পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
করোনার মহামারীতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। টালামাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। এই মহামারীর প্রভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশও। বিশ্বের মতো ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশের আর্থিক খাত। তৈরি পোশাক খাতের পরই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ইতোমধ্যে উঠে এসেছে পোল্ট্রি শিল্প। এই শিল্পে প্রতিদিনই বাংলাদেশের অবস্থানের অগ্রগতি হচ্ছে। দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে শিল্পটি। আশির দশকে যেখানে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ছিলো মাত্র ১৫শ’ কোটি টাকা, বর্তমানে সেখানে পোল্ট্রি শিল্পের বিনিয়োগ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এবং এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জিডিপি’তে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় দেড়কোটি মানুষ এই পোল্ট্রি শিল্পের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাপন করছে। যার ৪০ শতাংশ নারী। গার্মেন্টস শিল্পের পর পোল্ট্রি শিল্পই নারীদের বৃহৎ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
কিন্তু মহামারী করোনায় চরম সঙ্কটে পড়েছে এই শিল্পটি। বাজারে পোল্ট্রি পণ্যের দরপতন এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে সাধারণ খামারি থেকে শিল্প উদ্যোক্তারা। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ এবং লকডাউনের মধ্যে থাকায় প্রতিদিনই এ ক্ষতির পরিমান বাড়ছে। এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে এই শিল্প। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে বড় ধরণের সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে এই শিল্পকে। তবে বড় ধরণের ক্ষতির পরও আশা দেখছেন এই শিল্পের উদ্যাক্তারা। তাদের মতে, গার্মেন্টস খুলেছে, রেস্টুরেন্ট খুলেছে পাশাপাশি বিয়ে, অনুষ্ঠানাদিসহ জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলে আস্তে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে। তবে বর্তমান সঙ্কটে অনেক ছোট খামারী বিপাকে পড়েছেন। কিছু খামারী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন, কিছু বন্ধের পথে। এই ক্ষুদ্র খামারীদের বাঁচাতে সরকারের প্রণোদনার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রয়োজন বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীদের মতে, সরকার এই শিল্পের দিকে সুনজর দিলে আবারও ঘুরে দাড়াবে এই শিল্প। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের অন্যতম মাধ্যম হবে এই পোল্ট্রি শিল্প।
বিশেষজ্ঞরা এই শিল্পকে বাঁচাতে খামারীদের ভর্তুকি, সহজ শর্তে ঋণসহ প্রণোদনার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সহনীয় মূল্যে খামারিদের প্রয়োজনীয় ফিড, মেডিসিন, ভ্যাকসিন, এডিটিভ্স সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবহন খাতের চাঁদাবজি বন্ধ করা, কাঁচামাল আমদানির উপর শুল্ক মওকুফের কথা বলেছেন। এছাড়া পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট খামারি এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষনের আওতায় এনে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে এই শিল্প থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আয় করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান ইনকিলাবকে বলেছেন, চারদিক থেকেই পোল্ট্রি শিল্পটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। করোনার ক্ষতিতে পড়ে ছোট ও মাঝারি খামারিরা উৎপাদনের বাইরে চলে যাবেন। এখন এ শিল্প ধরে রাখতে তাঁদের সহায়তা দিতে হবে। অল্প সুদে ঋণ, ঋণকে পুনঃতফসিলের ব্যবস্থা করা এবং নগদ সহায়তা দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা করোনার কারণে নানামুখী সমস্যায় বিপাকে পড়েছেন। চট্রগ্রামের বাঁশখালী পৌর শহরের নিয়াজরপাড়া এলাকার এগ্রো আর্থ এর মালিক মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন জানান, তার মালিকানাধীন ১২টি মুরগি খামার বতর্মানে বন্ধ হওয়ার অবস্থা। করোনার প্রভাবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর মালিকানাধীন মুরগি খামারের প্রায় দেড় লাখ গ্রীণ চিকেন, সোনালী মুরগি এবং লেয়ার মুরগি অনেকটাই পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। বরিশালের উজিরপুরের শোলকের মো. নূরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, তার দীর্ঘদিনের পোল্ট্রির খামার করোনার থাবায় শেষ হয়ে গেছে। খাবার দিতে না পেরে কম দামে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন তিনি।
গাজীপুর জেলা পোল্ট্রি সামগ্রী বিক্রেতা বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি এসএম মোকসেদ আলম বলেন, প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য এবং যুবকদের বেকার হয়ে যাওয়া রোধে সরকারকে এই খাত সংশ্লিষ্টদের ভর্তুকি দিলে ভালো হয়।
সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, করোনা সতর্কতায় পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজার-হাটে ক্রেতা উপস্থিতি ব্যাপকমাত্রায় কমেছে। চাল-ডালের মত পণ্যের দর ক্ষেত্র বিশেষে বাড়লেও ব্যাপকহারে কমেছে ব্রয়লার মুরগি, একদিন বয়সী বাচ্চা ও ডিমের দাম। পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের উৎপাদন প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম মাত্র ১ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩৫ টাকা। এছাড়া পোল্ট্রি প্রসেসড প্রোডাক্টস এর বিক্রি ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এই শিল্প।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক হিসাবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরপরও যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দাঁড়াবে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তাছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মার্কেট স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও অন্তত: এক মাস।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, শিল্পের স্বার্থে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। যা ছোট খামারীদের খুব সহায়তা করবে। কিন্তু গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা অধিকাংশ ক্ষুদ্র খামারগুলোকে এখনও সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এই প্রণোদনা কিভাবে খামারীরা পাবে তার কোন দিক নির্দেশনা আমরা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমাদের ছোট খামারীরা অনেক পরিশ্রমী। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই শিল্প আবার ঘুড়ে দাড়াবে। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মতে, বর্তমান দেশে ছোট বড় পোল্ট্রি খামার আছে প্রায় ৮৮ হাজার। যেখানে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে সোয়া দুই কোটি ডিম উৎপাদন হচ্ছে এবং মুরগির গোশত উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টন । যা দেশের নারী ও যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। বিশেষত বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন- মধ্যবিত্তদের আমিষের চাহিদার সিংহভাগই পূরন করছে পোল্ট্রির গোশত ও ডিম। বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহন করলে এর উৎপাদন আরও কয়েকগুন বাড়ানো সম্ভব। এবং এই শিল্পকে একটি রপ্তানিমুখী শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয় সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্রডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল ইনকিলাবকে বলেন, আগে প্রতিদিন দেশে প্রায় ২ কোটি বাচ্চা উৎপাদন হতো। এখন ১ কোটি টাকা বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা আমাদের বড় ধরণের ক্ষতিতে ফেলেছে। তারপরও ছোট-বড় খামারিদের যদি প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়া যায় তাহলে পোল্ট্রি শিল্প অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।