রোগজীবাণু নিয়ে সবার মধ্যেই সংশয় বিরাজ করে। নিজের মাথার চুল থেকে পরনের কাপড়, দাড়ি ও পায়ের জুতা নিয়েও চিন্তার শেষ নেই। ঘরের বাইরে গেলে কি করোনাভাইরাস পরনের কাপড়ে আটকে যেতে পারে? জুতা কতটা ভাইরাস বহন করে? দাড়ি ও মাথার চুলে কি ভাইরাস ঘাপটি মেরে থাকতে পারে? মানুষের মনে এমন হাজারো প্রশ্নের ভিড়।

আর এসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার ব্যবস্থা করেছে নিউইয়র্কের একটি সংবাদ মাধ্যম। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরনের কাপড়-জুতা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কম সময়ের জন্য বাড়ি থেকে বের হলে কাপড় পাল্টানোরও দরকার নেই। তবে হাসপাতাল বা বাজারের মতো জনবহুল জায়গায় গেলে অবশ্যই পরনের কাপড় নিয়ে সতর্ক হতে হবে। ঘরে সাধারণ ডিটারজেন্টে কাপড় ধুয়ে দিলেই যথেষ্ট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের ডা. অ্যান্ড্রু জনস্কি ও ভার্জিনিয়া টেকনোলজির অ্যারোসল বিজ্ঞানী ডা. লিনসে মারের যুক্তি, ‘আমরা বাতাসের মধ্যে ডুবে আছি। কিন্তু আমাদের গতি কম থাকায় ভাসমান কোনও জীবাণু পরনের কাপড়ে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ঠিক যেমন গাড়ির গতি কম থাকলে পোকামাকড়ের উইন্ডস্ক্রিনে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গতি বাড়লে বাড়ে সম্ভাবনা। অর্থাৎ, গতি কম থাকার জন্যই পরনের কাপড়ে ভাইরাস লেগে গেলেও তার ‘লোড’ অনেক কম হবে। ফলে, দ্রুত তা শুকিয়ে যাবে।’

মার্কিন গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, করোনা বাতাসে কয়েক মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। তবে মশা-মাছির মতো তা ওড়ে না। বাতাসের অভিমুখে ভেসে যায়। কাছাকাছি কোনও সংক্রামিত মানুষ হাঁচলে বা কাশলে তবেই এই সম্ভাবনা তৈরি হয়।

গবেষণা বলছে, ধাতব সামগ্রীর উপর ৪৮ ঘণ্টা এবং প্লাস্টিকের উপর ভাইরাস ৭২ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। ২০০৫ সালে সার্সের সময় কাপড়ের গাউনের উপর পরীক্ষা চলেছিল। তখন দেখা গিয়েছিল, সুতির বস্ত্রের উপর করোনা গোত্রের ভাইরাস জীবন হারায় তাড়াতাড়ি। কারণ, ভাইরাসের গায়ে যে লিপিডের আবরণ, তা সুতির কাপড়ে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা ড্রপলেট আয়তনে খুবই ছোট হয়। বাতাসে ভাসার পর আরও ছোট হয়ে যায়। ফলে সংক্রমণের জন্য যত পরিমাণ ভাইরাল লোড দরকার, তা বাতাসে থাকে না। যদি না কেউ আচমকা গায়ের উপর হেঁচে দেয়। তেমন হলে কিন্তু কাপড় ধুয়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।

মাথার চুল দাড়িগোঁফ নিয়েও অনেকে দুশ্চিন্তায়। করোনা আতঙ্কে কেউ কেউ নেড়া হয়ে গেছেন! যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, পোশাকের মতোই চুলদাড়িতে ভাইরাসের বেশিক্ষণ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। তাই যত বার বাইরে যাবেন, ততবার গোসল করলে উল্টো ঠান্ডা লেগে বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে বার বার হাতমুখ ধুতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির অধ্যাপক লিন্ডিয়া মোরাস্কার মতে, এই সময় জুতা নিয়ে ঘরে না ঢোকাই ভাল। বরং বাইরে শু র‌্যাকে জুতা রেখে খালি পায়ে ঘরে ঢুকুন। তবে বাজার বা মুদি দোকানে গেলে মাটির সঙ্গে ভাইরাস জুতার সোলে আটকে থাকার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। আর সাবধানতার জন্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ভাল।