Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দিশেহারা হাওরের কৃষক

সিলেট বিভাগে ধান কাটা সম্পন্ন ৪২ ভাগ

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫১ পিএম

মাঠ ভরা পাকা ধান গ্রাসে আকাশে মেঘের তর্জন-গর্জন, বাতাসে করোনার রক্তচক্ষু, জমিনে শ্রমিক সঙ্কটে মহাবিপদে হাওরের কৃষক। নির্ঘুম দিবারাত্রী তাদের। সর্বনাশা, ভয়ঙ্কর অনিয়ন্ত্রিত বাস্তবতায় কূল-কিনারা দেখছেন না তারা। বজ্রপাতে কেড়ে নিয়েছে বিভাগের ৯ কৃষি শ্রমিকের প্রাণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৬ এপ্রিল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে সিলেটে। বৃষ্টি আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে, বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের পাহাড়ি এলাকায়ও। সেখানে বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে হাওরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বজ্রপাতের ভয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন্যার ভয়ও। কিন্তু দ্রæত ফসল কাটারও তো সুযোগ নেই হাওরে। হাওরে ধান কাটার অবর্ণনীয় শ্রমিক সঙ্কট, বৃষ্টি-বন্যা, বজ্রপাত, অপ্রতিরোধ্য করোনার মরণকামড়। তিনে মিলে চরম অনিশ্চয়তা এখন কৃষকের চোখেমুখে।
সিলেট বিভাগের হাওর-বাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জে উৎপাদিত ধান প্রকৃতির যেন এক অমূল্য দান। চিরায়িতভাবেই এখানকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য দেশের স্থায়ী অস্তিত্ব। কিন্তু সেই অস্তিত্ব এখন চরম বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির কবলে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আকাশে অবস্থা ভালো নেই, অবিরাম বৃষ্টি, আর শিলার দাপটে র্সবনাশ হয়ে যাবে সোনালী ধানের।
ভয়ানক এই পরিস্থিতিতে মোকাবেলার মাধ্যমে নিরাপদে ধান ঘরে তোলতে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারি সহযোগিতা। শ্রমিক সঙ্কট নিরসনে নেয়া হয়েছে নানামুখী কৃষকবান্ধব পদক্ষেপ। সরকারি তদারিক ও আহŸানে এখন কৃষকের ধান ঘরে তোলে দিতে মাঠে এসেছে স্বেচ্ছাশ্রমে বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সংগঠন। শঙ্কার সাথে অনেকটা স্বস্তিকর তথ্য দিয়েছেন কৃৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক নিবাস দেবনাথ। তিনি জানান, বিদ্যমান সীমাবদ্ধতার মধ্যে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ধান কাটা হয়েছে ২৯ শতাংশ। এরমধ্যে হাওর এলাকায় কাটা হয়েছে ৪২ শতাংশ। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় কিছুটা কম কাটা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে হ্ওারে ৪২ শতাংশ। এছাড়া এর মধ্যে সিলেট জেলা ৩৩ শতাংশ, হাওরে ৪৮ শতাংশ। হবিগঞ্জ জেলায় ১৯ শতাংশ, হাওরে ৩৩ শতাংশ। মৌলভীবাজার জেলায় ২৭ শতাংশ, হ্ওারে ৩৩ শতাংশ।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওর, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নান্দাইল হাওর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরসহ বিভাগের কয়েকটি হাওরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত ধান কাটায়। তাড়াতাড়ি ধান তুলতে পরিবারের নারী সদস্যরাও যোগ দিয়েছেন ধান কাটায়। হাওরে-হাওরে ভয় তাড়ানিয়া গান গেয়ে ধান কেটে চলছেন কৃষকরা। প্রশাসনের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও দ্রæত ধান কাটতে হাওর এলাকায় করা হচ্ছে মাইকিং। একইসাথে বিভাগীয় কমিশনার সরেজমিন তদারকি করছেন হাওরের ধান কাটার চিত্র। সেই সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে ধানকাটতে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন। বসে নেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ কৃষকলীগসহ স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো।
দেশের ধান উৎপাদনের অন্যতম ক্ষেত্র সুনামগঞ্জের কৃষকরা ধান তুলতে হাকাকারে পড়েছেন। তাদেরও ধান কাটতে সহযোগিতায় নেমেছে ছাত্র-শিক্ষক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রদল, সমবায় সংগঠন। এছাড়া সুনামগঞ্জের কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে আনসার ও ভিডিপি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, এতে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে পাহাড়ি ঢল নেমে সিলেট বিভাগের নিচু এলাকায় আগাম বন্যা দেখা দিতে পারে। ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা ও মনু নদী উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করতে পারে বলে জানান তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ