Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কারখানা লে-অফে প্রণোদনা নয়, চাপে শিল্প মালিকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২০, ১১:০১ এএম

দেশে প্রথম কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।

যদিও তার আগে থেকেই দেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুসরণ করে কারখানা লে-অফের পরিকল্পনা করছিলেন শিল্প মালিকরা।গত ২৬ মার্চের পর কম-বেশি লে-অফ নোটিসও দিতে শুরু করেন তারা।কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া এক সার্কুলারে লে-অফ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিল্প মালিকরা।

১৯ এপ্রিল জারি হওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো কারখানা লে-অফ করা হলে কভিড-১৯ মোকাবেলায় ঘোষিত সরকারি প্রণোদনা পাবে না সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ঘোষণায় বেশির ভাগ কারখানাই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৫ মার্চ রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।তার ঘোষণার পাশাপাশি সরকারের এ-সংক্রান্ত সার্কুলারে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়।

প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর একে একে অনেক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করেন মালিকরা। এ তালিকায় ছোট প্রতিষ্ঠান যেমন আছে, তেমনি অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছিল।বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করে শিল্প-কারখানায় ব্যবহূত কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশ চীন থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে রফতানিমুখী শিল্পে তৈরি পণ্যের ক্রেতা দেশগুলোও তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। একে একে ক্রয়াদেশ হারাতে থাকে দেশের তৈরি পোশাক খাত। এমন পরিস্থিতিতে শিল্প মালিকরা কারখানা সচল রাখা নিয়ে দোদুল্যমান ছিলেন।

গত ২৩ মার্চ রফতানিমুখী শিল্পের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। যেখানে বলা হয়, কোনো শিল্প মালিক কারখানা বন্ধ করতে চাইলে শ্রম আইনের ধারা ১২ ও ১৬ অনুসরণ করে কারখানা বন্ধ করতে পারবেন। একইভাবে পোশাক খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএও কারখানা বন্ধের বিষয়ে সদস্যদের সবুজ সংকতে দেয়। এর পর থেকেই শিল্প মালিকরা সাধারণ ছুটির মধ্যে লে-অফের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেন। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, শুধু পোশাক শিল্পের ৬০-৭০ শতাংশ কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে কারখানা বন্ধ করা হলেও বকেয়া বেতন পরিশোধে বিলম্বের কারণে একের পর এক শ্রম অসন্তোষ দেখা দিতে শুরু করে শিল্প অঞ্চলগুলোয়। লকডাউনের মধ্যেই সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা। একইভাবে বিক্ষোভ হয় ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামেও। এর পরই ১৯ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, লে-অফ করা কারখানা প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তা পাবে না।

এ সার্কুলার জারির পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন রফতানিমুখী শিল্পের মালিকরা। গতকাল সোমবার দিনভর সরকারের বিভিন্ন মহলে সার্কুলারটি পরিবর্তন করতে তত্পরতা শুরু হয় মালিকপক্ষের। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পূর্বঘোষিত সভায়ও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন শিল্প মালিকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর এক নেতা বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ মহামারীর প্রেক্ষাপটে দেশে প্রচলিত আইন অনুসরণ করে লে-অফ করেছেন অনেক শিল্প মালিক। এখন সে আইন অনুসরণ করা হয়েছে বলেই বিপাকে পড়তে শিল্প মালিকদের। তাই এটি পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ ঋণ নিয়ে শ্রমিকের বেতন পরিশোধ যেহেতু করতে হবে, সেক্ষেত্রে ঋণের বোঝা কমানোর দায়ও শিল্প মালিকদের ওপরই বর্তাচ্ছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সার্কুলারটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিল্প মালিক লে-অফের নোটিস প্রত্যাহার করার আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মালিকরা বিপদেই পড়েছেন কারখানা লে-অফ করে।

এদিকে শ্রমিক প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আইনে বলা থাকলেও শিল্প মালিকরা লে-অফ ঘোষণা করছিলেন মূলত শ্রমিকদের বঞ্চিত করার কৌশল হিসেবে। ১৬ ধারা অনুসরণ করে শ্রমিকদের মূল মজুরির ৫০ শতাংশ এবং বাড়ি ভাড়া ও ভাতা পরিশোধ করে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করার সুযোগ আছে। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও শিল্প-কারখানার মালিকরা লে-অফের নামে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় বিপুল পরিমাণ শিল্প-কারখানা এরই মধ্যে লে-অফ ঘোষণা করেছে। ফলে করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রমিকরা পথে নেমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত সার্কুলারটি শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাবেক মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন বলছেন, শ্রম আইনের ধারা ১২-এর ৮ উপধারায় পরিষ্কার বলা আছে, কোনো কারখানা যদি ১২ ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং বন্ধের মেয়াদ যদি তিন কর্মদিবসের অধিক হয়, তবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের ধারা ১৬ অনুযায়ী লে-অফ করা হবে। কিন্তু ধারা ১২ ও ১৬-কে একসঙ্গে ব্যবহার করে লে-অফকে জায়েজ করার কোনো সুযোগ শ্রম আইনে আছে বলে আমার জানা নেই।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারে লে-অফের বিষয়টি ছাড়াও আরো কিছু বিষয়ের উল্লেখ আছে। সার্কুলারে বলা হয়, যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের বেশি সরাসরি পণ্য রফতানি করে, সেগুলোর এলসি বা ঋণপত্র পরীক্ষা সাপেক্ষে কেবল শ্রমিক বা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ দেয়া যাবে। ডিমড বা প্রচ্ছন্ন রফতারিকারকরা এসএমইর জন্য গঠিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন, যা দিয়ে শ্রমিক বা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।



 

Show all comments
  • Emran nazir ২১ এপ্রিল, ২০২০, ১২:২০ পিএম says : 0
    এসম্ত কারখানাকে এমন শাস্তি প্রদান করা হোক যাতে তাদের শাস্তি দেখে অন্যরা শতর্ক হয়।লে অফ মানে কি তারা যদি জানতো কখনো লে অফ ঘোষণা করতো না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Maksud ২১ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৪০ পিএম says : 0
    কর্মচারি বলতে কোন পদ থেকে কোন পদ পরযন্ত, হ্যামস গারমেন্টেস লে অফ এর আওতায় আছে?আল্লাহর নাম নিয়ে যানাএন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ