Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিছানার কাছেই লাশ ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা

ঢাকায় করোনা চিকিৎসার বিভীষিকাময় বর্ণনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

শাহাদাত হোসেন বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার। গত মাসের একদম শেষের দিকে একটু জ্বর উঠেছিল। খুব সামান্যই তাপমাত্রা ছিল। এরপর একটি প্যারাসিটামল খাওয়ার পর এক রাতেই জ্বর সেরে গিয়েছিল। এরপর তিনি পেশাগত দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু বাড়িতে তার শ্বশুর কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপক জ্বর ও মাথাব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার পর ভাবলেন নিজেও একটু পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। দেখা গেল তার কোন উপসর্গ না থাকলেও তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এরপর তার শ্বশুরসহ পুরো পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর তার মনে হয়েছে জীবনে এতটা অসহায় কোনদিন বোধ করেননি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পজিটিভ› জানার পর শুরুতে তিনি খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সহকর্মীদের সহায়তায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

তার ভাষায়, হাসপাতালে চরম প্রতিক‚লতার মধ্যে নয়দিন পার করেছি আমরা। ওখানে মনে হয়েছে রোগীরা একেবারে অভিভাবকহীন। আমি খুবই অসহায় বোধ করেছি। দেখতাম চোখের সামনে রোগীরা মারা যাচ্ছে। লাশ ওয়ার্ডেই পড়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেহেতু নির্দিষ্ট ব্যক্তি লাশ দাফন করেন হয়তো তাদের সংখ্যা কম কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সেকারণে হয়তোবা। কিন্তু এতে একজন অসুস্থ রোগী যে এমনিতেই ভয়ে আছে তার মনের অবস্থা কী হয়?

শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে তিনি খুবই অসহায় বোধ করেছেন। তিনি হাসপাতালে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিলেন, ২৪ ঘণ্টায় একজন চিকিৎসক আসতেন। অনেক দূর থেকে কথা বলে চলে যেতেন।

নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে একটি মানুষকেও পাওয়া যায় না। এরকমও হয়েছে যে নার্স আসেনি বলে একবার সকালের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া হয়নি। চিকিৎসক দিনে একবারও আসেনি সেটিও হয়েছে। তিনি বলছেন, কিন্তু একজন চিকিৎসকের কথায় আমার ভরসা পাওয়ার কথা। তার কথায় আমার মনোবল বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার কেউ ছিল না।

অন্যান্য সুবিধাদির বর্ণনা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি যে ওয়ার্ডে ছিলেন সেখানে একশো মতো রোগী ছিল। এতজন রোগীর জন্য মাত্র তিনটি টয়লেট, তিনটি গোসলখানা। শাহাদাত হোসেন এক পর্যায়ে রোগী বাড়তে শুরু করার পর চিকিৎসকদের অনুরোধ করে তার শ্বশুরসহ বাড়ি চলে আসেন।

দেশে সবচেয়ে প্রথম যে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সাংবাদিক শনাক্ত হয়েছিলেন সেটি ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের। সেখানে ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কর্মরত আশিকুর রহমান রাজু আক্রান্তদের একজন।
তিনি বলছেন, শনাক্ত হওয়ার পর যখন কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে যান শুরুতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কারণ সবাই পিপিই পরে অনেক দূরে দাড়িয়ে আছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মনোবল হারাতে শুরু করেন। তাকে একজন ওয়ার্ড বয় একটা পলিথিন ব্যাগে বিছানার চাদর, বালিশ, বালিশের কাভার, টয়লেট টিস্যু আর একটা সাবান দেয়। এগুলো দিয়ে ওয়ার্ড বয় কেচিগেট তালা মেরে চলে গেল। নিজের বিছানাও নিজে গুছিয়ে নিতে হল।

প্রথম দিন তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে কেউ আসেনি। চিকিৎসকদের ফোন করে তিনি সেটি জানানোর পর সাড়ে ৪টার দিকে তার জন্য একটি বক্সে করে খাবার এসেছিল। কোন প্লেট দেয়া হতো না। সেখানে পানি গরম করা থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজেকে করে নিতে হয়েছে। এমনকি জ্বর হলে যে মাথায় পানি দিতে হয়, সেসময়ও সহায়তা দেয়ার কেউ ছিল না। একটা বালতি, মগ কিছুই ছিল না, এসব অভিযোগ তিনি করেছেন।

আশিকুর রহমান বলছিলেন, জ্বর নিয়ে যে কয়দিন বাসায় ছিলেন তার মনোবল চাঙ্গা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই সেটি হারাতে শুরু করেন। জায়গাটা একটা ভূতের বাড়ির মতো। চারপাশে কেউ নাই। সেরে ওঠার পর যেদিন গ্রামের বাড়িতে গেছেন চেনা পরিচিত লোকেরাও তার খবর নেননি। আমি আসতেছি এটা দেখেই বাড়ির কাছে পুরো রাস্তা খালি হয়ে গেল। আমি যেন ভিনগ্রহের কেউ এরকম মনে হচ্ছিল। এ বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।



 

Show all comments
  • লায়লা বিলকিস চৌধূরী ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    এজন্যই তো রুগিরা পালিয়ে যায়,আমাদের দেশের ঔষধ এবং আবহাও দূইটাই ভাল,প্রথমিক অবস্তায় ভাল চিকিৎসা বা ভাল সেবা পেলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহফুজ আবু মুসা ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    এই হল আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা ইউরোপের চেয়ে বুঝি ভালো!
    Total Reply(0) Reply
  • Bulbul Khan ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    আমরা কি নাগরিক হিসাবে,জাতি হিসাবে, নৈতিক ????? এ জায়গায় কাল বা পরশুু আমাদেরকে হয়ত যেতে হবে। স্বাস্থ‍্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে কি এর কোন জবাব আছে ???? আমরা ভুলে গেলে চলবেনা যে, একদিন আমাদের এর জন‍্য জবাব দিতে হবে। ইতিহাসে যেমন সিরাজউদ্দোলার নাম লিখা আছে তেমনি মীর জাফর কেও আমরা ভুলি নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Bulbul Khan ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    আমরা কি নাগরিক হিসাবে,জাতি হিসাবে, নৈতিক ????? এ জায়গায় কাল বা পরশুু আমাদেরকে হয়ত যেতে হবে। স্বাস্থ‍্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে কি এর কোন জবাব আছে ???? আমরা ভুলে গেলে চলবেনা যে, একদিন আমাদের এর জন‍্য জবাব দিতে হবে। ইতিহাসে যেমন সিরাজউদ্দোলার নাম লিখা আছে তেমনি মীর জাফর কেও আমরা ভুলি নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mozammal Hoque ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    বাস্তবে দেশ যতটুকু সিঙ্গাপুর হচ্ছে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Zabed Uddin ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    এর জন্যই রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায় !!!
    Total Reply(0) Reply
  • Pervin Sultana ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    আমরা জানি মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। এভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে রোগী মারা যাচ্ছে। কুমিটোলা গেলে বলে কুয়েত মৈত্রী বলে টেষ্ট করে আসেন। অন্য হাসপাতালের ডাক্তার আসে না। সাধারণ লোক এভাবে বিনা চিকিৎসায় পথে মারা যাবে। কত হৃদয় বিদারক লেখা পড়ছি কিন্ত সবার আচারনে হতাশ
    Total Reply(0) Reply
  • আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    এতো কিছু ঘটার পরও কোন আক্ষেপ বা দুঃখ পাওয়ার কিছু নাই,, এটি একটি স্বাভাবিক প্রকৃয়া যেহেতু আপনারা কানাডায় বসবাস করেন
    Total Reply(0) Reply
  • Zamal U Ahmed ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    এ যাবৎ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু, ডাক্তার মঈনের মৃত্যুর ঘটনা, দৈনন্দিন প্রকাশিত সরকারী তথ্য অনুসারে চিকিৎসাধীন থাকা আইসিউউ বা ভেন্টিলেটরের রোগীরা সবাই মারা যাবার খবরে আমার দৃঢ বিশ্বাস যা হয়েছে, মরে গেলেও আল্লাহ যেন সরকার নিয়ন্ত্রিত কোন হাসপাতালে আমাকে না নেয়া হয়। আনুসংগিক অসংখ্য ঘটনা প্রবাহে সাধারণ মানুষের উচিৎ বাচতে হলে ঘরে টোটকা চিকিৎসায় বা অন্য কোন বেসরকারী বা স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা কেন্দ্রই হওয়া উচিৎ ভরসার স্থল। সরকার নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালগুলি মনে হয় যেন মজলুম জনতার মৃত্যু ফাঁদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Apon Raz Muhammad ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    সে একজন গণমাধ্যম ব্যক্তি হয়ে যে সেবা পেয়েছে। তাতে বুঝতে বাকি নাই সাধারণ মানুষ যে কি সেবা পাচ্ছে।তার পরো আমাদের আবাল মন্ত্রী গুলার চাপা কমবো না।লানোত আবাল দের উপরে
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Ashraf-Ul-Alam ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ৭:০৭ এএম says : 0
    এ এক চরম অভিজ্ঞতা।এ বিপদ থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mustafizur Rahman ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ৯:৩২ এএম says : 0
    এতোদিনে বুজতে পারলাম করোনা রোগিরা ঢাকা থেকে পালায় কেন? আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করণের কোন বিকল্প নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mustafizur Rahman ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ৯:৩৩ এএম says : 0
    এতোদিনে বুজতে পারলাম করোনা রোগিরা ঢাকা থেকে পালায় কেন? আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করণের কোন বিকল্প নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১০:০৮ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ। আমি বার বার বলে থাকি একমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা ইসলাম। আমি কোনো দিন হাসপাতালে যাইতে চাই না। মোসলমানরা আপনারা দোয়া দুরুদ শিক্ষা করুন আর পড়তে থাকুন আর সূস্থ থাকুন।পৃথিবীতে মোসলমানরা বড় অসহায়, ইসলাম না জানার কারণে। করোনাভাইরাস সক্রমণের আগেই মানুষ এত বিয়াক্কল যে চরকাত অবস্থায় আত্বীয়রা হাসপাতাল লইয়া যায়। লক্ষ, লক্ষ, টাকার বিল বানায়। এর পরে হাউমাউ কাঁন্দে। কি যে বেঈমানে পরিনত হইয়াছে। কয়েকদিন যাবত আমি অত্যন্ত আসূস্থ ছিলাম আমি লন্ডনে বাস করি কিন্ত ডাক্তারে যাই নি। ইনশাআল্লাহ। আজ শুক্রবার আমাদের প্রথম রুজা। সবাই দোয়া করিবেন। আল্লাহ তা'আলারদরবারে। ইনশায়াল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • সভায় ভাল থাক প্রধাণমণত্রীর জন্য দোয়া করি ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১০:২৮ এএম says : 0
    আললা বাংলাদেশ কে করনামুকত কর
    Total Reply(0) Reply
  • Selim ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৩৯ এএম says : 0
    আমরা জানি মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। এভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে রোগী মারা যাচ্ছে। কুমিটোলা গেলে বলে কুয়েত মৈত্রী বলে টেষ্ট করে আসেন। অন্য হাসপাতালের ডাক্তার আসে না। সাধারণ লোক এভাবে বিনা চিকিৎসায় পথে মারা যাবে। কত হৃদয় বিদারক লেখা পড়ছি কিন্ত সবার আচারনে হতাশ
    Total Reply(0) Reply
  • Habibullahislam Habib ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১১:০১ পিএম says : 0
    Digital Bangladesh and digital health service..
    Total Reply(0) Reply
  • Habibullahislam Habib ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১১:০১ পিএম says : 0
    Digital Bangladesh and digital health service..
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ