পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন ওয়ারির একজন বয়স্ক ব্যক্তি। ওইদিনই তার পরীক্ষার নমুনা নেয়া হয় কিন্তু পরীক্ষার নমুনার ফল আসে ১৭ এপ্রিল বিকাল ৩ টায়।আইইডিসিআর থেকে টেলিফোনে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির পরিবারকে করোনায় পজিটিভের তথ্য জানানো হয়। নমুনা পরীক্ষার ফল আসতেই ৫ দিন লেগেছে। ১৭ এপ্রিল ওই মৃত ব্যক্তির বাড়িটি লকডাউন করা হয়। কিন্তু এখনো তার পরিবারের কারো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। এমনকি ওই বয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে যারা গোসল করিয়েছেন, জানাযায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদেরও চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা হয়নি।
রাজধানীর বাড্ডায় গত ১৫ এপ্রিল মারা গেছেন একজন বয়স্ক ব্যক্তি। মৃত ব্যক্তির করোনা নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার ফল পরিবারটি জানতে পেরেছে ১৮ এপ্রিল। পরিবার সূত্রে জানা গেছে এখনো ওই মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শ থাকাদের কারোরই করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। পরিবারের লোকজন পরীক্ষা করাতে চাইলেও কোনভাবেই পারছেন না।
শুধুমাত্র দুটি পরিবারের ক্ষেত্রে নয় অসংখ্য পরিবারের ক্ষেত্রেই ঘটছে এটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমিত এলাকার সবাইকে করোনা পরীক্ষা করানো জরুরি। একই সঙ্গে কোন এলাকা থেকে যদি ১০ টি ফোন কল আসে তাহলে ওই এলাকার সবাইকে পরীক্ষা করানো দরকার। এর মাধ্যমে যারা আক্রান্ত তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। আর যারা আক্রান্ত নয় তাদের পৃথক করে সেল্ফ কোয়ারান্টিনে রাখা দরকার। এটা করতে না পারলে দেশে করোনা আরো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্দেহভাজনরা পরীক্ষা করাতে পারছেন না আবার অনেকে লক্ষণ আড়াল করছেন । এ কারণে সন্দেহভাজন অনেকে রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে লক্ষণ থাকা রোগীরা বিষয়টি আড়াল করছেন। আর তাই অধিক পরিমাণে চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্ত হচ্ছেন।
মহামারী করোনায় বিশ্ব টালমাটাল। করোনার চিকিৎসায় বিশ্বের এ পর্যন্ত সফল দেশগুলো অধিক পরীক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকও বারবার পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও শুরু থেকে পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলছেন। প্রথম দিকে একক কর্তৃত্ব দেখিয়ে আইইডিসিআর পরীক্ষা সীমিত করে রাখলেও আস্তে আস্তে করোনা পরীক্ষা কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দেশে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা।এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আর আক্রান্ত আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এ পর্যন্ত ২১৪৪ জনে। বর্তমানে ১৯ টি ল্যাবরেটরীতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণাও করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ২৯টি জেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করেছে সরকার। দেশে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর ৩৮ শতাংশের বেশি (৭০৪ জন) এসব এলাকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব এলাকা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তূলনামূলকভাবে সহজে শনাক্ত (কন্টাক্ট ট্রেসিং) করা সম্ভব। তাঁদের পরীক্ষার আওতায় আনা গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে। এ ছাড়া এসব এলাকায় কারও মধ্যে লক্ষণ–উপসর্গ দেখা দিলে তাদেরও পরীক্ষার আওতায় আনার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এসব এলাকায় রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিসর সেভাবে বাড়ছে না।
পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যেও এসেছে। গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে তিনি বলেন, রোগীরা পরীক্ষা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না এবং গোপন করে যান। একই সঙ্গে তিনি পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দেন।করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার সংস্থাটি প্রকাশিত সবশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে বলেছে, এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। দেশগুলোকে পরীক্ষা ও শনাক্তের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ সঙ্গে আক্রান্ত দেশগুলোকে পরীক্ষা ও শনাক্তের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এখন পর্যন্ত ১০০ চিকিৎসক ৫৭ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন।
কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নমুনা আরও বেশি করে পাঠাতে বলা হয়েছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও কোয়ারেন্টিন করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন করোনা টেস্ট কিট আমদানিকারক ইনকিলাবকে বলেন, যেকোনো সময় কীট আামদানি করা সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বললে মাত্র ছয় দিনের মধ্যে যত সংখ্যক দরকার কীট আনা যাবে। পরীক্ষা আরও বাড়ানোর বিষয়ে এবং দেশে করোনা টেস্ট কিটের সংকট আছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিম সুলতানা ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই ল্যাবরেটরীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই টেস্টও বাড়ছে। একই সঙ্গে করোনা টেস্ট কীটের সংকট নেই। প্রত্যেকটা ল্যাবে যথেষ্ট কীট রয়েছে পাশাপাশি মজুদও রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিছু বেড়েছে। তবে আরো বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, পরীক্ষা না করালে সঠিক চিত্রটা উঠে আসবে না। সংক্রমণের সঠিক সোর্সও চিহ্নিত হবে না। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করা এবং পরীক্ষা বাড়াতে না বাড়ালে দেশব্যাপি করোনা আরও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান বলেন, বিশ্বের অবস্থা ভালো নয়। এখনো যদি সঠিক ব্যবস্থা নিতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আইইডিসিআর দায়সারাভাবে কাজ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বললেও কর্ণপাত করেনি তারা। এ পর্যন্ত মাত্র ২১ হাজার ১৯১ জন রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান বলেন, করোনার চেয়ে বড় সঙ্কট আর হতে পারে না। করোনা মোকাবেলায় আমাদেরকে সমস্ত সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে হুমকি-ধামকি দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন করলে হবে না। কারণ আমাদের দেশে এটা কেউ মানবে না। এ জন্য অবশ্যই আমাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাড়াতে হবে। জনবল বাড়িয়ে আরও পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।