্য রয়েছে। যেমন- রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৮০ শতাংশ, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রায় ৫০ ভাগ বেশিই বর্ষণ হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ ভাগ, বরিশাল বিভাগে ২৬ ভাগ বৃষ্টিপাতে ছিল ঘাটতি।
এদিকে গত ১৫ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন আন্দামান সাগর থেকে সৃষ্ট নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ১৬ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে রূপ নেয়। এটি ১৭ মে বিকেলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ১৮ মে সন্ধ্যায় সুপার সাইক্লোন এবং পরবর্তীতে এটি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও কিছুটা দুর্বল হয়ে ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ আকারে ২০ মে সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। রাত ৯টায় ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ আকারে সাতক্ষীরা জেলা ও আশপাশে অবস্থান নেয়।
পরবর্তীতে এটি ধীরে ধীরে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথমে ঘূর্ণিঝড়, পরবর্তীতে দুর্বল ধাপে ধাপে গভীর নিম্নচাপ, নিম্নচাপ ও লঘুচাপে পরিণত হয়ে কেটে যায়। এ সময় পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সংযাগের ফলে এবং বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরের জোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় সারাদেশে ভারী বর্ষণ হয়।
সর্বশেষ আবহাওয়া-
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বর্ষণ রংপুরে ১১৩ মিলিমিটার। এ সময় দেশের বেশিরভাগ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৫.৮, ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ৩৫ ও সর্বনিম্ন ২৫.৬ ডিগ্রি সে.। তবে সৈয়দপুরে পারদ ২২ ডিগ্রিতে নেমেছে। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, কোথাও বিক্ষিপ্ত ভারী বর্ষণ, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া, বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে ৪৮ ঘণ্টা পর ৫ দিনে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আভাস রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।