পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার মধ্যেও ঝুঁকিমুক্ত কাজ করা সম্ভব : মো. শহীদুল হাসান
করোনা সঙ্কটে থমকে আছে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। প্রায় দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ। আর্থিক ও শ্রমিক দুই সঙ্কটেই এ দুই মেগা প্রকল্পের কাজ মাঝপথে আটকে গেছে। চলতি বছরের অক্টোবরে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটা অংশ খুলে দেয়ার কথা ছিল। করোনা সঙ্কটে তা আর হচ্ছে না। তবে শিগগিরি কাজ শুরু হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি খুলে দেয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, আগামী বছরের ডিসেম্বরে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর করার কথা। করোনা পরিস্থিতিতে তা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল হাসান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ হয় মেশিনে। প্রি ফেব্রিকেশন সেন্টারে হয় কিছু কাজ। স্কিল ওয়ার্কার দিয়ে এসব কাজ করা হয়। সুতরাং করোনার সংক্রমণরোধে দূরত্ব বজায় রেখে এসব কাজ করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকাগুলো ঘেরাও করা থাকে। সেখানে যারা কাজ করছে তাদেরকে বাইরের পরিবেশে যেতে না দিলেই হলো। পদ্মাসেতু প্রকল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে কিন্তু বাহির থেকে কেউ ঢুকতেও পারবে না, আবার ভিতরের শ্রমিকও বাইরে বেরুতে পারবে না। শ্রমিকদের একটা ইয়ার্ডের মধ্যে রেখে সময়মতো নিজস্ব পরিবহনে তাদের আনা নেয়া করলে ভাইরাস সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।
রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কাওলা থেকে শুরু হয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে বনানী পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। থাইল্যান্ড ভিত্তিক ইটাল-থাই ও চীনের সিনোহাইড্রো ও সিএসআই শেয়ার ভাগাভাগি করে এটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৫ সাল থেকে নির্মাণ শুরু হওয়া এ প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অর্থসঙ্কটের কারণে কাজটি ধীর গতিতে এগোচ্ছিল। শুরুর প্রথম তিন বছরে কাজ হয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশের। এ অবস্থায় ২০১৭ সালে বিনিয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় ইটাল থাইয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিল সরকারের সেতু বিভাগ। এ সময় অর্থ জোগান দিতে চীনের সিনোহাইড্রোকে ৪৯ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রæত শেষ করার প্রতিশ্রæতি দেয় ইটাল থাই। কিন্তু তাতেও গতি পায়নি প্রকল্পটি। এর মধ্যে আরো প্রায় আড়াই বছর কেটে গেলেও অর্থ যোগান অনিশ্চিত ছিল। সবশেষে চায়না শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল করপোরেশন গ্রæপ লিমিটেড (সিএসআই) কে ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রোকে ১৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করে ইটাল থাই।
গত বছরের ২৫ ফেব্রæয়ারি সেতু ভবনে ঋণ চুক্তি কার্যকর করতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান লেন্ডার ও গ্রান্টরের মধ্যে সরাসরি চুক্তি সই হয়। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান লেন্ডার ও অর্থ বিভাগের মধ্যে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) চুক্তি সই হয়। এরপর চীনের এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবিসি ব্যাংক প্রকল্পের অর্থ ছাড় করবে বলে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে অর্থায়ন সমস্যা থাকলেও কাজ বন্ধ ছিল না। ধীরগতিতে হলেও চলছিল। করোনা সঙ্কটে গত দুই মাস ধরে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ। চীনের উহানে করোনাভাইরাস আক্রমণের পর থেকেই এই প্রকল্পের কাজের গতি কমতে শুরু করে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আকতার জানান, এই প্রকল্পের জন্য টাকা-পয়সার সব চুক্তিই হয়ে গিয়েছিল। শুধু চীন থেকে টাকা ছাড় করার বাকি ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই অর্থছাড় বিলম্বিত হয়। তার পরও কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমরা আবারও কাজ শুরু করব। যে সময় নষ্ট হয়েছে সেটি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের প্রথম ভাগে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ভাগ খুলে দেয়ার চিন্তা রয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তরা থেকে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজও এগিয়ে যাচ্ছিল দ্রæতগতিতে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাস ধরে বন্ধ আছে নির্মাণকাজ। চলতি বছরের মার্চে প্রকল্পটির সার্বিক গড় অগ্রগতি ছিল ৪৪ শতাংশ। এপ্রিলেও অগ্রগতির হার আটকে ছিল ৪৪ শতাংশের ঘরেই।
প্রকল্প সূত্র জানায়, গত দুই মাসে কেবল সামান্য অগ্রগতি হয়েছে উত্তরায় ডিপো এলাকার উন্নয়নকাজে। প্রকল্পের প্যাকেজ ১ ও ২-এর মাধ্যমে ডিপোর কাজ করা হচ্ছে। প্যাকেজ ৩, ৪, ৫ ও ৬-এর মাধ্যমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের এলিভেটেড ও স্টেশন নির্মাণকাজ হচ্ছে। এ কাজে সবচেয়ে এগিয়ে আছে প্যাকেজ ৩ ও ৪। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। গত মার্চে এসব কাজের সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ, যা চলকি মে মাসেও একই অবস্থানে আছে।
প্যাকেজ ৫-এ আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার এলিভেটেড ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি মার্চে ছিল ৪২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। একইভাবে দুই মাস ধরে ৪৪ শতাংশের ঘরে আটকে রয়েছে প্যাকেজ ৬-এর নির্মাণকাজের অগ্রগতি। এ প্যাকেজের মাধ্যমে কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার এলিভেটেড ও চারটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
একইভাবে থেমে আছে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজও। সাবস্টেশন নির্মাণ ও বৈদ্যুতিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে প্যাকেজ ৭-এর মাধ্যমে, যার অগ্রগতি দুই মাস ধরে আটকে আছে ৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশে। ৮ নম্বর প্যাকেজের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে মেট্রোরেলের ইঞ্জিন ও কোচ। ইঞ্জিন ও কোচগুলোর নির্মাণকাজ চলছে জাপানে। জাপানেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ থাকায় মেট্রোরেলের ইঞ্জিন-কোচ নির্মাণকাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপানে মেট্রোরেলের প্রথম সেটের নির্মাণ শেষ হয়েছে। জাপান ও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ হলে ট্রেনটি বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। দ্বিতীয় সেট ট্রেনের নির্মাণকাজ বর্তমানে চলছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে সব হিসাব-নিকাশ আরো জটিল করে তুলেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। দুই মাস হতে চলল, ভাইরাসটির কারণে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ বন্ধ। এ অবস্থা আরো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কাও আছে। সরকার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালুর যে ঘোষণা দিয়েছিল, তা নিয়ে আগে থেকেই শঙ্কা ছিল। করোনা পরিস্থিতি এসে সেই শঙ্কা আরো প্রকট করে তুলেছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বরে চেষ্টা করে কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।