পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনাভাইরাসের চলমান সংকট কেটে গেলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ে উল্লম্ফন হতে পারে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৭ম বার্ষিকী-কোভিড-১৯ : সংকটের মুখে শ্রমিক ও মালিক-সরকারি উদ্যোগ ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় সিপিডির পক্ষে এ অভিমত তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০০৮-০৯ সালে যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল তারপর আমরা দ্রুত ফিরে আসতে পেরেছিলাম। ২০১০ সালের জানুয়ারির পর দ্রুততার সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তৈরি পোশাক খাত-বহির্ভূত অন্যান্য খাতেরও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে পরবর্তী মাসগুলোতে। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি, এই চ্যালেঞ্জ চলে গেলে বৈশ্বিক ও স্থানীয় বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করা গেলে এই খাতের একটা উল্লম্ফন দেখা যাবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক ঝুঁকি চলে গেলে অল্প মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য কেনার চাহিদা বাড়বে। যেহেতু অনেকের আয় কমে যাবে, ফলে নিম্নমূল্যের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হবে। যেগুলোর জন্য আমাদের দেশের চাহিদা তৈরি হবে। ফলে এটি আমাদের দেশের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।
‘করোনার কারণে ইউরোপের ব্যবসা চীন থেকে সরে বাংলাদেশ আসতে পারে কি-না’-এ ধরনের এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা পরবর্তীতে বিশ্ব বাজারে কী পরিবর্তন হয়, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্টের সঙ্গে চীনের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশ করোনার জন্য চীনকে দায়ী করছে। কিন্তু ব্যবসার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম। অনুযোগ, অভিযোগের কারণে ব্যবসার সম্পর্কে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। যেখানে বেশি লাভ হবে, ব্যবসায়ীরা সেখানে যাবে। সুতরাং চীন থেকে সরে ব্যবসায়ীরা অন্য কোথাও যাবে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা যদি পলিসিগুলো ঠিকমতো নিই, আমাদের উদ্যোক্তা, শ্রমিকরা যদি টিকে থাকেন, তাহলে করোনা পরবর্তীতে আমাদের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুতরাং সাময়িক বিপর্যয় কীভাবে কাটানো যায়, সবাই মিলে সেই চিন্তা করতে হবে। যদি আমরা এটা ঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে করোনা-পরবর্তীতে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, রানা প্লাজা ধ্বসের পর দেখা দেয়া সংকট কাটিয়ে দেশের গার্মেন্টস খাত যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, সেই সময় করোনাভাইরাসের কারণে এই খাতের মালিক ও শ্রমিকদের অবস্থা নতুন মোড় নিয়েছে। এর ফলে এই শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ও গোটা অর্থনীতি সংকটের মুখে পড়েছে। আমরা জানি এখানে যে সমস্যা হচ্ছে, সমস্যগুলো সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে, মালিকদের পক্ষ থেকে এবং শ্রমিকরাও তাদের দাবি দাওয়া উত্থাপন করছেন। ফাহমিদা বলেন, গার্মেন্টস খাত রপ্তানিতে প্রায় ৮০ শতাংশ অবদান রাখে। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৩-১৪ শতাংশ অবদান এই খাতের। এই শিল্পে চার লাখের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। তারা আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখেন।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, গার্মেন্টসের ১৫ শতাংশ শ্রমিক এখনো মার্চ মাসের বেতন পায়নি। এই দুর্যোগের সময় এখনো পর্যন্ত শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন দেয়নি, এরা কোন ধরনের মালিক? তিনি বলেন, যে সমস্ত কারখানা বেতন-ভাতা দিয়েছেন, তার মধ্যে বেশকিছু চার-পাঁচ দিনের টাকা কেটে রেখেছেন। সেইসব মালিকদের চিহ্নিত করা দরকার এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি’র সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রণোদনা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এক হাজার কোটি টাকা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তা না হলে করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা প্রণোদনা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হবেন। তিনি বলেন, যে টাকা ১ থেকে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করে শুধু এমন প্রতিষ্ঠান পাবে। হেলাল উদ্দিন বলেন, ১ থেকে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করে-এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। আর তাদের শ্রমিকের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখের মতো। জিডিপিতে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবদান ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে আমরা পহেলা বৈশাখ হারিয়েছি। আগামীতে রমজান আমাদের হারিয়ে যাবে-এটা আমরা বুঝতে পারছি। তিনি বলেন, দুই ধাপে প্রধানমন্ত্রী ১ লাখ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য। দুঃখের বিষয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা নিতে পারবে না। কারণ বলা হচ্ছে, ব্যাংক ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এই ঋণ নিতে পারবে। কিন্তু ১ কোটি ২০ লাখ শ্রমিকের এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে নেই। সুতরাং এই ঋণ তারা পাবেন না। হেলাল বলেন, এজন্য প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যেখান থেকে ১ থেকে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করেন শুধু এমন প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে পারবে। তা নাহলে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হবেন। ব্যাংক তাদের ঋণ দেবে না। জামানত ছাড়া ব্যাংক ঋণ দিতে চাইবে না। এজন্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে হবে। ব্যাংক হিসাব খুলে চেক বই দেয়া হবে। তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, একজন ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেবে। এর বিপরীতে ৫৫ হাজার টাকার চেক লিখে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এটাই হবে জামানত। যেহেতু অগ্রিম চেক থাকবে। সুতরাং ব্যাংক যেকোনো সময় এই টাকা আদায় করতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।