Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর বৃদ্ধির তোরজোড়

জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২০, ৭:৪৭ পিএম

আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে তামাক কোম্পানিগুলোর কূটকৌশল অব্যাহত রয়েছে। মহামারী করোনার সংক্রমণ এড়াতে সরকারী অনেক কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থমন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কমদামী সিগারেটের জন্য চলমান সর্বনিম্ন স্তরের (প্রতি ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ৩৭টাকা) নিচেও আরো একটি নতুন স্তর চালুর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

অথচ সরকার তামাকের ব্যবহার কমাতে প্রতিবছর সিগারেটের সর্বনি¤œ মূল্য বৃদ্ধি করে চলছে। সেখানে নতুন আরও একটি মূল্যস্তর চালু যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি হিসেবে দেখা দিকে বলে মনে করছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরণের জনস্বাস্থ্যবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তেমনি অন্যদিকে কমদামে সিগারেটের সহলভ্যতা সৃষ্টির জন্য তামাকের ব্যবহার আরও বাড়বে।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের কিছু কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোশে কমদামী সিগারেটের জন্য চলমান সর্বনিম্ন স্তরের (প্রতি ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ৩৭টাকা) নিচেও আরো একটি নতুন স্তর চালুর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সূত্র জানায়, এসডিজি’র ৩ নম্বর লক্ষ্য অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগ ৩০ শতাংশ এ কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাকের ব্যবহার। গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ২৬ হাজার লোকের অকালমৃত্যু হয়েছে যা এ সময়ে সকল মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, পাশাপাশি তামাক জনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে যা বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১ দশমিক ৪ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর তামাকের উপর উচ্চহারে করারোপ, মূল্যবৃদ্ধি, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী স্থাপন, আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলমান রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় (২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠন) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিগারেটের উপর উচ্চহারে করারোপসহ বিগত ৫বছর ধরে সিগারেটের নূন্যতম মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সিগারেটের ব্যবহার কমতে থাকবে এবং সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির সুফল বয়ে আনবে।

এদিকে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বলেছে, সরকারের সদিচ্ছার ফলে গতবছর সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বনি¤œ মূল্য ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকার সিগারেটের করকাঠামোর জটিল স্তরপ্রথা (লো, মিডিয়াম, হাই, প্রিমিয়াম) বাতিল করার জন্যও সক্রিয় অবস্থান রয়েছে। তাদের মতে, ধীরে ধীরে স্তরপ্রথাকে কমিয়ে এনে সকল সিগারেটের জন্য একটি সরল ও কার্যকর কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

যদিও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও প্রধামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), এলায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ (এএফআইবি) এবং মাদকদ্রব্য ও নেশা বিরোধী কাউন্সিল (মানবিক) প্রতি বছরের ন্যায় আসন্ন বাজেটে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বনি¤œ মূল্য ৪৭ টাকা নির্ধারণ এবং সিগারেটের করকাঠামোর ৪ স্তরকে কমিয়ে ৩ স্তরে আনার জন্য দাবি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে তামাক বিরোধী সংগঠন মানবিকের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট পারভীন আক্তার বলেন, এটা বাস্তবায়ন হলে বিগত ১৫ বছরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিফলে যাবে এবং প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিবছর তামাকের উপর করবৃদ্ধির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অর্থাৎ চুক্তি অনুযায়ী পূর্বের চেয়ে বর্তমান বাজেটে সিগারেটের মূল্য কমে গেলে চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক আচরণ প্রকাশ পাবে যা সরকারকে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ