পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল, নতুন শনাক্ত ৪৯২ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন না করলে আগামীতে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে : প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিন যত যাচ্ছে ততই দীর্ঘ হচ্ছে করোনা আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৯২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০১ জনে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে দুই হাজার ৯৪৮। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ১০ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৮৫ জন।
বিশেজ্ঞদের মতে, অস্বাভাবিক হারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই হারে পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হচ্ছে না। এমনকি যে ১৯টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে, সেই ল্যাবগুলোর সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে পরীক্ষা এবং নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতিতে দূবলতা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, যত দ্রæত সম্ভব পরীক্ষা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সনাক্ত রোগীদের কন্ট্রাক ট্রেসিং (আন্ত সংযোগ চিহ্নিত করা) করে তাদের সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। আরটি পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার পাশপাশি এখন র্যাপিড টেস্ট এর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান নমুনা সংগ্রহে দক্ষ, প্রশিক্ষিত মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া লকডাউন শতভাগ কার্যকর করতে হবে। তা না হলে, এভাবে ঢিলেঢালা লাকডাইন করে এবং অল্প বিস্তর পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ পাওয়া সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে যত রোগী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এরমধ্যে ঢাকা সিটি ও ঢাকা বিভাগেই ৮৭ শতাংশ। আর সারাদেশে ১৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে হয়তো নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা ঢাকার মধ্যে বেশি হয়েছে। তাই রোগী বেশি বেড়েছে। তিনি বলেন রোগী সনাক্ত ও রোগ পরীক্ষায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে না। তাতে আগামীতে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে।
কবে নাগাদ করোনার প্রাদুর্ভাব কমবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত যদি কোথা থেকে কতজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কতজন আক্রান্ত হয়েছেন বিষয়টি আলাদা করা হতো তাহলে অনেক কিছু বলা যেত। আর সেটা না করায় করোনার সার্বিক চিত্র বোঝা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা ছিলেন তাদেরকে চিহ্নিত করে নমুনা পরীক্ষা ও পরবর্তীতে পৃথকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ৮০ জনের কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। মোট জনসংখ্যার অনুপাতে যা একেবারেই কম। বেশি শনাক্ত হয়েছে বিশ্বের এমন দেশগুলোতে পরীক্ষার হার প্রতি ১০ লাখে ১০ হাজারের ওপর। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংস্থাটি প্রকাশিত সর্বশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে বলেছে, এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রæত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে এই ভাইরাসের দ্রæত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করতে দেশগুলোকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গতকাল সোমবার পযন্ত দেশে মোট রোগী সনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৪৮ জন। প্রথম রোগী সনাক্তের পর এ পর্যন্ত এই সংক্রমনে মৃত্যু হয়েছে ১০১ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ৮৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
গত ২৮ ফেব্রæয়ারি থেকে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। শুরুতে বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে না এলে পরীক্ষা করা হয়নি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। ৩০ মার্চ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের আওতা বাড়ানো শুরু হয়। বর্তমানে রাজধানীতে ১০টি ল্যাবে এবং অন্যান্য বিভাগের ৯টিসহ মোট ১৯টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। এসব ল্যাবে প্রায় ৩০টির মতো পিসিআর মেশিন রয়েছে। এই মেশিনগুলো দিনে দুই শিফট ব্যবহার করলে দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু পরিকল্পনা, নমুনা সংগ্রহ এবং ল্যাব বিশেষজ্ঞের ঘটিতের কারণে সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। সারা দেশ লকডাউন করা হলেও সেটা কার্যকর হচ্ছে না। যদি কঠোর ভাবে লকডাউন কাযকর করা সম্ভব হয় তাহলে অন্য ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে লকডাউন খুলে দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ রাখতে হবে, খোলা- মেলা স্থানে বাজার বসাতে হবে। এটা শতভাগ মানতে হবে। এক্ষেত্রে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত¡বিদদের পরামর্শ নেয়া যেত পারে।
পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ৮০ জনের করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মালদ্বীপে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে ৫ হাজার ৩৬৩ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭ মার্চ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগী ২১ জন। ভুটানে প্রতি ১০ লাখে ১ হাজার ৫১১, পাকিস্তানে ৩৩২, শ্রীলঙ্কায় ২২৩, নেপালে ২১৬ এবং ভারতে ১৭৭ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভারতে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সাইফ উল্লাহ মুন্সি ইনকিলাবকে বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া কোন উপায় নেই। এভাবে পরীক্ষা করালে হবে না। রেপিড টেস্টে যেতে হবে। এর মাধ্যমে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন দ্রæত তাদের শনাক্ত করা যাবে। শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে আস্তে আস্তে করোনার প্রভাব কমবে। দ্রæত শনাক্ত করা না গেলে এটা মানুষের মধ্যে আরো ছড়িয়ে পড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। তার মানে দিন যতো যাচ্ছে করোনার ভয়াবহতা ততোই বাড়ছে। কেন বাড়ছে করেনোর সংক্রমণ? বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের কমপক্ষে ৫২টি জেলা এখনও লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লকডাউন কোথাও সঠিকভাবে কার্যকর করা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিন-রাত কাজ করলেও বাজারগুলোতে তা মোটেও কার্যকর করা যাচ্ছে না। রাজধানীর পাইকারী বাজারগুলোতে ভোর থেকে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। এ ছাড়াও মানুষকে কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না। বিনা কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে অলিগলিতে আড্ডা দিচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশের চিত্র একই। তবে গ্রামাঞ্চলে আগের মতো আড্ডা নেই বলে জানা গেছে।
করোনার সংক্রমণের পেছনে বড় কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণ। ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেও কথায় কথায় তারা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালে বুলেটিনে বলা হয়েছে, নতুন আক্রান্ত ৪৯২ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী গাজীপুরের। গাজীপুরে এই সংক্রমণের নেপথ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার দুটি কারণ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আশানুরূপ লকডউন কাজ হচ্ছে না, লকডাউন না মানায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বাড়ছে। আর আক্রান্ত এলাকা থেকে লোকজন ভালো এলাকায় যাচ্ছে, এতে নতুন করে অন্য এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।