Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠাঁই নেই হাসপাতালে

করোনার সাথে সাধারণ রোগীও বাড়ছে

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২০, ১২:৪৯ এএম

দিন দিন বাড়ছে দেশে করোনার ভয়াবহতা। বাড়ছে করোনা শনাক্ত রোগী। অধিকাংশই বাসায় চিকিৎসা নিলেও যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনী, লিভারসহ অন্যান্য রোগের রোগীরাও অসুস্থ হয়ে রাজধানীর নামী-দামী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আর দেশে একসঙ্গে করোনা ও স্বাভাবিক রোগীর সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
যদিও করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত যে হাসপাতালগুলো আছে সেই হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। আবার অনেক রোগী সেই হাসপাতালগুলোতে যাওয়ার জন্যে আস্থা পাচ্ছে না। তাই রাজধানীর নামী-দামী বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেক রোগী। আর এতে ওইসব হাসপাতালেও ঠাঁই হচ্ছে না রোগীর।
সূত্র মতে, বিশেষায়িত করোনা হাসপাতালগুলো করোনার রোগীর সংকুলান হচ্ছে না। পাশাপাশি দেশের বেসরকারি বড় হাসপাতাল এভারকেয়ার (অ্যাপোলো), ইউনাইটেড, স্কয়ার ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগীর চাপ বেশ। আর ভর্তি রোগী ছাড়ও হচ্ছে কম। তাই নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেনা সরকারি-বেসরকারি এসব হাসপাতালে। তাই অনেক রোগীকে চিকিৎসা সেবা পেতে নানা ধরণের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
যদিও জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকা করোনা ভাইরাস সংক্রমিতদের চিকিৎসা সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার বিকল্প দেখছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন ধরণের অবহেলার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে শিগগিরই রাজধানীর আরও একাধিক বেসরকারি মেডিকেলকে করোনার জন্য বিশেষায়িত করা হবে। এছাড়া সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালে সব ধরণের রোগীর সেবা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই রোগী বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারলে ম্যানেজার (প্রশাসন) জামিল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশি। বেড ফাঁকা নেই। এমনকি ভর্তি রোগী বেরও হচ্ছে না। তাই ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষমান রোগীও ভর্তি করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। এমনকি রোগীর চাপে আগে থেকে নির্ধারিত অপারেশনের রোগীদেরও নতুনভাবে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদেরকেও পরবর্তীতে আসার জন্য বলা হচ্ছে।
করোনা বিশেষায়িত রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. এহেতেশামুল হক ইনকিলাবকে বলেন, করোনা ইউনিটে রোগীদের প্রচÐ চাপ। একজন ছাড় পেলে অপেক্ষারত থেকে অন্য একজনকে ভর্তি করা হচ্ছে। এমনকি ১ হাজার বেড করা হলেও ৫ মিনিটেই ভরে যাবে এ রকম অবস্থা। তবে করোনার লক্ষণ থাকা রোগীর ভিড় অনেক বেশি। ডা. মো. এহেতেশামুল হক বলেন, সাধারণ ওয়ার্ডে এতোদিন রোগী কিছুটা কম ছিল। কিন্তু কয়েকদিন থেকে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
রাজধানীর আরেক বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনা ইউনিটে বেড ফাঁকা নেই। সাধারণ ইউনিটে করোনা শুরু হওয়ার প্রথম দিকে রোগীর চাপ কম ছিলো। কিন্তু দিনে দিনে বাড়ছে সাধারণ রোগীর চাপ। এটা অধিকাংশ বেসরকারি নামী-দামী হাসপাতালের চিত্র।
অপরদিকে করোনার জন্য বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জামিল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রোগীর চাপ অনেক। ২৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও ৩শ’র বেশি রোগী ভর্তি আছে। গত ২ সপ্তাহ থেকেই আইসিইউ বেড খালি হচ্ছে না। ছাড় না পাওয়ায় নতুন করে আইসিইউতে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ওয়ার্ডেও কিছু খুবই খারাপ রোগী ভর্তি আছে। তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা, বয়সসহ বিভিন্ন বিষয় দেখে আইসিইউতে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি শুধু করোনা বিশেষায়িত এই হাসপাতালেই নয়; সব সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালেই একই চিত্র। ব্রিগ্রেডিয়ার জামিল আহমেদ বলেন, দেশে প্রতিদিন যেভাবে রোগী বাড়ছে সেভাবে ভর্তি রোগী ছাড় হচ্ছে না। তাই বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার করোনা বিশেষায়িত বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল ইউনিট-২ এবং বার্ন ইউনিট, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরা ও মিরপুর এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নারায়নগঞ্জে করোনা রোগীদের ভর্তি করার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, সারাদেশে ৫০ এর বেশি শয্যা থাকা সব হাসপাতাল, ক্লিনিকে সাধারণ ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের কোনো স্থানে রোগীরা যেন বিনা চিকিৎসায় না থাকে। যে কোন রোগে আক্রান্ত হলেই নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা যেন দেয়া হয়। তাই সামনে রোগী বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
সূত্র মতে, এতোদিন দেশে ৯৭টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা সেবা চলছিল। এসব হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৯শত ৬৪টি। এবং আইসিইউ শয্যা ৩৯৯টি। সম্প্রতি ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে সব ধরণের রোগীদের চিকিৎসার নির্দেশ দেওয়ায় আরও ৩শ’ হাসপাতাল যোগ হলো। আর তাই কোভিড রোগীদের জন্য উন্মুক্ত হবে বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় ৯০ হাজার সাধারণ এবং সাতশোর মতো আইসিইউ শয্যা। আরো যোগ হবে সরকারি হাসপাতালের প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ এবং দুইশোর মতো আইসিইউ শয্যা।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ