Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

করোনার প্রভাবে মার্চে রপ্তানি আয় কমেছে ১৮ শতাংশ

তৈরি পোশাক পণ্যের আয় কমেছে ২০ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ^ব্যাপী সব ধরনের বাণিজ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। এতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। করোনার কারণে এ খাতটির রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে মোট রপ্তানি আয়ে। মার্চে ২৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ওই মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ শতাংশ কম। আর ২০১৯ সালের মার্চের চেয়ে গত মাসে রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

ইপিবির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। এর আগে গত অক্টোবরে সর্বোচ্চ রপ্তানি কমেছিল ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় কমছিল, যা করোনা সংকটে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। শুধু চলতি মাসেই ৩০০ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত হয়ে গেছে।
ইপিবির রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, টেরিটাওয়েল, হোম টেক্সটাইলসহ অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমেছে। আর পাট ও পাটজাত পণ্য, আসবাব, হস্তশিল্প, বাইসাইকেলের রপ্তানি বেড়েছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২২৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ২৮২ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় মার্চে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ২০ শতাংশ।
এপ্রিলে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আরও কমবে বলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সব দেশই লকডাউনে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য বিক্রি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত করছেন। বিজিএমইএ জানিয়েছে, করোনার কারণে ইতিমধ্যেই ১ হাজার ১৪০ কারখানার ৩১৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এতে পোশাক রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে রপ্তানি হয়েছিল ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক।
জানতে চাইলে নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনার প্রভাব আসলে পড়বে এপ্রিল ও পরবর্তী মাসগুলোতে। তিনি দাবি করেন, মার্চে যে পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার বিপরীতে টাকা পাওয়া যায়নি। তাই অনেকে শ্রমিকের মজুরি দিতে সমস্যায় পড়েছেন।
ইপিবির দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে হোম টেক্সটাইল পণ্যে রপ্তানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ সময় ৪০ কোটি ২৬ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ কম। চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ সময় পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্য প্রায় ৯০ শতাংশ রপ্তানি আয় হারিয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এ সময় ৭২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ৬৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছর ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। আগামী কয়েক মাসে রপ্তানি কমে যাওয়ার ধারা আরও গভীর হবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি পূরণে সরকার দ্রæতই এগিয়ে এসেছে। তার বিপরীতে কারখানা বন্ধ, লে-অফ এখনও প্রাসঙ্গিক না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ