Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতিকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন আকার ২০ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা মেগা প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রূপপুরে সর্বনিম্ন পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরে স্বাস্থ্য খাতের যে কোনো প্রকল্প অনুমোদনে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

সাতটি মেগা প্রকল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) চূড়ান্ত করছে পরিকল্পনা কমিশন। নতুন এডিপি’র আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ করা হবে। এ উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধ এবং অর্থনীতিতে এর অভিঘাত মোকাবেলায় স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরের এডিপি এই দুই খাতে আরো প্রকল্প সংযোজনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এজন্য প্রকল্পের স্বচ্ছ এবং দ্রæত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। দুর্নীতিকে অংকুরেই ধংস করতে হবে। 

গতকাল মঙ্গলবার গণভবনের সাথে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ব্রিফ করে এসব তথ্য জানান। এনইসি সভায় গণভবন থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে এনইসি সভায় অংশগ্রহণ করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান প্রমুখ।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, করোনাকালে এডিপি বাস্তবায়নে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং। কারন এখন পরিবেশ পরিস্থিতি ভাল না। এজন্য চলতি অর্থ বছরের এডিপির বাস্তবায়ন হার কমেছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের মান নিশ্চিত করতে বিভাগ ভিত্তিক সফর শুরু করেছিলাম। কাজও হচ্ছিল বেশ। কিন্তু করোনার কারনে সেটা আর করা যায়নি। তবে আগামী বছরে এডিপির মান সম্মত বাস্তবায়ন হবে প্রধান লক্ষ্য। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের নতুন কোন প্রকল্প আসলে অনুমোদেনে অগ্রাধিকার পাবে
এডিপিতে মোট সাতটি মেগা প্রকল্পে ৩৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে উন্নয়ন বাজেটে। উন্নয়ন বাজেটে মেগা প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সর্বনিম্ন পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হয়েছে। সমাপ্ত হবে ২০২২ সালে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ।

করোনা সঙ্কটের মধ্যেই চলমান পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১৯ ও ২০ নম্বর পিলারের উপর ২৯তম স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৪ হাজার ৩৫০ মিটার। পদ্মাসেতুতে স্প্যান বসানো বাকি এখন ১২টি। সেতুর কাজ সামনে আরো এগিয়ে নিতে এই প্রকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো ছিল। তবে কভিড১৯ প্রকল্পের গতিরোধ করেছে। এই জন্য নতুন অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পদ্মাসেতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে পদ্মাসেতু রেল লিংক প্রকল্প। রাজধানীর কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া-কেরাণীগঞ্জ-শ্রীনগর থেকে মাওয়ায় পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে নতুন অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এই কেন্দ্র থেকে। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে নতুন এডিপিতে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এদিকে খাত ভিত্তি বরাদ্দে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী এডিপিতে মোট বরাদ্দের মধ্যে বড় অংশ ১০ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। করোনা সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্ব দিয়ে ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে ২ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বরাদ্দ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১১০ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে চলতি বছরের চেয়ে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর পরেই পরিবহন খাতে ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সব থেকে কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা।

এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ৩৮৯, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৪৯১, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৯ হাজার ৮৬৫, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ৪০৪ ও সেতু বিভাগে ৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
১০ মাসে ৪৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন: উন্নয়ন বাজাটে খরচ ৯৮ হাজার ৮৪০ কোটি চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১০ মাসে সরকার খরচ করেছে ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা টাকার অংকে ৯৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানান।
করোনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এডিপির ৪৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। হাতে দুই মাস বাকি আছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ১০ মাসে টাকা ভালো ব্যয় করেছি তবে করোনাভাইরাস না থাকলে আরো ভালো করতাম। গত বছর এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ যা টাকার অংকে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি। কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, আমরা এবারের এডিপিতে স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। স্বাস্থ্যখাতে ২ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দিয়েছি। কৃষি খাতেও ১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। প্রধানন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন দেশের প্রয়োজন বিবেচনায় যে কোন সময় বরাদ্দ বাড়ানো যাবে। আপনারা প্রকল্প নিয়ে আসুন জনকল্যাণমুখী হলে অনুমোদন দেয়া যাবে। বর্তমানে ডাক্তার-নার্স, পুলিশ প্রশাসন ও যে সব সরকারি কর্মকর্তারা কভিড-১৯ মোকাবেলা কাজ করছেন সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বলে জানান এম এ মান্নান।



 

Show all comments
  • MIR SHAHEDUR RAHMAN ২০ মে, ২০২০, ৩:৫০ এএম says : 0
    দুর্নীতি রোধ করতে ডিজিটালিজশন এবং সব কিছু অনলাইন বেসড করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ